রবি. এপ্রি ২৮, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

ফেরদৌস আলম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি: বুকভরা আশা নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে দিন রাত খেটে ফসল ফলান কৃষকরা। উদ্দেশ্য একটা-ই খেয়ে-পরে একটু ভালো জীবন যাপন করা। তবে অসময়ে নদী ভাঙনের ফলে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের কৃষকদের সেই আশায় গুড়েবালি দিয়েছে সর্বনাশা তিস্তা নদী। ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রায় ৩০ বিঘা ভুট্টাক্ষেত। ক্ষেতের শস্য ও চাষযোগ্য জমি হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় কৃষকরা।

উপজেলার তথ্য সূত্রে জানা যায়, কাপাসিয়া ইউনিয়নের উজান বুড়াইল চরের দূরত্ব উপজেলা থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার। মাঝখানে পাড়ি দিতে হয় ২টি নদী। বছর পাঁচেক আগ থেকে তিস্তার বুকে জেগে ওঠা দুর্গম ওই চরে ব্যাপক হারে ফলছে ভুট্টাসহ নানা শস্য। এখন ভুট্টাক্ষেত গুলোতে মোচা ধরেছে। দু’মাস পরই কৃষকদের ঘরে উঠতো এ ফসল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না তাদের। নদীর পার ভেঙে তছনছ সেই ফসলি জমি। সর্বনাশা তিস্তার ভাঙনে এরইমধ্যে নদীতে ভেসে গেছে জহুরুল ইসলাম, লিটন মিয়া, নুরনবী ও রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের প্রায় ৩০ বিঘা জমির ভুট্টাক্ষেত। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। এর উপর জমিজিরাত ভেঙে যাওয়ায় এখন দিশাহারা ঐ কৃষকরা। উপায়ান্তর না পেয়ে নদী গর্ভে ফসল সহ জমি বিলীন হতে পারে এমন ফসলি জমি থেকে  মোচাধরা ভুট্টাই কেটে গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এবার গম, মসুর, সরিষা, আলু, ভুট্টা, তিল, তিশি, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানান ধরনের রবিশস্যের চাষ হয়েছে ১১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ভুট্টা ৩ হাজার ৮২০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য এলাকা ছাড়াও তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, কাপাসিয়া ও চন্ডিপুর ইউনিয়নের চরগুলোতেও করা হয়েছে ভুট্টার আবাদ। কৃষকদের উৎসাহিত করতে ১১শো কৃষককে দেওয়া হয়েছে সার ও বীজ।

কৃষকরা বলছেন, সব মিলিয়ে জমি ভেদে বিঘা প্রতি  খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। এবার বেশ ভালো হয়েছে ভুট্টা। মোচাও এসেছে এখন। আশা ছিল, প্রতি বিঘায় ফলন হবে ৫২-৫৫ মণ। কিন্তু তিস্তার ভাঙনে এখন সব শেষ। ঋণ শোধ কিংবা পুঁজি করবো কী দিয়ে?

কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, অসময়ে নদী ভাঙনে আমার ভুট্টাক্ষেত তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ধার-দেনা করে এবার আবাদ করেছিলাম। আমার আশা ভেঙে দিলো সর্বনাশা তিস্তা। রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার সবাই আগাম ভুট্টা করেছিলাম। ভুট্টা খুব ভালো হয়েছিল। সবগুলো তে মোচাও এসেছিল। কিন্তু তিস্তা নদী সব শেষ করে দিলো।

কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মন্জু মিয়া বলেন, ভাঙন এখনো চলছে। অসময়ের ভাঙনে চরের কৃষকদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধান করতে না পারলে প্রতিবছর হাজার হাজার হেক্টর জমি তিস্তার পেটে যাবে। ভাঙনের বিষয়টি এরইমধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে। সেই সাথে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে কৃষিতে পুনর্বাসনের জন্য যতটুকু পারা যায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।