Tue. May 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার অনলাইন ডেস্ক : দেশব্যাপী রবিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে দলের নেতাকর্মীদের ‘দুর্জয়’ সাহস নিয়ে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

রবিবার ভোর ৬টায় বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচি শুরু হবে, চলবে টানা মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত। ‘একতরফা’ তফসিল বাতিলসহ সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা এটি হবে সপ্তম অবরোধ কর্মসূচি।

রিজভী বলেন, ‘আগামীকাল থেকে শুরু হবে আবারও নিরবচ্ছিন্ন ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। গণতন্ত্র ফেরানো, আজকে অন্যায়ভাবে গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা মানুষজনকে কারাবন্দি করা এবং তাদের মুক্ত করার যে কর্মসূচি, জনগণের মালিকানা ফেরত দেওয়ার যে কর্মসূচি সেটা হচ্ছে এই অবরোধ কর্মসূচি। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ এই অবরোধ কর্মসূচিতে গণতন্ত্রমনা মানুষ, সাধারণ জনগণ এবং দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তারা দুর্জয় সাহস নিয়ে রাজপথে এগিয়ে যাবে এই প্রত্যয়, এই আশাবাদ আমি ব্যক্ত করছি। এই আন্দোলনে আপনি আমি-আমরা একা নই। আমাদের সকলের অংশগ্রহণে এক দফার আন্দোলন আরও বিস্তৃত, বেগবান ও তেজোদীপ্ত হবে। মনে রাখবেন, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিও আর বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায়না, এদের পতন হবেই।

রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচন জনগণ তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পরবর্তী মেয়াদের জন্য কাদের হাতে অর্পণ করতে চায় তা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের আলোকে নির্ধারণ করে দেয়। সেই নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন শেখ হাসিনার দান-দক্ষিণা, খয়রাত, বিলি-বণ্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার-করুণায় পরিণত হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটে অটোপাসের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট ডাকাতির পর এবার আরেকটা ভাঁওতাবাজির নির্বাচন হবে সেখানেও ওই আরেকটা সিলেকশন করা থাকবে আগে যেটা প্রধানমন্ত্রীর বাসায় বা তার দপ্তরে সেটাও শুধু নির্বাচন কমিশন পাঠ করবে। ৭ জানুয়ারি ভোটের নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হবে অত্যন্ত নিখুঁত ধূর্ততায়, জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে। ইলেকশনের দিন রাত্রে পাঠ করা হবে গণভবনের তালিকা।”

রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে টার্গেট করে অর্থ এবং এমপি বানানোর প্রলোভনে কিংস পার্টি-ভুঁইফোঁড় পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢুকানো হচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, তবে কোনো নীতিবান, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নিতে পারছেন না। কতিপয় ডিগবাজিমার্কা-ভ্রষ্টচারী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচনি রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা বানাতে কবজা করেছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, টাকার বিনিময়ে খরিদ হওয়া এইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা টাকা ও ক্ষমতার মুলোর লোভে পড়ে ডিগবাজি দেওয়ার পর এখন বুঝতে পারছেন তাদের ভাগ্যে শিকে ছিড়বে না। পাতানো খেলার সাজানো নির্বাচনে ‘হার হাইনেস’ যাকে যাকে চাইবেন… তারাই হবেন এমপি, তারাই হবেন ক্ষমতাশালী, অন্য কেউ না।

রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচন এলে যে আনন্দ-উৎসবের জোয়ার নামে জনপদগুলোতে এখন তার পরিবর্তে সারাদেশে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। যারা আওয়ামী লীগ করে তারা ছাড়া গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ, বহু গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। মনোনয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে খুনোখুনি শুরু করেছে তারা (আওয়ামী লীগ)। নির্বাচনকে সরকার উৎসবের বদলে ভয়, আতঙ্ক ও শোকে পরিণত করেছে।

শেখ হাসিনার নির্দেশে নেতাদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে রাতের বাহিনী। এইভাবে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটছে মাফিয়াচক্র। তবে তুমুল আন্দোলন-জনজোয়ারে এই নির্বাচনি নাটক ভণ্ডুল হয়ে যাবে।

রিজভী বলেন, এই প্রতারক মাফিয়া সরকার একদিকে বলছে নির্বাচনে আসুন, অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ আন্দোলনে সক্রিয় ও সাহসী নেতাদের টার্গেট করে বেছে বেছে তাদেরই কারাদন্ড দেওয়া হচ্ছে। পুরোনো মামলায় সাজা দেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে দুই বছরের নিচে কারোর সাজা হচ্ছে না। কারণ দুই বছরের সাজা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিবন্ধক।”

রুহুল কবির রিজভী বলেন, এসব কারাদন্ড প্রদান করা হচ্ছে ‘আজব আদালত’ থেকে যেখানে মৃত নেতা, গুম হওয়া নেতাদেরও রেহাই নেই। মৃতদেরও সাজা দিচ্ছেন শেখ হাসিনার পুতুল আদালত। গত দেড় মাসে বিএনপির ৫৮২ জন নেতাকর্মীকে প্রহসনের বিচারে দন্ডিত ঘোষণা করা হয়েছে। আসামিদের অনুপস্থিতিতে চার্জ গঠন ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় আসামিকে সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শোনার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে সাজা ঘোষণা করা হচ্ছে।

রিজভী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৩২৫ গ্রেপ্তার এবং ১৩টি মামলায় ১ হাজার ৪৩৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই পর্যন্ত সারাদেশে ৪ হাজার ২ শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার এবং ১৩৮টি মামলায় ১৬ হাজার ১২৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।