২৫মার্চ খোলা বাজার অনলাইন ডেস্কঃ ফেরদৌস আলম, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মধ্যবর্তী দুর্গম চর অঞ্চলে তরমুজ চাষে দুই শিক্ষার্থীর সফলতার দ্বার উন্মোচনের সম্ভবনা। পারিবারিক বাঁধা থাকা সত্ত্বেও দুই শিক্ষার্থীর এমন উদ্দোগ কৃষি ক্ষেত্রে যেন নতুন সম্ভাবনার জন্ম দেয়। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার খামার বাঁশ পাতা গ্রামের কৃষক ফজল হক এর ছেলে এরশাদুল হক ও মশিউর রহমানের উদ্দোগে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মধ্যবর্তী দুর্গম চর অঞ্চলে ৪ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এরশাদুল হক গাইবান্ধা জিয়েট কলেজ থেকে ডিপ্লমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনা শেষ করে কৃষি কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতেছে। কিন্তু কৃষি কাজের জন্য তিনি কৃষক বাবার নিকট বার বার টাকা চাইলে প্রথমে বাবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালেও পরবর্তী সময়ে ছেলের এমন আগ্রহ দেখে টাকা দিতে রাজি হয়। বাবার নিকট থেকে চাহিদা মতো ৯০ হাজার টাকা নিয়ে চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করে। এই তরমুজ চাষে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি ধাপে ধাপে সফল নিয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়,তরমুজ গাছের বিভিন্ন রোগবালা-ই এর ফলে কখনো ডাল শুকিয়ে যাওয়া, কখনো ফুল ঝরে পরা, কখনো পোকার আক্রমণে গাছ নষ্ট হওয়া, কখনো ফল পঁচে যাওয়া এমন নানাবিধ সমস্যা দেখা দিলে তিনি তরমুজ চাষে হতাশ হয়ে পড়েন। এমন সমস্যার কথা বলতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকে বলেন, “যার কেউ নাই,তার আল্লাহ আছে।” বর্তমানে প্রতিটি গাছে ৩/৪ টি করে তরমুজ ধরেছে,যা বিক্রি করার উপযোগী হয়েছে,, তার এ চাষ থেকে আনুমানিক প্রায় ২লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করেন।এতে খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে জানিয়েছেন। তরমুজ চাষের জমিটির অর্ধেক অংশ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নের খামার বাঁশপাতা গ্রামে, আর বাকি অর্ধেক অংশ গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের লাল-চামাড় মৌজার জমি হওয়ায় দুই উপজেলার কোন কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ও সহযোগিতা পায় নি। তরমুজ চাষী বলেন, যদি তিনি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ও সহযোগিতা পেতেন তাহলে তরমুজ চাষের সাফল্য আরো বেশি অর্জন করতেন। এখনও ক্ষেতের কিছু তরমুজ পঁচে নষ্ট হচ্ছে,এ বিষয় টি দেখে তাৎক্ষণিক কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিটন কে মোবাইল ফোনে জানানো হলে, তিনি তরমুজ চাষের বিষয়টি অবগত নন জানিয়েছেন।। চিলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষাণ দাসের নিকট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাঠ কর্মকর্তা কে দেখার জন্য এখনি বলছি। অষ্টমীর চর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বপন মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, দুর্গম এলাকায় এক বার গেলে আর যেতে ইচ্ছে করে না, তরমুজ এর গাছ নিয়ে অফিসে আসতে বলা হয়েছিল কিন্তু আসে নি। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল কবির’র সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তরমুজ চাষীর মোবাইল নাম্বার আমাকে দিলে আমি বিষয়টি দেখব। এ তরমুজ চাষে বড় ভাই এরশাদুল হক কে সহযোগিতা করেন গাইবান্ধা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর(এইচএসসি) শিক্ষার্থী ছোট ভাই মশিউর রহমান। তাদের এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার তরমুজ চাষ সহ কৃষি ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এমন দুর্গম চর অঞ্চলে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে চর অঞ্চলে কৃষি তে বিপ্লব ঘটবে।যা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।