খোলাবাজার২৪, মঙ্গলবার,২৬জানুয়ারি,২০২২ঃ বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরন কমানোর লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব ও এনার্জি সেভিং পণ্য উৎপাদনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স অ্যাপ্লায়েন্স শিল্প। নির্মল বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে ইতোমধ্যে ফ্রিজ ও কম্প্রেসরে ক্ষতিকারক সিএফসি’র (ক্লোরোফ্লোরোকার্বন) ও এইচএফসি (হাইড্রোফ্লোরোকার্বন) রেফ্রিজারেন্টের ব্যবহার বন্ধ করেছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা ক্ষতিকারক রেফ্রিজারেন্টসমৃদ্ধ ফ্রিজ ও এসির ফলে দেশীয় শিল্পের এসব উদ্যোগের সুফল বাংলাদেশ নাও পেতে পারে। আর তাই ফ্রিজ ও এসি আমদানিতে স্ট্যান্ডার্ড এনাজিং রেটিং আরোপের দাবি জানিয়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি, ২০২২) রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নের চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স অ্যাপ্লায়েন্স খাতের অর্জন’ শীর্ষক সেমিনার এমন মন্তব্য করা হয়। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। এতে সভাপতিত্ব করেন ইপিবি’র ভাইস-চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি বাংলাদেশ শাখার প্রজেক্ট ম্যানেজার সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য। এছাড়া আলোচক হিসেবে ছিলেন ওয়ালটন রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টারের প্রধান প্রকৌশলী তাপস কুমার মজুমদার, এলিট হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) নূরে আলম ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. আলী আহমদ শওকত চৌধূরী।
সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আজিজুল হাকিম। অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ডিএমডি মো. হুমায়ূন কবীর, ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)- ২০২২’ এর পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধূরী, ইপিবি’র অন্যান্য ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।
সেমিনারে ইপিবি’র ভাইস-চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান জানান, দেশের সার্বিক রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি বাড়ছে ইলেকট্রনিক্স অ্যাপ্লায়েন্সের রপ্তানি। বিশ্ব বাজারে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্যের সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাজার সৃষ্টি বাংলাদেশের জন্য সুখবর। ইকো-ফ্রেন্ডলি, উন্নতমান, এনাজিং সেভিং এবং ইনোভেটিভ প্রযুক্তির অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদনে মাধ্যমে এই রপ্তানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এবারের ডিআইটিএফ-২২ এ ওয়ালটন বেশ কিছু ইনোভেটিভ ও এনাজিং সেভিং পণ্য প্রদর্শন করছে বলে জানান তিনি।
দেশীয় এসি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এলিট হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ডিএমডি নূরে আলম বলেন, স্থানিয় পর্যায়ে এনার্জি সেভিং ও পরিবেশবান্ধব অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। কিন্তু দেশে আমদানি করা বেশিরভাগ এসি ও ফ্রিজের এনার্জি ইফিশিয়েন্ট কম থাকায় পরিবেশ সুরক্ষায় দেশীয় শিল্পের নেয়া পদক্ষেপের শতভাগ সুফল পাওয়া যাবেনা। সেজন্য এসব পণ্য আমানিতে স্ট্যান্ডার্ড এনার্জি রেটিং নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
ওয়ালটনের আরএন্ডআই সেন্টারের প্রধান প্রকৌশলী তাপস কুমার মজুমদার বলেন, প্রাত্যহিক জীবনে ফ্রিজ, টিভি, ফ্যান, স্মার্ট ফোন ইতাদি অ্যাপ্লায়েন্সের ব্যবহার কমানো সম্ভাব নয়। তবে রিসার্চ ও ইনোভেশনের মাধ্যমে এসব পণ্যকে আরো এনাজিং সেভিং করে তোলা সম্ভব। তাই নির্মল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বায়ুতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ইকো-ফ্রেন্ডলি উৎপাদন ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেশন সিস্টেম ব্যবহার করছে ওয়ালটন। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাড়ে ৫ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমিয়েছে ওয়ালটন। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে আরো ২ লক্ষাধিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়ে আনার কাজ চলমান রয়েছে। পরিবেশ বান্ধব ও এনাজিং সেভিং পণ্য উৎপাদনে প্রতিনিয়ত কাজ করছে ওয়ালটনের চার শতাধিক প্রকৌশলীর রিসার্চ ও ইনোভেশন টিম।