Wed. Oct 22nd, 2025
Advertisements

স্টাফ রিপোর্টার, মোঃ মাহাবুব আলমঃ বাংলাদেশের বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে শ্রম আইন ও আদালতের রায় অমান্য করে বেআইনি লকআউট ঘোষণা এবং ১৫৯ জন স্থায়ী কর্মচারীকে ছাঁটাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। আজ শ্রম অধিদপ্তর (DOL) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী কর্মচারীরা এই অভিযোগ উত্থাপন করেন।

ঘটনার পটভূমি ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় দেশের অন্যান্য খাতের মতো টেলিকম খাতও কার্যক্রম চালু রাখে। সেই সময়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রামীণফোনের ১৮০ জন অভিজ্ঞ কর্মীকে ‘Job Description Less (JD Less)’ ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালের ২০ জুন, গভীর রাতে ১৫৯ জন স্থায়ী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, যা শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ১৯৫(১)(ঠ) অনুযায়ী ‘অসৎ শ্রম আচরণ’ এবং অবৈধ লকআউট হিসেবে বিবেচিত।

এছাড়াও, শ্রম বিধিমালা ২০১৫-এর বিধি ১৬(৫) অনুযায়ী স্থায়ী পদে ঠিকাদারি জনবল নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও, গ্রামীণফোন সেই বিধান লঙ্ঘন করে স্থায়ী কাজে ঠিকাদারি কর্মী ব্যবহার করছে।

আদালতের রায়: শ্রমিকদের পক্ষেই রায় ২০২৩ সালে উত্থাপিত শিল্প বিরোধ বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তর সালিশি কার্যক্রম শুরু করে। এরপর: ১২ মার্চ ২০২৫: হাইকোর্ট রায় দেন যে DOL-এর সালিশি কার্যক্রম আইনসঙ্গত।

১৪ জুলাই ২০২৫: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গ্রামীণফোনের আপিল খারিজ করে দেন, যা শ্রমিকদের পক্ষে চূড়ান্ত রায় নিশ্চিত করে।

এতে স্পষ্ট হয় যে, গ্রামীণফোনের ছাঁটাই অবৈধ এবং শিল্প বিরোধ আইনগতভাবে বৈধ।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকেও সুরাহা হয়নি আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক শামীমা সুলতানা বারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন হেড অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস (IR) আওলাদ হোসেন। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক।

দীর্ঘ আলোচনার পরও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। পরবর্তী বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ নভেম্বর ২০২৫।

শ্রমিকদের ক্ষোভ ও প্রত্যয়

চাকরিচ্যুত কর্মীরা বলেন: > “চার বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা অন্যায়ভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছি। আদালতের রায় থাকার পরও কোম্পানি তা মানছে না—এটি আইনের পরিপন্থী।”

তবে তারা আইনের প্রতি আস্থা রেখে জানান, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও আইনগত পথেই তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।

ইউনিয়নের কঠোর অবস্থান গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (CBA) দাবি করে:> “শ্রম আদালত ও হাইকোর্টের রায় থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি তা অমান্য করছে, যা একটি বহুজাতিক কোম্পানির জন্য লজ্জাজনক ও আন্তর্জাতিক শ্রম মানের লঙ্ঘন।”

তারা অবিলম্বে ১৫৯ জন কর্মচারীর পুনর্বহালের দাবি জানায় এবং সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করে।

আন্তর্জাতিক শ্রম মান লঙ্ঘন ইউনিয়ন জানায়, এই ছাঁটাই কেবল জাতীয় শ্রম আইন নয় বরং আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮-এরও পরিপন্থী। তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক কোম্পানি হিসেবে গ্রামীণফোনের দায়িত্ব ছিল শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা, কিন্তু বারবার আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।

সচেতন সমাজের প্রতি আহ্বান সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতারা সাংবাদিক, মানবাধিকার সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান—মূল্য > “শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন। আইন ও মানবাধিকারের পক্ষ সোচ্চার হোন।”

শেষ কথা:
গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ও আদালতের রায় অমান্য করার বিষয়টি শ্রমিক, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এখন দেখার বিষয়, কতটা কার্যকরভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়।