খোলাবাজার২৪, শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২: স্টাফ রিপোর্টারঃ আওয়মীলীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর একজন বিহারী সন্তান। ঠাঁকুরগাঁও জেলার রানী শংকৈল উপজেলার নেকমোরদ ইউনিয়নের গাজীগর বিহারী কলোনীর মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে আজগর আলী। নিজ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ স্থানীয় লোকজন তেমন কেউ তাকে চিনেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আজগর আলী নস্কর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে দিনাজপুরে একটি মটর গ্যারেজের হেল্পার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কিছুদিন ট্রাক ড্রাইভারের কাজ করেন। ১৯৯০ সালে একটি হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দিনাজপুর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় অন্য আসামীকে দেখতে আসা দর্শনার্থী দিনাজপুরের মেহের সুলতানার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক ঘটে। মাঝে মধ্যেই মেহের সুলতানা তার সাথে জেলখানায় দেখা করতেন। ১৯৯২ সালে জেল থেকে ছাড়া পান আজগর আলী। ১৯৯৬ সালে প্রেমিকা মেহের সুলতানাকে বিয়ে করে রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি ছোট্র বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করেন। বাসার পাশেই একটি স’মিলে সামান্য বেতনে (করাতকল) কিছু দিন চাকুরী করেন। কোন মতে সংসার চালিয়ে জীবন পার করছিলেন। এক পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কিনে করাতকলে ভাঙ্গিয়ে তা খুচরা বাজারে বিক্রি করেন। সে সময় তার সাথে এক আদম ব্যাপারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তার সঙ্গে এক পর্যায়ে আদম ব্যবসা শুরু করেন। আস্তে আস্তে আদম ব্যবসার অন্তরালে শুরু করেন হুন্ডি ব্যবসা। ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা, পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি আজগর নস্করকে। বিদেশে নারী পাচার ও হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে কয়েক বছরেই কামিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ভাড়া বাসা পরিবর্তন করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজের ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন। অবৈধ অর্থ রক্ষায় সব সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে রাখতেন সুসম্পর্ক। দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
ইতিমধ্যে একটি নিউজ পোর্টালে তার আপন বড় ভাই সাক্ষাৎকারে বলেছেন ‘বিএনপির জিয়া পরিবারের সাথে ছিল আমাদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার শ্বশুর আমার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আজগর আমার সঙ্গে তাদের বাড়ীতে অনেকবারই গিয়েছে।’
সেই সূত্রে বড় ভাইয়ের হাত ধরেই বিএনপির বড় নেতাদের বাসায় যাতায়াত ছিল আজগর নস্করের।
অনসন্ধানে আরও জানাযায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে তার নাম লেখান এই শেখ আজগর আলী নস্কর। সে সময় দলীয় কর্মসূচিতে তেমন তার উপস্থিতি ছিলনা বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা। মৎস্যজীবী লীগের পদ বাগিয়ে নেবার পরই সুকৌশলে তার নামের পরিবর্তন আনেন সুচতুর এই শেখ আজগর আলী নস্কর।
অর্থাৎ তার পুরা পরিবারই ঠাঁকুরগাঁও জেলার রানী শংকৈল উপজেলার নেকমোরদ ইউনিয়নের গাজীগর বিহারী ক্যাম্পের সদস্য। তার পিতা মৃত ইদ্রিস আলী, ভাই কুদ্দুস আলী, ভাই আব্বাস আলী, ভাই আশরাফ আলী, ভাই আক্কাস আলী, বিহারী পরিবারের সদস্য। তার পিতা ও ভাইদের নামের পূর্বে বংশীয় পদবি হিসেবে ‘শেখ’ না থাকলেও তিনি লায়ন শেখ আজগর আলী নস্কর হিসাবে নিজকে জাহির করেন।
২০১৬ সালে মৎস্যজীবী লীগের কাউন্সিলে নেতৃত্বের স্বাধ নিতে উঠে পড়ে লাগেন। নিজস্ব মালিকানায় রাজধানীর ফকিরাপুলে আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন কৌশলে কর্মীদের ডেকে, নেতাদের সান্নিধ্য পেতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন। ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বরে জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন আজগর আলী। উক্ত পদ পেতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮/১০ কোটি টাকা, যা তিনি প্রায়ই নেতা-কর্মীদের সামনে বলেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর ক্ষমতা ও টাকার গরমে বেপরোয়া হয়ে উঠেন আজগর। নারীসহ নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। তার স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে বিভিন্ন অপকর্মর বিরোধীতা করেছিলেন। এক পর্যায়ে ২০২১ সালে তার স্ত্রী মেহের সুলতানাকে দিয়ে জোরপূর্বক স্ট্যাম্প পেপারে সহি স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া সন্তানদের কথা উপেক্ষা করেও স্ত্রীকে তালাক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন পাষন্ড স্বামী আজগর নস্কর।
মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর নস্কর টাকার বিনিময়ে ক্ষমতার আপব্যবহার করে জামায়াত-বিএনপিসহ অনেক বিতর্কিত লোকদের সংগঠনে পদপদবী দিয়েছেন। কমিটি ও পদ বাণিজ্য করে এতোদিনে কামিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। কেন্দ্রসহ অধিকাংশ জেলা ও মহানগর কমিটিতে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে জামায়াত-বিএনপিসহ বিতর্কিতদেরকে স্থান দিয়েছেন। যার ফলে দলের সুনাম যেমন নষ্ট হচ্ছে পাপাশি গ্রুপিংয়েরও সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে গত মে মাসে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের কাউন্সিলে ১১১ হত্যা মামলার আলোচিত আসামী তাজরীন ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও সাবেক বিএনপি নেতা আব্দুল জলিলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করায় দেশ ব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খবরের শিরোনাম হয় মৎস্যজীবী লীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। এক পর্যায়ে টকশো এবং সংসদ অধিবেশনেও এ নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। এতে সরকার দলীয় প্রধান স্বয়ং শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মৎস্যজীবী লীগ আয়োজিত একটি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তাজরীন ফ্যাশনের দেলোয়ার কিভাবে মৎস্যজীবী লীগে এলো? বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের কথা উপেক্ষ করে বিতর্কিত দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতি এবং সাবেক বিএনপি নেতা আব্দুল জলিলকে সাধারন সম্পাদক হিসাবে কমিটির চিঠি দেন। অনেক নেতাকর্মীর মনে প্রশ্ন যে, আজগর নস্কর কি তাহলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চেয়েও শক্তিশালী?
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে তদন্ত সাপেক্ষে এখনই জরুরী ব্যাবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর এর মুঠো ফোনে একাদিক বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।