খোলাবাজার২৪,শুক্রবার, ২৪ডিসেম্বর,২০২১ঃ পৃথক দুই মামলায় আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ১৩ জনকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার পরে আত্মগোপনে চলে গেছেন তারা। মামলা সুত্রে জানা গেছে, নর্দান ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশ- এর কাছে ২০১৩ সালে ৩০ কোটি টাকা মুল্যের একটি জমি বিক্রি করে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। কিন্তু ২০২০ সালে এসে একই জমি আবারও ২০ কোটি টাকা মূল্য বাড়িয়ে ৫০ কোটি করে নকল চুক্তিপত্র করে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার নজরুল। এ চুক্তিভঙ্গ ও প্রতারণার দায়ে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, নজরুলের ভাই প্রতিষ্ঠানটির উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, পরিচালক জাহিদুল ইসলাম ভূইয়াসহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর এ পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হাসিবুল হক। আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. রাসেল হোসাইন। তিনি বলেন, আশিয়ানের এমডি নজরুলের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুয়ায়ী পুলিশ এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধ করা রাজধানীর খিলক্ষেত থানার মামলায় নজরুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত গত ১ ডিসেম্বর আসামি নজরুলের প্রতারণার দায়ে আনোয়ারা বেগম এই মামলা করেন। এ দুই মামলায় নজরুলসহ ১৩ জন আসামী পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খিলক্ষেত থানা পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি পরিপ্রেক্ষিতে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপন পরিচালক নজরুল ইসলাম ভূইয়া গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ইতোমধ্যে কয়েকটি জায়গা অভিযান চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
জানা গেছে, নর্দান ইউডনির্ভাসিটির বাংলাদেশ -এর ট্রাস্টি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ’র পক্ষে ইউনির্ভাসিটির কো-অর্ডিনেটর মো. সাইফূল ইসলাম আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম ভূইয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন এদের মধ্যে আরো প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠানটির উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, পরিচালক জাহিদুল ইসলাম ভূইয়া, কাজী শামীম মাহদী ও ওমর ফারুকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, নর্দান ইউনির্ভাসিটির রাজধানীর দক্ষিণখানের কাওলা জামে মসজিদ রোডে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের লক্ষ্যে নজরুল ইসলামের মালিকানা ও দখলাধীন সম্পত্তি যা, আশিয়ান ল্যান্ডের ডেভেলপমেন্টের তত্বাবধায়নে প্রায় ১৬৫ শতাংশ বা ৫ বিঘা সম্পত্তিতে ইউনির্ভাসিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন ট্রাস্টি চেয়ারম্যান। এতে সম্মতি প্রকাশ করে মামলার ১ নং আসামী নজরুল ইসলাম ভূইয়াসহ অন্যান্যরা এরই পরিপ্রেক্ষিতে নজরুল ইসলামের কম্পানির আশিয়ান ল্যান্ড ডেভেলপার লি.-এর পক্ষে ২ নং আসামী সাইফুল ইসলাম ভূইয়া ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট পাঁচ পাতার ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ও কার্টিজ পেপারে একটি চুক্তি সই করেন। এতে বাদীর ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে প্রাসাদ নির্মাণ লি. শিরোনামে সই হয়।
সেই চুক্তি অনুসারে সাইফূল ইসলাম ভূইয়া বাদী পক্ষের কাছ থেকে পাঁচ বিঘা জমির মূল্য ৩০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে অগ্রিম ১২ কোটি টাকা নেন।চুক্তির শর্ত মোতাবেক বাকী ১৮ কোটি টাকা ৩০ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ করার কথা বলা হয়।
চুক্তির শর্তমতে- আশিয়ান কর্তৃপক্ষ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির সকল খাজনা, নামজারি ও সংশ্লিষ্ট সকল অনুমতি রেজিস্ট্রেশনের আগে সম্পন্ন করে নর্দান ইউনির্ভাসিটি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। দুই মাস মেয়াদে সে চুক্তির করা হয় কিন্তু এ সময়ের মধ্যে রেজেস্ট্রি করে দিতে ব্যর্থ হলে বা কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে নর্দান ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ওই জমিতে দখলে যেতে পারবে এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারলে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সে জমিতে কোন সমস্যা হলে পছন্দ অনুযায়ী নর্দান ইউনিভার্সিটি জমি বুঝিয়ে দেবেন।
এদিকে শর্ত অনুয়ায়ী বাকী ১৮ কোটি টাকাসহ মোট ৩০ কোটি পরিশোধ সাপেক্ষে ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট নোটারী পাবলিক কর্তৃক ৩০০ টাকার নজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার করা হয়। এতে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলেপমেন্ট লি.-এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির এমডি নজরুল ইসলাম পাঁচ বিঘা জমি বিক্রির ৩০ কোটি টাকা পেয়ে পরদিন ২৩ আগস্ট জমি রেজিস্ট্রি করে দেবেন বলে স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে আরও একটি অঙ্গীকারনামায় সই করেন।
কিন্তু টাকা পাওয়ার পর নজরুল ইসলাম জমির রেজিস্ট্রি করে দিতে বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা শুরু করেন। এতে নর্দান ইউনির্ভাসিটির পক্ষে চেয়ারম্যান ও ভাইস চ্যান্সেলর নজরুল ইসলাম বরাবর একই বছর ২৬ অক্টোবর রেজিস্ট্রি করার করে দেওয়ার বিষয়ে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠির প্রতি উত্তরে নজরুল ইসলাম পাঁচদিন পর অতি দ্রুত সময়ে রেজিস্ট্রি করে দেবেন বলে জানান। পরবর্তীতে মামলা ২ ও ৩ নং আসামীর সহযোগিতায় এবং ৪ নং আসামী শামীম মাহদী দলিলের হলফনামায় সনাক্তকারী ও ৫ নং আসামী ওমর ফারুককে স্বাক্ষী হিসেবে দলিল করে ১নং আসামী নজরুল ইসলাম ভূইয়া একই বছরে ১৫ ডিসেম্বর সাব রেজিস্ট্রারির বাড্ডা, ঢাকায় নজরুল ইসলামের অফিস ইউনকর্ণ প্রঅজা ৪০/২ নর্থ এভিনিউ গুলশান-২ কমিশনের মাধ্যমে সাব কবলা ( দলিল নং-১১৩৫৩) করে দেন। পরে বাদী প্রতিষ্ঠান সম্পত্তি নিজ নামে নামজারী, খাসনা পরিশোধ সহ ভোগ দখলকার হন। পরে ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বরাবর ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্রের আবেদন করেন। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউক নর্দান ইউনির্ভাসিটিকে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। সেমতে- এর পর থেকে শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সব কিছু চলমান রয়েছে।
কিন্তু ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলাম ভূইয়া বিজ্ঞ আদালত ঢাকা সি.আর মামলা (নং-২৫৯/২০) করেন নর্দান ইউডনির্ভাসিটির বাংলাদেশ -এর ট্রাস্টি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ-কে ১ নং আসামী করে। এতে বাদীর কাছে আরো ২০ কোটি টাকা পাবেন বলে দাবী করেন। যা পিবিআই (পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব ব্যুারো) এ তদন্তাধীন রয়েছে।
এ মামলার কাগজ পর্যালোচনা করে নর্দান ইউনির্ভাসিটি কর্তৃপক্ষ দেখতে পান, ২০১৩ সালের ৩ আগস্টের সম্পাদিত চুক্তির আলোকে আরেকটি অনুরূপ ভিন্ন দখিল দেখিয়ে ৩০ কোটির স্থলে ৫০ কোটি টাকা দেখানো হয়। এতে ১২ কোটি অগ্রিম এবং ৩৮ কোটি বকেয়া হিসেবে দেখানো হয়েছে। পরে যা ৩০ কেটি পরিশোধ করা হয়েছে এবং ২০ কোটি টাকা অপরিশোধ রয়েছে বলে সিআর মামলায় দাবি করা হয়।
কিন্তু চুক্তির মেয়াদ দুই মাস থাকায় সময় পার হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এটা কার্যকর নয় বলছে নর্দান ইউনির্ভাসিটি কর্তপক্ষ। একটা মিথ্যাা ভিত্তিহীন চুক্তিনামা দেখিয়ে মামলা করেছে আশিয়ানের এমডি নজরুল ইসলাম। এগুলো জানার পর চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর নর্দান ইউনর্ভাসিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে মীমাংসার জন্য উভয় পক্ষ বসেন। সেখানে স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে আশিয়ান ল্যান্ডের লোকজন ২০ কোটি টাকা পাবে বলে ফের দাবি করেন। এ সময় উল্টো নর্দান ইউনির্ভাসিটি কর্তৃপক্ষকে দলিল জালিয়াতির তথা কথিত অভিযোগ এনে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ট্রাস্টি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ আবদুল্লাহর জীবন নাশের হুমকিও দেন।