Sat. Apr 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪,রবিবার,১৭অক্টোবর ২০২১: নুসরাতের মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।তদন্তে যতই গভীরে যাওয়া হচ্ছে ততই মামলার অসংলগ্নতা, অনুমান ও কল্পনা নির্ভরতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, মামলাটি তথ্য-উপাত্ত ও আলামত-সাক্ষীর ভিত্তিতে নয়, বরং আক্রোশ, কল্পনা ও অনুমানের উপর নির্ভর করেই করা হয়েছে। শেষ পর্যায়ে তদন্তে প্রচুর অসংলগ্নতা পাওয়া যাচ্ছে এবং এই অসংলগ্নতাই এই মামলাকে অসার, ভিত্তিহীন ও প্রতিহিংসামূলক হিসেবে প্রতিপন্ন করছে বলে জানা গেছে। মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে নুসরাত আট নাম্বার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যে মামলাটি করেছে সেই মামলার মধ্যে একের পর এক অসংলগ্নতা পাওয়া যাচ্ছে।

প্রথম অসংলগ্নতা হলো, নুসরাত দাবি করেছে তার বোন ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে কিন্তু মুনিয়া ও নুসরাতের কথোপকথনের যে অডিও পুলিশের হাতে গেছে তদন্তে সে অডিওতে কোথাও মুনিয়া বলে নি যে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। তাহলে মুনিয়া যে ধর্ষিত হয়েছেন মামলার বাদী এমন তথ্য কোথায় পেলেন?

দ্বিতীয়ত, এই মামলায় একাধিক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় এই অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে এই মামলায় অন্তত ছয়জন আসামী আছেন যাদের সাথে মুনিয়ার কখনো দেখা সাক্ষাৎ হয় নি। বিশেষ করে, মামলায় যেসব নারীদের আসামী করা হয়েছে তারা কিভাবে ধর্ষণের সাথে যুক্ত থাকবেন সেই প্রশ্নেরও কোনো উত্তর নেই।

তৃতীয়ত, নুসরাতের সাথে মুনিয়ার মৃত্যুর দিন দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে, এই কথোপকথনের মধ্যে কোথাও মুনিয়া তাকে হত্যা করা হতে পারে বা তাকে

কেউ খুন করবে এ ধরনের আশঙ্কার কথা বলা হয় নি। তাহলে এসময়ের মধ্যে মুনিয়াকে কারা হত্যা করলো?

চতুর্থত, এই মামলার সবচেয়ে দুর্বল দিক হিসেবে মনে করা হচ্ছে, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের অভাব।মুনিয়াকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য লাগবে। প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ছাড়া একটি হত্যা মামলা আইনের দৃষ্টিতে অচল।

পঞ্চমত, মুনিয়াকে হত্যা করার জন্য যদি কেউ তার বাসায় এসে থাকে তবে সেখানে চিৎকার চেঁচামেচি হবে, সেখানে ধ্বস্তাধস্তি হবে, সেখানে পাশের ফ্ল্যাটের যারা আছেন তারা বিষয়টি জানবেন। পাশাপাশি মুনিয়াও নুসরাতের সাথে বারবার কথোপকথন করছিলেন। সেক্ষেত্রে নুসরাতকে কেন মুনিয়া টেলিফোন করলেন না সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

অসংলগ্নতা ছাড়াও এই মামলায় অনেকগুলো কল্পনাপ্রসূত অনুমান নির্ভর ব্যাপার রয়েছে।বিশেষ করে পুলিশের পক্ষ থেকে এর আগে তদন্তে দেখা গেছে যে পুরো মামলাটি একটি অনুমান নির্ভর ও কল্পনাপ্রসূত। যে কল্পনা ও অনুমানের মূল লক্ষ্য হলো কিছু ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করা। ব্ল্যাকমেইল করে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলই এই মামলার মূল উদ্দেশ্য কিনা সেটিই এখন খতিয়ে দেখা দরকার বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন। কারণ একটি মামলার ক্ষেত্রে তিনটি মূল উপজীব্য বিষয় রয়েছে। প্রথম হলো সাক্ষ্য-প্রমাণ। দ্বিতীয় হলো আলামত। তৃতীয় হলো পারিপার্শ্বিকতা। এই তিনটি ক্ষেত্রেই এই মামলায় কোনো যুক্তি নেই। শুধু অনুমান ও কল্পনা নির্ভরতা রয়েছে। নুসরাতের দায়ের করা মামলায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী নেই, এমনকি পরোক্ষ কোনো সাক্ষীও নেই। এমন কোনো আলামতও নেই যাতে প্রমাণিত হয় মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বা ধর্ষণ করা হয়েছে। এই মামলায় আসামীদের যে পারস্পরিক যোগসাজশ দেখানো হয়েছে তা কল্পনা প্রসূত। এধরনের অনুমান নির্ভর ও কল্পনা প্রসূত মামলা যদি চলতে থাকে তবে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হতে পারে। এধরনের মামলা যেকোনো ব্যক্তিকে অপদস্থ করা ও সম্মানহানি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।