বৃহঃ. অক্টো ১০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খোলাবাজার অনলাইন ডেস্ক : শিরোপা খরায় ভুগছিল লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বিখ্যাত এই ক্লাবটি ক্রিকেট তো বটেই, ফুটবলেও শিরোপা দেখা পাচ্ছিল না। ঠিক এমন এক সময়েই ত্রাতার ভূমিকায় আসেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান। ২০১৭ সালে ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই গুছিয়ে নেন সবকিছু। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটেও জোর দেন। শক্তিশালী দল গঠন করেন। এরপর একের পর এক সাফল্য ছিনিয়ে আনে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব সাফওয়ান সোবহানের নেতৃত্বে। সামনের দিনগুলোতেও সাফল্যের পথেই ছুটতে চায় এই ক্লাব।
ক্লাব সভাপতি সাফওয়ান সোবহান বলেন, ‘দেশের প্রধান ক্রীড়া সংগঠক পরিবারের অন্যতম সদস্য ছিলেন শেখ জামাল। আমাদের ক্লাবটি সেই ক্রীড়া অনুরাগী সংগঠকের নামে। যিনি আবার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই। এই ক্লাবকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করতে আমি শুরুর দিন থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য যা যা দরকার সবই করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘খেলাধুলার প্রতি আমার ও আমার পরিবারের অনুরাগ নতুন কিছূ নয়।  আমি ক্লাবটিকে কেন্দ্র করে সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক সাজাচ্ছি। প্রশিক্ষণ, স্থাপনা, পরিকল্পনা, জনসম্পৃক্ততা সবকিছু করছি। আমি জানি আগামী প্রজন্ম ও তরুণদের মাদকমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা উপহার দিতে স্পোর্টসের কোন বিকল্প নাই।’
সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক সাফল্য উপহার দিয়ে যাচ্ছেন সাফওয়ান সোবহান। ক্রিকেটে একক আধিপত্য বিস্তার করেছিল আবাহনী। ২০১৮-১৯ মৌসুমেই এই ধারণাটা শেষ করে দেয় শেখ জামাল। প্রথমবারের মতো আয়োজিত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন টি-২০ ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় দলটা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে মর্যাদার আসর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ জয় করে ২০২১-২২ মৌসুমে। এই মৌসুমটা ছিল স্বপ্নের মতো। দাপুটে ক্রিকেট খেলে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ধানমন্ডি জায়ান্টরা। এই মৌসুমে দলটার হয়ে সর্বোচ্চ ৫১৩ রান করেন ইমরুল কায়েস। পারভেজ রসুলের শিকার ছিল ২৮ উইকেট। লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর প্রথম ডিপিএলেও রানারআপ হয়েছিল এই ক্লাব। ২০২২-২৩ মৌসুমেও দুর্দান্ত খেলা উপহার দেয় শেখ জামাল ক্রিকেট দল। মাত্র দুই পয়েন্টের ব্যবধানে রানার্সআপ হয়। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি ৩৩ উইকেট ছিল শেখ জামালের পারভেজ রসুলের। সেরা ব্যাটার ছিলেন ফজলে মাহমুদ।
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে ক্রিকেট খেলে তারকা হয়েছেন অনেকেই। এই ক্লাবের হয়ে প্রায় ৫০ গড়ে রান করেছেন নুরুল হাসান সোহান। মুশফিকুর রহিম সফল ছিলেন শেখ জামালের জার্সিতে। সাকিব নিজের ৪ বছরের সেঞ্চুরি খরা কাটিয়েছেন শেখ জামালের হয়েই। ভারতীয় উন্মুক্ত চাঁদ ৫৮ গড়ে রান করে গেছেন ২০১৮ সালে। উঠতি তারকারাও খেলেছেন এই ক্লাবে। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি, তাওহীদ হৃদয়ের মতো তরুণ ক্রিকেটাররা নাম কামিয়েছেন এই ক্লাবের জার্সিতেই। জম্মু-কাশ্মীরের পারভেজ রসুল বল হাতে রান দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃপণতার পরিচয় দিয়েছেন। পঞ্চাশের বেশি উইকেট শিকার করেছেন তিনি শেখ জামালের জার্সিতেই।
কেবল ক্রিকেটই নয়, সাফওয়ান সোবহানের সুযোগ্য নেতৃত্বে ফুটবলেও সাফল্য দেখিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বাংলাদেশের আরো এক প্রথমের সাথে জড়িয়ে থাকবে লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের নাম। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো নিয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় অনূর্ধ্ব-১৮ লিগ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী লিমিটেড, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের মতো দলগুলোকে পেছনে ফেলে ট্রফি জয় করে শেখ জামাল। আগামীর তপু বর্মন, জামাল ভূইয়াদের মতো তারকারা তৈরি হবে আঠারো না পেরোনো এই তরুণদের মধ্য থেকেই। স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার প্রথম সিড়িটা তারা পেয়েছে লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবেই।
পেশাদার লিগেও শক্তিশালী দল গঠন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ২০১৭-১৮ মৌসুমে রানার্সআপ হয় দলটা। তাদের সংগ্রহ ছিল ৪৭ পয়েন্ট। ১৫ গোল করে টপ স্কোরার হয়েছিলেন শেখ জামাল ডিসির গাম্বিয়ান ফুটবলার সলোমন কিং ও নাইজেরিয়ান ফুটবলার রাফায়েল ওডোভিন। ২০২০-২১ মৌসুমে ফের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রানার্সআপ হয় দলটা। লিগের ২৪ ম্যাচে মাত্র ২ হার ছিল। ৫২ পয়েন্ট সংগ্রহ করে চ্যাম্পিয়ন ফাইট দেয় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। ১৯ গোল করে সেকেন্ড টপ স্কোরার হয়েছিলো গাম্বিয়ার পা ওমর জোবে। কিছুদিন আগে শেষ হওয়ার মৌসুতে (২০২৩:২৪) ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সে খেলা মিডফিল্ডার হিগর লেইতে খেলে গেছেন। অনেক দিন পর প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পেয়েছিলো ৫ জন শেখ জামালের ফুটবলার।
ক্রিকেট ও ফুটবলের এসব সাফল্যই শুধু নয়, ভবিষ্যত সাফল্যের পথেও দলটাকে এগিয়ে দিচ্ছেন সাফওয়ান সোবহান। দলটির জন্য তৈরী করে দিচ্ছেন ফুটবল মাঠ। রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত স্পোর্টস কমপ্লেক্সের পাশেই হতে যাচ্ছে এই ফুটবল মাঠ। বসুন্ধরা কিংসের পর এই প্রথম দেশের অন্য একটি ক্লাবের হতে যাচ্ছে এমন নিজস্ব একটি ফুটবল গ্রাউন্ড। যা দেশের ফুটবলে যুক্ত করবে এক নতুন অধ্যায়। প্রায় ১০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে তৈরি হচ্ছে এই মাঠ। এই জমির দামই প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডের পাশাপাশি নানা ধরনের ম্যাচও আয়োজন করা হবে এখানে। শুধু চোখ ধাঁধাঁনো মাঠই না, এখানে থাকবে খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা। ব্যবহৃত হবে নানা ধরণের আধুনিক প্রযুক্তি। এছাড়া এই একাডেমির ক্রিকেটাররা ইতোমধ্যেই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিচ্ছেন ক্রিকেটের প্রস্তুতি।
কংক্রিটের এই নগরীতে একটা খোলা মাঠ, যেখানে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে বেড়ানো যায়, খেলা ও শেখা যায় ক্রিকেট-ফুটবল। এমন কিছুর জন্য কত আক্ষেপ রাজধানীর শিশু-কিশোরদের। সোনার হরিণে যেন পরিণত হয়েছে তা। শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার চর্চার প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই। তবে, ব্যতিক্রম রাজধানীর অন্যতম আবাসিক এলাকা ধানমন্ডি। লে.শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের একাডেমি পূরণ করেছে এই এলাকার অভাব। ভবিষ্যতের সাকিব-রিয়াদ-জামাল-তপুরা তৈরি হচ্ছেন এই ক্লাবের একাডেমিতে। লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ক্রিকেট একাডেমিতে রয়েছে প্রায় সাতশ শিশু-কিশোর। কোচ হিসেবে যেখানে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার শাহরীয়ার নাফিস। সম্প্রতি শুরু হয়েছে লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফুটবল একাডেমির কার্যক্রম। শুরু থেকেই ধানমন্ডি এলাকার শিশু-কিশোরদের মধ্যে যা নিয়ে শুরু হয়ে যায় আগ্রহ। ৬ থেকে ১২ ও ১২ থেকে ১৬ এই দুই বয়সের ক্যাটাগরিতে আগামীর স্বপ্ন বুনছে প্রায় ১০০ জন শিশু-কিশোর। সুস্থ পরিবেশ, সঠিক পরিচর্যা, আধুনিক সুযোগ সুবিধা একারণে অভিভাবকরাও নির্ভার এই লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের একাডেমির অংশ হতে পেরে।
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে ফুটবল ও ক্রিকেট একাডেমি ছাড়াও তৈরী করা হয়েছে জিম, টেনিস কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্ট। আছে ইনডোর সুবিধাও। দুটো টেনিস কোর্ট আছে পাশাপাশি। টেনিসের নানা ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এই ক্লাবের প্রতিযোগীরা। বাস্কেটবল কোর্টে দারুণ সময় কাটে শহুরে মানুষের। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা এলেই ফ্লাডলাইট জ্বলে ওঠে। আলোয় রঙিন যায় বাস্কেটবল কোর্ট। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষ করে এই আবাসিক এলাকার মানুষের কাছে কোর্টে কাটানো এই সময়টাই যেন প্রশান্তি এনে দেয়। ইট-কাঠের জঞ্জালের এই বদ্ধ শহরে, এমন সুযোগ আর কোথায় মেলে?
ভবিষ্যতে পুরো একটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরীর পরিকল্পনা রয়েছে ক্লাবের। আগের চেয়ে সবদিক দিয়েই বড় হচ্ছে ক্লাবের পরিসর। স্বপ্নপূরণের এই পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে এক পূর্ণাঙ্গ স্পোর্টস কমপ্লেক্স।  সে পথে দেখা মিলবে দারূণ এক আড্ডালয়ের। বন্ধু, ফ্যামিলি নিয়ে সময় কাটানোর জন্য পরিকল্পনায় আছে সবই।  আউটডোর স্পোর্টস টেনিস, বাস্কেটবল, ফুটবল, ক্রিকেট তো ছিল আগে থেকেই। ইনডোরে বিলিয়ার্ডস অ্যান্ড স্নুকার, পুল, টেবিল টেনিসসহ থাকবে আরো অনেককিছু। স্পোর্টস তো হলো মাঝে সময়টা কাটিইয়ে আসতে পারেন লাইব্রেরিতেও। ফুড কিংবা বেভারেজ, সেসব নিয়ে ভাববেন না একটুও। থাকছে সবই। একটা ক্লাবে যা দরকার, সবই থাকছে কিংবা তারচেয়েও বেশি। ক্লাবের চেয়েও বেশি বলে কথা, একটু বেশি-বেশি না থাকলে চলে।