সাভার প্রতিনিধি : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে দেশের পোশাক খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি চক্র। যারা নানা সময়ে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে আন্দোলনের নামে শ্রমিকদের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। এমন চক্রের সাথে তাল মিলিয়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন প্রত্যক্ষভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করছে বলে দাবি একাধিক সচেতন শ্রমিক নেতার।
সাভার ও আশুলিয়াতেও ঘনঘন কর্মসূচী দিয়ে শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সংগঠনটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নামের সংগঠনটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে নানা ধরনের কর্মসূচী দিয়ে শ্রমিকদের মাঝে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেন। তারা মৃত মানুষকে নিয়েও ব্যবসা করছেন বলে দাবি করেছেন অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। আশুলিয়ায় হত্যাকান্ডের শিকার শ্রমিক রবিউলকে এই সংগঠনের নেতা দাবি করে বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে একটি বিশ্বস্ত সূত্র। তবে এই রবিউলকে কখনও কোন স্থানীয় শ্রমিক নেতা শ্রমিকদের দাবি আদায়ে রাজপথে কিংবা মিছিল মিটিংয়ে দেখেন নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই শ্রমিক সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হলেন আমিন। রানা প্লাজা ধসের সময় বস্তি থেকে লোক ভাড়া করে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক সাজিয়ে বিদেশী অনুদান হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল সংগঠনটি। যা সেসময় দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া দুর্নীতিসহ বিদেশি তহবিল সুষম বন্টন না করায় বর্তমানে বিদেশী তহবিল থেকে বঞ্চিত রয়েছে এই সংগঠনটি। এই সংগঠনটি শ্রমিক সংগঠনের আড়ালে নিরবে পকেট কাটছে শ্রমিকদের এমনটাই দাবি অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের। সম্প্রতি গাজীপুরে শ্রমিক নেতা শহিদুল হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও পথসভা করে এই সংগঠনের নেতারা। পরবর্তী সময়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের গাজিপুর জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন। এই সংগঠনের নেতা শ্রমিক নেতা শহিদুল হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় আসামিদের বিচারে আর কোন মানববন্ধন করতে দেখা যায় নি সংগঠনটিকে। কিন্তু আশুলিয়ার শ্রমিক রবিউল হত্যা মামলার আসামিদের বিচারে নানা সময়ে প্রোগ্রাম করতে দেখা গেছে। এমন একটি মানববন্ধনের আয়োজন আগামী শুক্রবার আবার করা হয়েছে। যেখানে যোগ করা হয়েছে মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়।
শ্রমিক নেতারা বলেন, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম ফরিদ এমন কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন। এমনসব কর্মসূচীতে স্থানীয় শ্রমিক নেতারা বিরক্ত। যে সংগঠনের নেতারাই হত্যা মামলার আসামি তারাই আবার হত্যার বিচার চেয়েে কর্মসূচীর ডাক দিচ্ছেন। যদিও হত্যার বিচার চাইতে অপরাধ নেই। কিন্তু একটি হত্যাকান্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা মোটেও কাম্য নয়। এতে করে শ্রমিকদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়, বিভ্রান্তের সৃষ্টি হয়, এমনকি বিদেশি ক্রেতাদের কাছে দেশের পোশাক খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা বলেন, এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বরাবরই ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফায়দা যদি নাই লুটে নিতেন কিভাবে আশুলিয়াতে শ্রমিক রাজনীতি করে গ্রামে মুরগীর খামার, আশুলিয়ায় জায়গা, ফ্যাক্টরির মালিক হলেন এই শ্রমিক নেতা। এছাড়া লাখ লাখ টাকা মানুষকে ধার দেন। সেই ধারের টাকা পরিশোধ না করায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির অফিসে বিচার পর্যন্ত করতে হয়? শুনেছি আইবিসি থেকে আগামী শুক্রবার একটি কর্মসূচী দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইবিসি’র আঞ্চলিক কমিটির সভাপতিই এমন কর্মসূচীর কথা জানেন না।
আইবিসির সাভার আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আল-কামরান বলেন, আগামীকালের কোন কর্মসূচীর কথা আমার জানা নেই। এমন কোন আলোচনা কিংবা কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে অন্যান্য নেতার মুখে শুনেছি আগামীকাল একটি কর্মসূচী রয়েছে। সেটা আইবিসির আয়োজনে হলে আমার কাছে নির্দেশনা আসবে।
এব্যাপারে ফরিদুল ইসলাম ফরিদের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাহার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ৩১ জুলাই ধামরাইয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় রবিউলকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। রবিউলকে মারাত্মকভাবে পিটিয়ে আহত করে বস্তাবন্দি করা হয়েছিল। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার ৫ আসামি গ্রেপ্তার করে ধামরাই থানায় হস্তান্তর করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। নিহত রবিউলকে সংগঠনের নেতা দাবি করে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের ফরিদুল ইসলাম ফরিদ।