
# ৮ জন গুলিবিদ্ধ, শিশু-নারীসহ আহত ১৩# প্রকাশ্যে শর্টগান নিয়ে হামলা-গুলি# জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে হামলা চালায় আন্ডা রফিক # জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটও কারণ
মারধরের শিকার বৃদ্ধা নারী নাসিমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। ঘরের মধ্যে যা কিছু ছিল সব কিছু নিয়ে গেছে। আমাদের নিজের বাড়িতে আমরা থাকতে পারি না। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সশস্ত্র ক্যাডারদের ভয়ে পালিয়ে থাকি। ওরা আমার ছেলেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করল। প্রশাসনের লোকের সামনেই আমাদের ওপর গুলি বর্ষণ করেছে। সন্ত্রাসীরা বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না। আমরা কার কাছে বিচার চাইব?’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বৃদ্ধা।
নাওড়ার আবুল পাশার ছেলে জাগু মিয়াও গুলিতে আহত হয়েছেন জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আলাদিনকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনা জেনে ইছাপুরা থেকে আমি বাড়িতে আসি। তখন আমার ওপরেও হামলা করা হয়। আমিও ছররা গুলিবিদ্ধ হই।’
তিনি বলেন, ‘পিস্তল, শটগান, রামদা, রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আণ্ডা রফিক ও মিজানের নির্দেশে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। জমি লিখে না দেওয়ায় আমাদের জমি দখল করতে এসে বাড়িঘরে লুটপাট করে। বাধা দেওয়ায় গুলি চালায়।’
গুলিবিদ্ধ জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি জয়পুরহাট থেকে এসে দেখি আমার বাড়িতে হামলা হচ্ছে। রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম তার সন্ত্রাসীদের নির্দেশ দিয়েছে আমাদেরকে এলাকা ছাড়া করতে। যদি না যাই তখন আমাদের মেরে ফেলতে বলেছে। আজকে প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে আমাদেরকে তারা গুলি করল। পুলিশ কিছুই বলল না। আণ্ডা রফিকের সহযোগী রুবেল আমাকে গুলি করেছে। ৫০-৬০ জন লোক আমাদের ওপর হামলা করল, ওদের প্রত্যেকের হাতে পিস্তল, রামদা, চাকু ও চাপাতি ছিল।’
আহত মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমাদের একমাত্র অপরাধ আমরা আমাদের বসতভিটা ও জমি কেন রফিক ও মিজানের কাছে বিক্রি করছি না। তাদের অন্যায় আবদার না শোনার কারণেই আমাদের মতো নিরীহ মানুষের ওপর একের পর এক হামলা হচ্ছে। আমরা কোথাও গিয়ে বিচার পাচ্ছি না।’
নাওড়া গ্রামের বাসিন্দা আলেমা আক্তার (৬০) বলেন, ‘রফিকের কথায় আমরা আমাদের বসতভিটা তার কাছে বিক্রি না করার কারণে আমাদের মতো নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে ধারাবাহিকভাবে লুটপাট ও হামলা চালানো হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব বলেন, ‘আণ্ডা রফিক ও তার ভাই কুত্তা মিজানের নেতৃত্বে জসু, রুবেল, রহমান, মোজাম্মেলসহ ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী স্থানীয়দের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করে। তাদের বাধা দিতে গিয়ে নাওড়ার প্রায় ১১ জন আহত হয়েছে। আহদের মধ্যে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধদের রূপগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে রফিক ও তার বাহিনী। জমি দখল করতে স্থানীয়দের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এখনই তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’
সরেজমিনে কায়েতপাড়ায় গিয়ে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ ভোটারদের মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়ে কোনো সুরাহা পায়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে নির্বাচনের রাতেও আণ্ডা রফিক ও তাঁর ভাইয়ের নেতৃত্বে হাজী মোতালেব ভূঁইয়া ও দুলাল প্রধানের বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় মামলা হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে সন্ত্রাসীরা।
এ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভী ফেরদৌস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুপুর ৩টা পর্যন্ত আহত অবস্থায় তিনজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছে। এর মধ্যে দুজন ছররা গুলিবিদ্ধ ছিল, পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত ছিল। এ ছাড়া আরো একজনের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।’
রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘নাওড়া গ্রামে সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’ তবে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার ঘটনার কথা অস্বীকার করেন ওসি।
তিনি আরো বলেন, ‘যাদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে এবং যেসব ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তারা আইনের আশ্রয় নিলে অবশ্যই তাদের পাশে থাকবে পুলিশ। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।’