খোলাবাজার অনলাইন ডেস্ক : সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের চাকরির বিদ্যমান কোটা পদ্ধতিতে এ সংশোধন আনা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি, নারী ও জেলা কোটা রাখা হয়নি।
আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা এ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সই রয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সরকার এ মর্মে আদেশ জারি করছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে নিম্নরূপ কোটা নির্ধারণ করা হলো—মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ।’
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে। এ বিষয়ে পূর্বে জারীকৃত সব পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, নির্দেশ এবং অনুশাসন রহিত করা হলো। এ আদেশ দ্রুত কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
গতকাল দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।
প্রজ্ঞাপন জারির পর আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের কথা রেখেছি, প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপনের গেজেট নটিফিকেশন প্রায় হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে সরকার থেকে যা যা হয়েছে, তার সারমর্ম হলো, কোটা সংস্কারের যে রায় সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ দিয়েছেন, তা প্রতিপালন করেছি। আগে যে সহিংসতা হয়েছে, তার জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের কথা বলা হয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি, কমিটি কাজ করা শুরু করে দিয়েছে।’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে নারী কোটা রয়েছে ৬০ শতাংশ। এটা নতুন প্রজ্ঞাপনের আওতায় আসবে কিনা—এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছে। আপিল বিভাগের রায়ের দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। যেহেতু সেটা নেই, তারা যেভাবে দিয়েছেন আমরা সেভাবেই প্রতিপালন করব।’
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক বলেন, ‘সরকার কোটা সংস্কার করেছে, প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে। আন্দোলনকারীরা আরো দাবি উত্থাপন করছে এবং সেগুলো না মানলে আবার আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?’
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলন করেছিল। সংস্কার করেছি। এখন জনগণ মনে করে, শিক্ষার্থীদেরও কর্তব্য আছে। সেটা হচ্ছে, তাদের লেখাপড়ায় ফিরে যাওয়া। আমি এ আহ্বানই জানাচ্ছি।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত বিচক্ষণ ও সুদূরপ্রসারী রায় দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত ভবিষ্যতের কথা বলেছেন। আশা করতে পারেন দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলনে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটা বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির জঙ্গি হয়ে এ আন্দোলনে সংযুক্ত হয়ে দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা অবশ্যই ধৈর্য ধরেছি, এর কারণও আছে। ধৈর্য ধরার কারণ হচ্ছে, তারা শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিল।’
প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হলো কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নারীরা আন্দোলনের সময় বলেছেন, নারীরা যথেষ্ট ক্ষমতাবান হয়ে গেছেন। তাদের কোটার দরকার নেই। আপিল বিভাগ সেটা শুনে থাকলে আমার কিছু করার নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু সমস্যা সমাধান করে দিয়েছি, সেহেতু এটুকু বলতে পারি, আমাদের বিশ্বাস নতুন করে আর সমস্যা তৈরি করা হবে না; পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে না। যদি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়, সেটার ব্যাপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পেছনে কারা ছিলেন, আগে সেটা নিরূপণ করতে হবে। কিছুটা আছে তথ্য, কিছুটা অপতথ্য এবং গুজব; এই যে তথ্যের বিভ্রাট, সেটাকে ব্যবহার করে জনমনে আবেগ-উত্তেজনা অথবা সেটাকে ব্যবহার করে নাশকতার জাস্টিফিকেশন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার পরই আমাদের সঠিকভাবে নিরূপণ সম্ভব হবে আন্দোলনে কারা কারা ছিলেন। বর্তমানে যে অবস্থা, সেটা নিরূপণ বেশ কঠিন।’
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সহিংসতার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। তাদের মধ্যে প্রস্তুতি ছিল—তারা ডাটা সেন্টার জ্বালিয়ে দেবে, ইন্টারনেট থেকে দেশকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করবে। ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে আমরা বিপদে পড়েছি। আমরা বৈশ্বিকভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমরা যখন পারিনি, তখন তাদের সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইনটা করেছে।’
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ভেতরে আক্রমণকারী সন্ত্রাসীরা ঢুকেছে, এটা আপনারা দেখেছেন। বিএনপি, জামায়াত-শিবির ঢুকেছে। তারা আক্রমণ শুরু করেছে। সরকার এবং সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল আক্রান্ত। বিএনপি, জামায়াত-শিবির আক্রমণ করেছে। বিটিভি, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, টোল প্লাজা আক্রান্ত ছিল। বিটিভি কর্মীদের জীবন বিপন্ন ছিল, তারা বাঁচার আকুতি জানিয়েছে। আমাদের পুলিশ পাঠাতে হয়েছে, পুলিশকে আক্রমণ করা হয়েছে।’