খোলাবাজার২৪, বুধবার,২৪নভেম্বর ২০২১ঃ খেলাফত খসরু, পিরোজপুরঃ পিরোজপুরের নাজিরপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও কর্মচারীরা মিলে অসহায় এক ব্যক্তির ছাগল চুরি করে ভুড়ি ভোজ করছেন। এ ঘটনায় ঐ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃস্টি হয়েছে। ভুক্তিভোগী আ: লায়েক ফরাজী চুরি করা ছাগল দিয়ে ভুড়ি ভোজ এর অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা সহ বিভিন্ন দপ্তরে মঙ্গলবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আর ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী লায়েক ফরাজী উপজেলা সদরের আওয়ামীলীগ অফিস সংলগ্ন একটি ছোট চায়ের দোকানে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি আর্থিক সংকটে কয়েকটি ছাগল পালন করছেন।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে ভুক্তভোগীর একটি ছাগল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে চুরি হয়ে যায়। পরে ওই ছাগলের চামড়া স্থানীয় ঋষি ( চামড়া ক্রেতা) বিশ্ব নাথ এর কাছ থেকে গত সোমবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে উদ্ধার করা হয়। চামড়া ক্রেতা জানান, ‘ওই চামড়াটি হাসপাতালের সুইপার বাশার শেখ আমাকে দিয়েছেন’। বাশার শেখ জানান, চামড়াটি হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ভুড়ি ভোজের জন্য জবাই দেয়া ছাগলের চামড়া। স্যারেরা ছাগলটি গত শুক্রবার রাতে খেয়েছেন। আমি এ বিষয়ে বাজলে (অভিযুক্ত হলে) সব তথ্য ফাঁস করে দিবো। ওই ছাগলটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রান্না ঘরেই রান্না হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালে রান্নার কাজে থাকা খাদিজা বেগম। আর ওই রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিস কক্ষেই ওই ভুড়ি ভোজের আয়োজন করা হয় বলে জানান ভুড়ি ভোজে অংশ নেয়ারা।
ভুড়ি ভোজে অংশ নেয়া নিজেদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক চিকিৎসক এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. ফজলে বারী’র দাওয়াতে সেখানে গিয়েছেন। সেখানে খাওয়া মাংসের ছাগল চুরি করা বা ক্রয় করা কিনা তা তাদের জানা নেই। সেখানে ভোজে অংশ নেয়া এক নারী চিকিৎসক জানান, ‘ রাতে স্যার ফোন দিয়ে আমাকে সেখানে নিয়েছেন’।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রত্যক্ষদর্শী মো. সজল হোসেন হাওলাদার জানান, গত শুক্রবার দুপুরে আমার স্ত্রীর সন্তান প্রসব উপলক্ষে হাসপাতালের দোতালায় কেবিনের পাশের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলাম। এ সময় হাসপাতালের ঝাড়–দার মো. আবুল বাশার সহ ৩ জনে একটি খাসি ছাগল আটকে দোতালায় নিয়ে হাসপাতালের কেবিনের একটি টয়লেটে রাখে ও জবাই দেয়। আমি তাদের নিষেধ করলেও তারা একটি বটি দিয়ে তা জবাই করে বাজারের শপিং ব্যাগে নিয়ে যায়’।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান জানান, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. আব্দুল লায়েক ফরাজীর একটি অভিযোগ পেয়েছি। তিনি তা উপজেলা চেয়ারম্যানকেও দিয়েছেন’। থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. আশ্রাফুজ্জামান জানান, ‘ছাগল চুরির একটি অভিযোগ জমা হয়েছে বলে শুনেছি। আমি থানায় ছিলামা না তাই ওই বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয় নি’।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচ এন্ড এফপিও) ডাক্তার মো. ফজলে বারীর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমি সোমবার (২২ নভেম্বর) আমার শ্বশুড়ের চিচিৎসার জন্য ঢাকায় আসছি। এখন ব্যাস্ত আছি, বাসায় ফিরে আপনাকে ফোন দিবো’।
স্থানীয়রা জানান, গত ৬ মাসে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০ টি খাসি ছাগল চুরি হয়ে গেছে।