খোলা বাজার অনলাইন ডেস্ক : আজদক্ষিণ এশিয়ার ক্লাব ফুটবল সংস্কৃতির ইতিহাসে যুক্ত হতে যাচ্ছে একটিস্মরণীয় ও গর্বের অধ্যায় , যা আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবে।
দেশেরঅন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরাগ্রুপের স্পন্সরে আজ এএফসি কাপেরম্যাচে ভারতীয় ক্লাব ওড়িশার বিপক্ষে মাঠে নামবে বসুন্ধরাকিংস। আর এই ম্যাচটিঅনুষ্ঠিত হবে তাদের নিজস্বভেন্যু ‘বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়’।ফিফা এবং এএফসি-স্বীকৃতআধুনিক এই ভেন্যুর প্রথমআন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল ম্যাচ এটি।
কিংসঅ্যারেনায় আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল আয়োজনের এই দিনটি উদযাপনকরছেন দেশের ফুটবল ভক্তরা। একই সঙ্গে এতেউচ্ছ্বসিত বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তারক্রীড়া প্রেমিক ছেলে সাদাত সোবহানতানভীর, শাফিয়াত সোবহান সানভীর, সায়েম সোবহান আনভীর (শেখ রাসেল স্পোর্টসসার্কেলের চেয়ারম্যান) এবং সাফওয়ান সোবহানতাসভীর (লে. শেখ জামালধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি ও ক্রিকেট ফ্রাঞ্চাইজিরংপুর রাইডার্সের চেয়ারম্যান), বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান, কিংসের খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্ট এবংবসুন্ধরা গ্রুপের সকল কর্মকর্তা ওকর্মচারীগণ।
স্বাধীনবাংলাদেশের ফুটবলে এটি একটি ঐতিহাসিকদিন হতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার সব ক্লাবের জন্যহতে যাচ্ছে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ।
বসুন্ধরাকিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেছেন, আমরা এই দিনটিরস্বপ্ন দেখতাম। আর আজ সেইস্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।এরচেয়ে খুশি আর কীহতে পারে!
দক্ষিণএশিয়ায় এই প্রথম কোনোবেসরকারি ক্লাব নিজস্ব আধুনিক অ্যারেনায় আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল খেলছে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষেরজন্য এটি আনন্দের ওগর্বের বিষয়।ফুটবল আবার জেগে উঠবেএবং হারানো গৌরব ফিরে পাবেবলে বিশ্বাস বসুন্ধরা গ্রুপের।
দক্ষিণএশিয়ার দেশগুলোতে করপোরেট সংস্কৃতিতে যুক্ত বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানেরতালিকা বেশ বড়ই। এরমধ্যে অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠানসামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিয়মিত খেলাধুলায়পৃষ্ঠপোষকতা করছে। কেউ কেউ প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে জনপ্রিয় ফুটবল, ক্রিকেট এবং অন্যান্য স্পোর্টসক্লাবকে স্পন্সর করে। কিন্তু বাংলাদেশেরবসুন্ধরা গ্রুপের মতো খেলাধুলার বিভিন্নসুযোগ-সুবিধার উন্নয়নে মাল্টি-স্পোর্টস কমপ্লেক্স, ক্লাবের আধুনিক অঙ্গন তৈরিতে কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানইহাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগকরেনি।এখানেই অনন্য বসুন্ধরা গ্রুপ।
এশিয়ারফুটবল লেখক এবং বিশ্লেষকদেরএকটি সেমিনারে একজন ইউরোপীয় ফুটবলবিশেষজ্ঞ বসুন্ধরা কিংসকে একটি মাল্টি-স্পোর্টসকমপ্লেক্স নির্মাণ এবং সুষ্ঠু ক্লাবসংস্কৃতির ধারক হিসেবে আখ্যাদিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশেরফুটবলে এই ক্লাবের দায়িত্বও অবদান অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।ইউরোপীয়বিশেষজ্ঞ আরো উল্লেখ করেছেনযে, বসুন্ধরা কিংস বাংলাদেশের একটিপূর্ণাঙ্গ পেশাদার ক্লাব এবং “কিংস অ্যারেনায়ইউরোপীয় ক্লাবের মতো সব ধরনেরসুযোগ-সুবিধা রয়েছে”।
খেলাধুলায়রেকর্ডের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নতুন কিছু শুরুকরার ভাবনা থেকেই বসুন্ধরা কিংস ক্লাবের যাত্রাশুরু হয়। ক্লাবটি ২০১৬সালে পাইওনিয়ার লিগে শিরোপা জেতে।এরপর ২০১৮-২০১৯ মৌসুমথেকে শুরু করে টানাচারবার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ঘরে তোলে।এদেশেরফুটবল ইতিহাসে এই রেকর্ড অন্যকারো নেই।
বসুন্ধরাগ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সবসময় দেশের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে ভাবেন এবং ক্রীড়া অঙ্গনকেনিয়ে তার একটি সুনির্দিষ্টলক্ষ্য ও স্বপ্ন রয়েছে।কিংসের সভাপতি ক্লাবের দলের অনুশীলনের জন্যগ্রুপের চেয়ারম্যানের কাছে মাত্র সাত-আট বিঘা জমিচেয়েছিলেন। সেখানে ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়তে তিনশ বিঘাজমি দেওয়া হয়েছে।বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান খেলাধুলা শুধু ভালোইবাসেন না, খেলা মিশে আছে তাররক্তে। তার ছেলেদের ক্ষেত্রেওএকই কথা প্রযোজ্য। এটিদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি বড়আশীর্বাদ।
স্পোর্টসকমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯সালে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীবছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেএই কমপ্লেক্সের পুরো কাজ শেষহবে। এরপর একাডেমির কার্যক্রমশুরু হবে।ইতোমধ্যেই ইউরোপেরতিনটি বিখ্যাত ক্লাব একাডেমিতে ফ্র্যাঞ্চাইজি করার আগ্রহ দেখিয়েছে।আশা করা যাচ্ছে, একাডেমিচালু করার আট থেকেদশ বছর পর বসুন্ধরাকিংস তাদের নিজস্ব খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি দল গঠনকরবে, এমনকি অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের অন্য ক্লাবের কাছেবিক্রিও করবে।
বসুন্ধরাকিংস তাদের নিজস্ব এই অ্যারেনায় প্রথমপ্রিমিয়ার লিগের হোম ম্যাচ খেলে২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথমদিনের ওই ম্যাচের মধ্যবিরতিতে ‘বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা’ উদ্বোধনকরেন গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান (তখনফিফা এবং এএফসির স্বীকৃতিছিল না)।এরপর২০২৩ সালের ২ জুন বসুন্ধরাকিংস এবং ঢাকা মোহামেডানেরমধ্যকার একটি প্রিমিয়ার লিগেরম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ ফ্লাডলাইটের আলোতে অনুষ্ঠিত হয়।
ফিফাএবং এএফসির স্বীকৃতি অর্জনের পর ৩ ও৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যেপ্রথম দুটি ফিফা প্রীতিম্যাচ আয়োজন করে বসুন্ধরা কিংসঅ্যারেনা।
বসুন্ধরাকিংসের আগমন সময়ের দাবি।মাত্র পাঁচ-ছয় বছরেমাঠের পারফরম্যান্সে ক্লাবটি ফুটবল ভক্তদের মাঝে যেভাবে সাড়াজাগিয়েছে এবং ফুটবলের মুগ্ধতায়অবদান রেখেছেতা লক্ষণীয়। বসুন্ধরাকিংস শুধু দেশের ফুটবলেরচিত্র ও হাওয়াই বদলেদেয়নি, বদলে দিয়েছে দেশেরফুটবলের গল্পও।
লেখক: সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইন্টারন্যাশনালস্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (এআইপিএস), এশিয়া