সরস্বতী পূজা উপলক্ষে গতকাল রাতে ঢাবির বিভিন্ন হল পরিদর্শনে যান ওবায়দুল কাদের। তিনি কুয়েত মৈত্রী হলে গেলে হলের ফটকে প্রাধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকদের কেউ ছিলেন না। এ অবস্থায় হল শাখা ছাত্রলীগের সমর্থনে একদল ছাত্রী হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। পরে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ নাজমুন নাহার আজ শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মা বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ। গতকাল সকালে আমার মায়ের ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার কথা জানতে পারি। আমার হলে অতিথি আসার কথা জানতাম। তাই বৃহস্পতিবার কয়েক দফায় হলেও গিয়েছি। সর্বশেষ সাড়ে চারটায় হলে গিয়ে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ দেখেছি। প্রাধ্যক্ষ কার্যালয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অতিথিদের জন্য টেবিল সাজাচ্ছিলেন। হলের কর্মচারীরা তাঁদের সহযোগিতা করছিলেন।’
মাকে চিকিৎসক দেখাতে সন্ধ্যা ছয়টার আগেই হাসপাতালে যান জানিয়ে প্রাধ্যক্ষ নাজমুন নাহার বলেন, ‘রাত সোয়া আটটার দিকে চিকিৎসকের চেম্বারে বসে খবর পাই, হলে চিৎকার-চেঁচামেচি হচ্ছে। পরে আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে পুরো ঘটনা জানতে পারি। এই ঘটনার বিষয়ে আমি উপাচার্যকে জানিয়েছি।’
নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে হল প্রশাসনে দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষক বলেন, ‘সাধারণত হলে কোনো অতিথি এলে ছাত্রীরা তাঁদের ফটক থেকে ‘‘রিসিভ’’ করে নিয়ে আসেন। সেই অনুযায়ী গতকাল আমরা হলের কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু তিনি কার্যালয়ে না এসে পূজা দেখে চলে যান। এরপর রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীরা অন্য ছাত্রীদের সংগঠিত করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।’
তবে ছাত্রীদের আন্দোলনে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করছে ছাত্রলীগ। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান বলেন, ‘ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের যৌক্তির দাবির পাশে আছে। তবে গতকালের আন্দোলনের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরকে ‘রিসিভ’ করা, না করার কোনো সম্পর্ক নেই।’
আসন্ন বরাদ্দে কালক্ষেপণ, হল ক্যানটিনের খাবারের মানোন্নয়নে উদ্যোগ না নেওয়া, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা, বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে পরে তা বাস্তবায়ন না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে কুয়েত মৈত্রী হলের একদল শিক্ষার্থী গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবনে যান আন্দোলনকারী ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধি দল। আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১১টায় তাঁরা হলে ফেরেন।
ছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজ প্রাধ্যক্ষ নাজমুন নাহার বলেন, ‘ছাত্রীরা যেসব অভিযোগ করেছে তার বেশির ভাগের সত্যতা নেই। আমি যতদিন দায়িত্বে আছি, হলের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে আমি (প্রাধ্যক্ষ পদ থেকে) সরে যাব।’
এদিকে সকালে কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘(গতকাল রাতে) ১০-১২টা মেয়ে এসেছিল। তাঁদের দাবির অনেকগুলোই যৌক্তিক। আমরা আন্তরিক হলে কিছু সমস্যা সমাধান সম্ভব। ছাত্রীদের প্রশান্তির জায়গাটা ফিরিয়ে আনাই বড় একটি কাজ। আজ সকালে হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। নিঃসন্দেহে সবাই সুন্দর মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।’
প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের ছাত্রীদের দাবির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘বাড়তি কথা বলার সুযোগ নেই। সমস্যা সমাধান জরুরি। একইসঙ্গে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও জরুরি।’