বৃহঃ. মার্চ ২৮, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

২৩ মে খোলা বাজার অনলাইন ডেস্ক : নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহীতে জমি প্রতারক চক্র আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতারনার দায়ে আরএমপি পুলিশের দুটি মামলায় তিন প্রতারক জেলে আছে। সম্প্রতি জেল থেকে বের হয়েছেন প্রতারক তোফায়েল। জেল থেকে বের হয়ে প্রতারণা শিকার ভুক্তভোগীদের হয়রানি ও নানা মিথ্যাচারসহ অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে, উপশহর এলাকার মৃত আব্দুল হাফিজ খানের ছেলে তোফায়েল (৫৪)। জেলহাজতে থাকা অন্য দুই প্রতারক হলে, নগরীর লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা হক (৪৬), একই এলাকার মৃত ফাইজুদ্দিনের ছেলে রেজাউল ইসলাম (৫৩)। সাবেক ওই নারী কাউন্সিলর জমি প্রতারক চক্রের মুলহোতা। তাদের বিরুদ্ধে জমি বায়নার নামে প্রতারনা, চেক বানিজ্য, ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা, এমনকি আদালতেও প্রতারণা আশ্রয় নেওয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চলতি মে মাস থেকে গত কয়েকদিন যাবৎ এমন অপপ্রচারসহ বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিচ্ছেন ঐ জমি প্রচারক চক্রের অন্যতম সদস্য তোফায়েল। প্রতারক চক্র বিভিন্ন জনের নিকট একই জমি বায়নামা মূলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বায়নাকারী ভুক্তভোগীদের বাগে আনতে ফারজানা চক্র মিথ্যাচার ও নানা অপপ্রচার শুরু করেছেন।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, অভিনব কায়দায় প্রতারণা, জমি দখল, একই জমি বিভিন্ন জনের নিকট বায়না, বায়না’র পরে তালবাহানা, ভাড়াটিয়া হিসাবে বাসায় ঢুকে বাড়ি দখল, অতঃপর মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎসহ নানা হয়রানি’ ছিলো চক্রটি’র মুল পেশা। এসব বিষয়ে এ বছর আরএমপি’র দুটি থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রাজপাড়া থানা পুলিশ চক্রের তিনজনকে আটক করেন। তিন প্রতারকের একজন তোফায়েল অস্থায়ী জামিনে বের হয়ে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছেন।
পুলিশ, প্রত্যাক্ষদোষী এবং ভুক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, পবা উপজেলা’র আলীগঞ্জ মৌজা, জেএল নং-আরএস ৬২ মধ্যে আরএস খতিয়ান নং ২২৪, প্রস্তাবিত খতিয়ান নং ৭১০৪, জমাবন্দি নং ৬৮৮৯, খারিজ কেস নং ৭৩৫/৯-১/২০২২-২০২৩, পরিমান ০.১৬২৯ একর জমি কয়েকজন ব্যক্তি’র নিকট বায়না করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বায়নামাকারী ভুক্তভোগী বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেক বাদি হয়ে রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। খালেক বসুয়া এলাকার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে। অপরদিকে আব্দুল খালেকের মতোই একই জমি নিয়ে বায়না মূলে প্রতারিত হয়েছেন মোল্লাপাড়া এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে সাজ্জাদ বাদশা, বহরমপুর এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে শফিকুল ইসলাম, আলীগঞ্জের জাইদুল ইসলামের ছেলে আব্দুল গাফফার, দামকুড়া হাট এলাকার কাজিম উদ্দিনের ছেলে শরিফুল ইসলাম।
ভুক্তভোগীদের দাবি, ওই নারী বায়নার মাধ্যমে আরও অনেক জনের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে রেখেছেন। নগরীর উপশহর এলাকায় বি-৩০৫ বাড়িটি ফারজানা হক প্রতারণা’র মাধ্যমে দখল করে আছেন । ফারজানা’র শ্বশুর তাঁর বাড়িটিও বিভিন্ন জনের নিকট বায়না করেন। কিন্তু ফারজানা সেই বাড়ী দখল রেখে বলেন, ছেলে মেয়ে বাড়ি বিক্রি করতে দিচ্ছে না। সেখানেও কয়েকজনের সাথে প্রতারণা করেন তারা। প্রতারণা শেষে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে বিভ্রান্তিকর তথ্যদিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে। মামলাবাজ ফারজানা, কথায় কথায় মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে এবং সে নিজেও বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে কোটে বহু মামলা করেছেন।
বায়নামূলে জানা যায়, গত বছর ২৩ জুন একই জমি ১০ লাখ টাকায় নগরীর মোল্লাপাড়া এলাকার সাজ্জাদ বাদশার সঙ্গে বায়নামা চুক্তি করেন। ৬ মাস পরে বাকী টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রিভুক্তকরণ হবে বলে চুক্তিতে বলা হয়। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি না দিয়ে প্রতারক চক্র একই বছর ১৭ আগস্ট পূর্বের বায়না বাতিল না করেই চুপিসারে ৩৭ লাখ টাকায় দ্বিতীয় বায়না করেন বহরমপুর এলাকার শফিকুলের সাথে। এদিকে দ্বিতীয় বায়নার ৪ মাস না যেতেই ২৯ ডিসেম্বর ওই নারী আবারো গোপনে ৪৫ লাখ টাকা নিয়ে তৃতীয় বায়না করেন বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেকের সাথে।বিষয়টি বাদশা জানার পর ঝামেলায় না গিয়ে অভিযুক্ত ফারজানাকে টাকা ফেরত দিতে বলেন।
চলতি বছর২৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে বাদশা ও ফারজানা পবা ভূমি সাবরেজিস্টারের অফিসে উপস্থিত হলে বিষয়টি তৃতীয় বায়নাকারী আব্দুল খালেক জানতে পারেন । তিনি সাবরেজিস্টারের অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে ফারজানাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে । এরপর ফারজানার সামনে হাজির হয় দ্বিতীয় বায়নাকারী শফিকুল।এসময় পবা দলিল লেখকদের উঠানে এনিয়ে বিচার শালিশ শুরু হয়। আব্দুল খালেক বায়নার বাকি টাকা দিয়ে পুরো জমি রেজিস্ট্রি নিতে চান। আব্দুল খালেক জানান, ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় ফারজানার প্রায় ১০ কাটা জমি নেয়ার জন্য বায়না দলিল করা হয়। বায়নার সময় তাকে ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। দলিল মতে, বাকি টাকা ৬ মাসের মধ্যেই তাকে বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে জানতে পারি ফারজানা অন্যদের কাছেও বায়না করে টাকা নিয়েছেন। তিনি এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রেখেছেন। এখন আমি বায়নার বাকি টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি নিতে চাইলে তিনি জমি দিতে রাজি না। এমনকি তিনি যার যার সাথে বায়না করেছেন তাদের কাউকেই জমি রেজিস্ট্রি দিতে চাচ্ছে না। এতে করে আমরা সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকাবাসী জানায়, প্রতারক চক্রের সুনির্দিষ্ট কোনো আয় নাই। প্রতারণা তাদের পেশা। মানুষ জনের নিকট টাকা নিয়ে চেক দেয় তারা। পরে তাদের হয়রানি করতে প্রতারক চক্র মামলা হামলাসহ নানা কূটকৌশল অবলম্বন করেন। মামলা ও হয়রানি’র ভয়ে কেউ এদের বিরুদ্ধে যেতে চায় না।
এ বিষয়ে কথা বলতে তোফায়েলকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই বক্তব্য নেওয়া হয়নি।