ফেরদৌস আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ সারা দেশের মতোই গাইবান্ধা জেলা জুড়ে দিন দিন বেড়েই চলেছে ডায়াগনস্টি সেন্টার ও ক্লিনিক কিন্তু কমছে চিকিৎসা সেবার মান। চিকিৎসকের পছন্দের ক্লিনিক বা সেন্টারের টেস্ট ও রিপোর্ট ছাড়া রোগীদের সেবা দেয়া হয় না।
চিকিৎসা নিতে গিয়ে দালাল, রেজিস্ট্রেশন বিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। চিকিৎসা সেবার নামে রোগীদের অর্থ হাতিয়ে নেয়া-ই এখন যেন চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিক মালিকদের ধর্ম।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার শাকিল আহম্মেদ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সিএনজি করে জেলা সদরে আসেন গাইনি বিশেষজ্ঞর কাছে দেখাবেন বলে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসকের ঠিকানা জানা নেই তাঁর, এ কারণে সিএনজি চালকের পরামর্শ নেন। এই সুযোগে চালক একটি রেজিষ্ট্রেশনবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান । অতঃপর এক চিকিৎসক দেখে আলট্রাসোনোগ্রাম, ইসিজি সহ বেশ কয়েকটি রিপোর্ট ধরিয়ে দেন তাঁর হাতে। শর্ত তাদের নির্ধারিত ডায়াগনিস্টিকেই টেস্ট করতে হবে। টেস্ট করতে গিয়ে বিল আসে ২৪০০ টাকা কিন্তু টেস্ট এর প্রক্রিয়া ও টেস্ট করার পরিবেশ ভালো লাগে নি শাকিলের। তাই শহরের অন্য এক বেসরকারি হাসপাতাল এস.কে.এস(SKS) হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রিপোর্ট দেখাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। বিকালে সিরিয়াল নিয়ে ওই রিপোর্টগুলো দেখানো হয়, কিন্তু তিনি ওই রিপোর্টগুলো গ্রহণ করেননি চিকিৎসক বরং এই হাসপাতালে নতুন করে টেস্ট করতে বলেন। উপায় না পেয়ে তাকে আবারও ২০০০ টাকার টেস্ট করতে হয়। টেস্ট গুলো চিকিৎসকের পছন্দ মতো ডায়াগনস্টিক,ক্লিনিক বা হাসপাতালে ছাড়া অন্য কোথাও করা হলে তা গ্রহণ করেন না বলে অভিযোগ এমন অনেক ভুক্তভোগীর।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দাবি রোগীরা রেজিষ্ট্রেশনবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করায় রিপোর্টগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে তাই সেগুলো গ্রহণ করা হয় না। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, উন্নত যন্ত্রপাতি, মেশিন ও চিকিৎসকের কারণে অসৎ ব্যবসার লক্ষ্যে সঠিক রিপোর্ট না দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা সদরসহ এ জেলার ৭ উপজেলায় ৩৫ ক্লিনিক ও প্রায় ২’শতাধিক ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টার গড়ে উঠেছে। তবে, জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুয়ায়ী রেজিষ্ট্রেনকৃত ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালের সংখ্যা মাত্র ২০। অথচ বিভিন্ন ভাবে এসব রেজিস্ট্রেশনহীন প্যাথলজি সেন্টার গড়ে তুলে যত্রতত্র ভাবে চিকিৎসার নামে ভুল-ভাল রিপোর্ট ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।এতে করে জেলার চরাঞ্চলসহ সাধারণ রোগীদের অর্থ অপচয়, হয়রানি, ভোগান্তি বাড়ছে।
গাইবান্ধা পালস ক্লিনিক এন্ড নার্সিং সেন্টারের ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রতিষ্ঠিত রেজিষ্ট্রেশনকৃত বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে গুণগত মান বজায় রেখে সেবা দেয়া হচ্ছে।
জিইউকে হাসপাতালে ম্যানেজার যুবায়ের আহম্মেদ জানান, হাসপাতাল হলো সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। এখানে রোগীদের সাথে প্রতারণা করা সুযোগ নেই। কিছু কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিকিৎসা সেবার নামে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে রোগীদের সাথে এক ধরনের প্রতারনা ও অন্যায় করে আসছে। যা কখনোই কাম্য নয়।
গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারি হাসপাতালে সব ধরণের রিপোর্ট নিখুঁতভাবে করা হয়। তবে, রেজিষ্ট্রেশন বিহীন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলিজির রিপোর্টের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় চিকিৎসকেরা এগুলো গ্রহণ করে না এবং তার পছন্দ মতো সেন্টারে রিপোর্ট করতে বলেন। এজন্য তিনি রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে রোগীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।