- নওগাঁর সাধন সমাচার-৩
২২জুন খোলাবাজার, নওগাঁ থেকে ফিরে, বিশেষ প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির: নওগাঁ জেলায় রাজতন্ত্র চলছে। রাজ্যজুড়ে এক নাম খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। উদ্বোধন, উদ্যাপন, পালিত, গঠিত সব অনুষ্ঠানেই তার নামা রাখা চাই। না থাকলেই বরং বিরাগভাজনে পড়েন। এসব কিছুই না। সরকারি নির্মাণ কাজ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, নিয়োগ সংক্রান্ত, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, ধর্মীয় উপাসনালয়, খাস জমি ও জমি দখল, বিচার শালিস, বাজার ব্যবস্থা, বিশেষ দিবস, নিজ দলের নেতৃত্ব গঠনসহ সবখানেই অনুমোদন লাগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের। নওগাঁ জেলাকে নিজের আয়ত্বে নিতে যা দরকার সবকিছুই তিনি করে থাকেন। তার নির্দেশের বাহিরে কোন কিছু ঘটছে না। নওগাঁ জেলায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের হুকুম ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সকল কর্মকর্তাই যেন তাঁর রাজ্যের কর্মচারী। আর তিনি হলেন সেই নওগাঁ রাজ্যের রাজা।
জানা যায়, ২০১৯ সালে পূর্ণ মন্ত্রী পদে আসীন হন। খাদ্যমন্ত্রী হয়েই তিনি তার দক্ষতদের বিভিন্ন পদ রদবদল করেন। যাদের কাছ থেকে তিনি সুবিধা পাবেন তাদেরকে তিনি রেখে দেন। যাদের কাছ থেকে সুবিধা পাবেন না তাদেরকে দূরে ঠেলে দেন। কৃষকের কাছ থেকে ধান চাল কেনা এবং অভাবী মানুষের হাতে কম দামে চাল, আটা পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকলেও তিনি মনগড়াভাবে সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রন করেন।
কৃষক সরাসরি ধান চাল বিক্রি করছে খাদ্যগুদামে। কিন্তু বিক্রির পর চালের দাম ধানের দাম বেড়ে যাচ্ছে খোলা বাজারে। ২৮ বা ৩০ টাকা কেজি ধান গুনানে বিক্রি করে দিয়ে খোলা বাজারে কৃষককে চাল কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। কৌশল করে ঠকানো হচ্ছে দেশের হাজার হাজার কৃষককে। বাজারে চালের দাম মাঝে মধ্যেই বেড়ে যাচ্ছে এটি খাদ্যমন্ত্রীর চরম ব্যর্থতা হলেও মনে কিছু করছেন না। তার আশেপাশের লোকজনই এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। ফলে প্রধানমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রীর নিজ এলাকায় দেশের সবচেয়ে বড় চালের মোকামগুলোর একটি নওগাঁ। বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেলেও খাদ্যমন্ত্রী রয়েছেন চুপচাপ। বিগত দিনে চালের বাজার বৃদ্ধি পেলে চালকল মালিকদের নিয়ে হৈ চৈ হতো। গাদামধা সাধন চন্দ্র মজুমদার মধ্য হওয়ার পর চালকল মালিকদের পুরো নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেলেও কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এখান থেকে তার নামে প্রতিমাসে থাকছে বিশেষ বরাদ্দ। সকল কাজেই খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নাম থাকতে হবে। তার নামের বাহিরে অন্য কোন নাম থাকলেই হিতে বিপরীত হয়।
নওগাঁ জেলা সদরের বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি মন্ত্রী হয়ে বড়বড় সরকারী কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন। সেসব কাজের লাভের সিংহভাগই যায় মন্ত্রীর পকেটে। ফলে বঞ্চিত হয়ে থাকেন তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে। দলের ভেতরেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পদ হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। দলের পদবীর জন্যও খাদ্যমন সাধন চন্দ্র মজুমদারকে সাধতে হয়। তাকে ছেড়ে ঢাকায় কোন লবিং শুনলেই সেই নেতার বিরুদ্ধে চলে যান মন্ত্রী। তাকে ছাড়া কোন কাজ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। দলীয় অন্যান্য নেতাদের যে অধিকার তা মোটামোটি খর্ব হয়ে গেছে। এখন আওয়ামী লীগ নেতাও তার জন্য অপেক্ষা করেন। কখন কোন নির্দেশনা প্রদান করেন, যেন তিনি নওগার রাজা হয়ে রাজতন্ত্র কায়েম করেছেন।
নওগাঁ জেলার তিনটি উপজেলার কয়েকজন বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গোপনে বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় নেতাদের সাথে গোপন আঁতাত রয়েছে। বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিতে মোটা অংকের কমিশন দাবী করেন। তার কথামত না চললে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে। আর এই বিষয়গুলো দেখভাল করেন মন্ত্রীর ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
তার নির্বাচনী এলাকা নওগাঁ-১ আসনটি ভারত সীমানা ঘেঁষা। আর এই সুযোগে সাধন চন্দ্র মজুমদারের সিন্ডিকেট সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তে ভারতীয় পণ্য আসছে দেদারছে। এসব পণ্যের মধ্যে কি কি আছে তা কেউ বলতে পারেনা। কারণ খাদ্য মন্ত্রীর বিশেষ বাহিনী এই বিষয়ে সার্বক্ষনিক তদারকি করে থাকেন। যে কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননা। প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
নওগাঁ জেলা সদরের বিভিন্ন অফিস ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার নির্মাণ কাজ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন নিযোগ সংক্রান্ত, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, ধর্মীয় উপাসনালয়, খাস জমি ও জমি দখল, বিচার শালিস, বাজার ব্যবস্থা, বিশেষ দিবস, নিজ দলের নেতৃত্ব গঠনসহ সবখানেই অনুমোদন লাগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের। আর এই অনুমোদন না নিলেই তার পক্ষ হয়ে তারই ভাঙ মনোরঞ্জন মনা নানাভাবে হেনস্থা করেন। এই হেনস্থার ভয়ে কেউ কিছু বলেন না। বরং খাদ্যমন্ত্রী যেভাবে চাইছেন সেভাবে কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, রাজার মতো নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর যত অনিয়ম তিনি করে যাচ্ছেন তা সইতে হচ্ছে।