খোলাবাজার অনলাইন ডেস্ক : আমরা এতই নির্বোধ যে শুধু আ.লীগ তথা হাসিনা সরকারের দোষ খুঁজে বেড়াই। সমালোচনা করি। পদ্মা সেতু,এ্যালিভেটেড এক্সপেস ওয়ে, মেট্রো রেল, বঙ্গবন্ধু টানেল-স্যাটেলাইট, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এতকিছু নির্মাণের প্রশংসা না করে বরং ইউরোপ-আমেরিকা বা পাশের দেশের তুলনায় উন্নয়নের নামে কত টাকা অতিরিক্ত খরচ বা লুটপাট হয়েছে তার নিন্দা করি। হত্যা-গুম,নির্যাতন, বেশুমার গায়েবি মামলা নিয়ে মাতামাতি করি। কিন্তু পরম যতেœ অপূর্ব মেধা আর বহু শ্রমে-ঘামের মিশেলে নির্মিত আ.লীগের স্বর্গ-সুধার খবর কেউ রাখি না। কী অকৃতজ্ঞ জাতী আমরা! সপ্তাহের ব্যবধানে নজিরবিহীনভাবে করারুদ্ধ ৬ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর মৃত্যু। সত্তোর্ধ্ব থেকে মধ্যম সারির নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার-রিমান্ড। দিন-দুপুরে বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাংচুর ও তল্লাশী। বাবাকে না পেলে ছেলেকে, স্বামীকে না পেলে স্ত্রীকে, ভাইকে না পেলে বোনকে (মাসুম শিশু সন্তানের আর্তনাদ উপেক্ষা করে) পুলিশের বেআইনী গ্রেপ্তারে চারদিকে যখন সগৌরবে চলছে ভয়াবহ নারকীয়তা। তখনই মর্ত্যলোকের স্বামী-স্ত্রীর মহপরিকল্পনায় নির্মিত বেহেস্তের সদর দরজা খুলে তাদের সহযোগীরা তাজা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে বলছে; ‘চাইলে যে কেউ আসতে পারো এই বেহেস্তে। এখানে পা রাখলেই মুছে যাবে সমস্ত পাপ-মহাপাপ। লগু পাপ-গুরু পাপ, সব কিছু মাফ। শুধু কি তাই? সবই মিলবে এখানে। লেটেষ্ট মডেলের গাড়ী-বাড়ী,অর্থ। অনিন্দ্য সুন্দরী-নারী, মদের নহর। সেই সঙ্গে বিনা হিসেবে ফুলসিরাত পার হওয়ার এবং অনন্তকাল নির্বিঘেœ সুখময় জীবনের নিশ্চয়তা। মন যা চায় তাই করার অফুরন্ত স্বাধীনতা। আরো আছে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার অবারিত সুযোগ। এখানে প্রথম আলোতে ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংবাদটি প্রণিধানযোগ্য বলে মনে করছি। শাহজাহান ওমরের অস্ত্র প্রদর্শন বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি’-শিরোনামে ওই খবরে বলা হয় ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের সমাবেশে অস্ত্র প্রদর্শন বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন’। আওয়ামী বেহেস্তের বাসিন্দারা এমনই সৌভাগ্যবান যে, তাদের জন্য সাত খুন মাফ। পাঠক কী বুঝলেন? আর যদি কেউ বেহেস্তে যেতে না চায় তাহলে তাকে সোজা নরকে নিক্ষেপ করা হবে। অর্থাৎ এক হাতে বাঁশের বাশরী আরেক হাতে রণতূর্য। ‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর? আ.লীগের মাঝে স্বর্গ-নরক,আওয়ামীতে সুরাসুর’! আ.লীগের স্বর্গ-নরক পাশাপাশি। এখানে কোনো সেকেন্ড অপশন নেই। হয় স্বর্গ নয় নরক। একদিকে সুখ-সমৃদ্ধি ও ভোগবাদী-প্রাচুর্যময় জীবনের হাতছানি অন্যদিকে দোযকের প্রজ্জ্বলিত বিভিষিকাময় আগুনে জীবনভর ভস্মিভূত হওয়ার ভয়াল দৃশ্য। কোনটিকে বেছে নেবেন আপনি? আমি বিশ্বাস করি, এর উত্তরে আপনারা সবাই এটাই বলবেন যে, টিভি পর্দায় এবং অন্যান্য মাধ্যমে বিএনপি ও আন্দোলনকারীদের নিয়ে যারা বিএনপি’র এটা ভুল, ওটা ঠিক হয়নি বলে সমালোচনা করেন। সুযোগ পেলে তারা চোখ বন্ধ করে এই স্বর্গে ঢুকে যেতেন এবং স্বর্গ-সুখে ব্যাকুল হয়ে স্বর্গরানী হাসিনার দু’পা ধরে সালাম করতেন। কিন্তু নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনকারীরা স্বর্গ-সুখ আর ক্ষমতাকে পায়ে ঠেলে রাজনৈতিক আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা প্রদর্শন করেছেন। অনস্বীকার্য বাস্তবতা এটাই যে অবক্ষয়শীল সমাজের চারপাশে যেখানে নৈতিক অধ্ব-পতনের সুনামী চলছে সেখানে আওয়ামী স্বর্গদ্বারে প্রবেশের জন্য হুলস্থুল পড়ে যাওয়ার কথা। বিএনপি টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়াটাই হতো স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু না। ঘটলো ঠিক তার বিপরীত। সবাই নরকের আগুনকেই আলিঙ্গন করলেন সচেতন-সযতেœ। দুর্ভাগ্যক্রমে ঘটনার ঘণঘটায় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় এ ঘটনাটি আমাদের জাতীয় জীবনে কিংবা কথিত মিডিয়ায় তেমন আলোচিত হতে দেখলাম না। প্রকৃত পক্ষে এখানেই প্রোথিত রয়েছে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন তথা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সাফল্য। আওয়ামী স্বর্গ-সুধা প্রত্যাখ্যান করে যারা দোযককেই মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারাই জাতির প্রকৃত বিজয়ী বীর। আগামী দিনে তাদের এই গৌরব দীপ্ত ভূমিকার কথা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং বহুকাল ধরে তা আলো ছড়াবে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসে।
প্রশ্ন হচ্ছে,স্বর্গ-নরকের এই মহাযজ্ঞ ব্যর্থ হল কেমন করে? কী সেই রহস্য? সে শক্তির উৎস কোথায়? আমরা কেউ কি তা ভেবে দেখার সময় পেয়েছি। প্রায় সতের বছর ধরে সাজানো মহাপরিকল্পনা, মুহূর্তেই যে কোনো মানুষের গতিবিধি শনাক্ত করার মতো অত্যাধুনিক স্পাই ওয়্যার এবং বিশ্বের স্বৈরতান্ত্রিকশক্তির মদদপুষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই করা কি চাট্টিখানি ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ লড়াই এখনো চলছে এবং তা বিজয়ের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এমন অসাধ্য সাধন করে যিনি গণতন্ত্রকামী মানুষের আশা-ভরসার বাতিঘর হয়ে ওঠেছেন। সেই অসাধারণ কীর্তিমান মানুষটিই সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে থেকেও লক্ষ-কোটি কর্মী-সমর্থকের হৃদয় জয় করেছেন সমহিমায়। শিখিয়েছেন প্রতিপক্ষের সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার-অপবাদ, নির্মম-নিষ্ঠুর অত্যাচার-ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে কিভাবে বীরের বেশে এগিয়ে যেতে হয় চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে। আর এ কারণেই তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরিচয় ছাপিয়ে একজন তারেক রহমান এখন গণতন্ত্রকামী মানুষের সত্যিকারের মহানায়ক হয়ে ওঠেছেন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে পুরো গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃষ্টি এখন তাঁর দিকে।
বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের ক্র্যাক ডাউনের পর মহাসচিব মীর্জা ফখরুলসহ কুড়ি হাজারের অধিক সন্মুখ সারির নেতা-কর্মী যখন কারারুদ্ধ এবং অগণিত সংখ্যায় গৃহহীন। এমতাবস্থায় ১৬ ডিসেম্বর মাত্র ২ ঘন্টার নোটিসে বিএনপির বিজয় র্যালীতে প্রায় লক্ষ জনতার সমাবেশ এটাই প্রচ্ছন্নভাবে প্রমাণ করে যে, আগামী দিনে রাষ্ট্র নায়কের দায়িত্ব পরিচালনায় এবং এই জাতির গণতান্ত্রিক স্বপ্ন পূরণে তারেক রহমান স্পূর্ণরুপে প্রস্তুত। তবে আজকের এ পর্যায়ে পৌঁছতে একজন তারেক রহমানকে পাড়ি দিতে হয়েছে কন্টকাকীর্ণ লম্বা গীরিপথ। লন্ডনে আয়েশী জীবনের বদলে তিনি বেছে নিয়েছেন সাধারণ রাজনৈতিক কর্মীর অতি সাদামাটা জীবনাচারণ। রাত-দিন একাকার করে শীর্ষ থেকে তৃণমূল সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীর কর্ণকূহরে পৌঁছাতে হচ্ছে তার নিজ কন্ঠের বার্তা। আর এজন্য তাকে বছরের পর বছর কাটাতে হচ্ছে শত-সহ¯্র বিনিদ্র রজনী। বলা যায় দেশের গণতন্ত্র তথা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি পিতা জিয়াউর রহমান এবং মাতা খালেদা জিয়ার আদর্শকে লালন এবং বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ আত্মনিয়োগ করেছেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, বিএনপির জন্য একজন তারেক রহমান’র যে ত্যাগ তা সমসাময়িক রাজনীতির ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। প্রণাধিক প্রিয় ছোট ভাই আরাফাত রহমান’র লাশটাও দেখতে পারেননি। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুমূর্ষ মাকে সরাসরি দেখার সুযোগ থেকেও তিনি বঞ্চিত। সরকার তার পাসপোর্ট নবায়ন না করায় তিনি প্রায় ১৭ বছর ধরে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতি মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও অনেক বেশী ভয়ংকর যে কোনো মানুষের জন্য। আর একজন তারেক রহমান তা বয়ে চলেছেন প্রায় দেড় যুগ ধরে। এখানে নিপীড়িত মানুষেরা এটা স্মরণ করে আরো সাহসী হবেন যে, ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারামলে একজন তারেক রহমানের উপর যে বর্বরতা চালানো হয়েছিল তা মোকাবেলা করে বেঁচে থাকার সৌভাগ্য খুব কম মানুষেরই হয়। শারিরীক নির্যাতনে তার স্পিনাল কর্ড (মেরুদন্ড) ভেঙ্গে দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতেও তাকে স্ট্রেচারে করে সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ আদালতে আনা হতো প্রহসনের বিচার কাজের জন্য। সে সময় একটি টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে ওখানে সংবাদ কাভার করতাম নিয়মিত। খুব কাছ থেকে দেখেছি তার প্রতি পৈশাচিক নিষ্ঠুরতার অবর্ণনীয় চিত্র। টগবগে যুবক তারেককে দেখে মনে হয়েছে যেন ৬০ বছরের কোনো বৃদ্ধকে দেখছি। অনেকে ধরে নিয়েছিল যে তারেক হয়ত আর বাঁচবেন না। মানে তাকে বাঁচতে দেবে না। আর বেঁচে থাকলেও বরণ করতে হবে পঙ্গুত্ব। কিন্তু তার অসীম সাহস ও দৃঢ় মনোবল এবং অবশ্যই মহান আল্লাহর বিশেষ পরিকল্পনায় তিনি বেঁছে আছেন এবং ভোটাধিকার-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তার পিতা যেমন পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করে জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েিেছলেন। সেই স্বাধীনতাকে অটুট রাখতে একজন তারেক রহমান এখন জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন স্বাধীনতা-গণতন্ত্র বিরোধী অশুভ শক্তির বিপক্ষে। এবার আপনারাই মিলিয়ে দেখুন যে একজন তারেক রহমানের চেয়ে নির্যাতিত-নিগৃহীত-বঞ্চিত আর কেউ বিএনপিতে আছেন কী না। সুতরাং লন্ডনে বসে তারেক বিলাসী জীবন-যাপন করছেন বলে যারা তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন। আমি তাদের এই অপপ্রয়াসকে নি¤œ স্তরের ভন্ডামী ছাড়া আর কিছু বলতে পারছি না।
তারেক রহমান অনেকবার বলেছেন যে, চলমান আন্দোলন বিএনপির ক্ষমতারোহনের জন্য নয়। এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র তথা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। তারপরও গণতন্ত্রের শত্রুরা বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সর্বাত্মক অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। তাই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে সর্বোচ্চ গরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে যে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছাড়াও গণতন্ত্র-স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির দোসর কথিত মিডিয়া বাংলাদেশের জতীয়তাবাদী শক্তি তথা বিএনপির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। বিএনপি তথা খালেদার সরকারামলের অনিয়ম-দুর্নীতি,লুটপাটকে যদি একটি নদীর সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে আ.লীগ তথা হাসিনা সরকারামলের অনিয়ম-দুর্নীতি,লুটপাটকে চোখ বুঝে একটি মহাসমূদ্র বলা যায়। কিন্তু দেশের কথিত মিডিয়ায় আমরা এর কোনো প্রতিফলন দেখি না।
সম্প্রতি ডেইলী স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের লেখা ‘বিএনপি কি তার কর্মী-সমর্থকদের প্রত্যাশার সম্মান রাখছে’ শীর্ষক কলামই এর বড় প্রমাণ বলে আমি মনে করি। কলামের শুরুতেই তিনি বলেছেন, ‘আজকের দিনে বিএনপি শুধু হরতালের ডাক দিচ্ছে, যা কেউ মানছে না; অবরোধের ডাক দিচ্ছে, যা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না; গণবিক্ষোভের ডাক দিচ্ছে, যা কেবলই ফাঁকা বুলি’। কী বুঝলেন? মাহফুজ আনামের কথাগুলো খুবই পরিচিত লাগছে, তাই না? কারণ আ.লীগ নেতাদের মুখে এমন কথা প্রতিদিনই শোনা যায়। কলামের মধ্যাংশে তিনি বিএনপি নেতৃত্বের প্রতি কিছু প্রশ্ন করে লিখেছেন,‘বিএনপি কি তার দলীয় কর্মী, কিংবা বর্তমান সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট ও আওয়ামী লীগের প্রতি মোহভঙ্গ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে? তাদের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখাতে পেরেছে? নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত কি তারা সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নিয়েছে, নাকি নিজেরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সবার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে?’ডেইলী স্টার সম্পাদক আন্দোলন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত এবং দলীয় কর্মীদের প্রত্যাশার প্রতি সম্মানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে লোক নিজের পেশার সম্মান রাখতে পারেন না, তিনি কেন বিএনপির কর্মীদের সম্মান নিয়ে এতো উতলা হয়ে উঠলেন? আমরা ভুলিনি যে, ১/১১ এর সরকারের সময় গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহকৃত স্ক্রিপ্ট নিজের বলে মাহফুজ আনাম তার পত্রিকায় প্রচার করতেন। তখন কি তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতেন? হাওয়া বদলের পর তিনি এ ঘটনা নিজেই স্বীকার করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। সুতরাং এ ধরণের ফরমায়েশী লেখা এবং পরে ক্ষমা চাওয়া, এটা তার পুরানো অভ্যাস। তাই পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মাহফুজ আনাম তার এই কলামের জন্য ক’দিন পর যদি ক্ষমা চান, আমি অবাক হব না। এই মাহফুজ আনাম এর আগেও বহুবার খালেদা,তারেক তথা জিয়া পরিবারের চরিত্র হননের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। বুঝা গেল তিনি এখনো হাল ছাড়েন নি। ১/১১ এর অন্যতম কুশিলব, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী শক্তির শত্রুদেরকে বিএনপির প্রতিটি কর্মী-সমর্থকের ভাল করে চিনে রাখা উচিৎ।
সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক নীতি-আদর্শের বিচারে একজন তারেক রহমানের চেয়ে সমৃদ্ধ রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে ক’জন আছেন তা এখন অনুসন্ধান ও গবেষণার বিষয়। মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো একজন প্রশ্নাতীত সজ্জন-শিক্ষিত মানুষকে দলের মহাসচিব নির্বাচিত করাটাই তারেক রহমানের রাজনৈতিক সতাদর্শের উৎকৃষ্ট ও প্রামাণ্য দৃষ্টান্ত । দেশপ্রেমিক প্রতিটি সচেতন মানুষ এ কথা বিশ্বাস করেন বলে আমি মনে করি। কারণ হল, মতাদর্শের পার্থক্য নিয়ে স্বামী-স্ত্রী সংসার করতে পারে। কিন্তু মত-পথের অমিল থাকলে আর যাই হোক রাজনীনিতি করা যায় না। এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। অথচ দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে তারেক-ফখরুলের যৌথ নেতৃত্বে সগৌরবে চলছে বিএনপি। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বিএনপি আজ দেশের অন্যতম প্রধান এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। সুতরাং দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায় যে,এটা তাদের যৌথ রাজনৈতিক মতাদর্শ তথা নেতৃত্ব গুণেরই চমৎকার বহিঃপ্রকাশ। তাই একজন তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং তাদের দোসররা হাওয়া ভবন এবং তার সম্পর্কে যেসব মিথ তৈরি করেছেন তা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী কোনো দেশ প্রেমিক মনুষ বিশ্বাস করতে পারেন না। আর বিশ্বাস করেন নি বলেই জাতিকে দাসত্বের শিকলবন্দি রাখতে স্বামী-স্ত্রীর মহাপরিকল্পনায় সাজানো স্বর্গ-নরকের সুবিশাল দেয়াল ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে পেরেছেন সময়ের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতির মহানায়ক হয়ে ওঠা একজন তারেক রহমান। বাংলাদেশের সার্বভৌম-স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি নাগরিককে এটাও মনে রাখতে হবে যে স্বামী-স্ত্রীর মহাপরিকল্পনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০০৪ সালে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি সীমান্তে বিডিআরের সেই বীরোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে। সে ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই সৃষ্টি করা হয় ১/১১ এর সরকার। পরে পিলখানা ট্র্যাজেডি, গণজাগরণ মঞ্চ,শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডি,মানুষের ভোটাধিকার হরণ এবং আমাদের জাতিসত্তাবিরোধী নতুন শিক্ষা কারিকুলাম-এসবই একসূত্রে গাঁথা। সংঘবদ্ধ ওই স্বাধীনতা বিরোধী অশুভ শক্তির একমাত্র বাধা এখন একজন তারেক রহমান তথা বিএনপি। তাই যে করেই হোক তারেক ও বিএনপির বিনাশই তাদের চূড়ান্ত নিশানা। কিন্ত তিনি যে তাদের চোখের সামনেই ফিনিক্স পাখি হয়ে ওঠেছেন। তারা তা বুঝতে সক্ষম হননি। প্রাচীন গ্রিক পুরাণের ফিনিক্স পাখির কথা কম-বেশী সবারই জানা। এটি এমনই একটি পবিত্র পাখি যাকে কিছুতেই ধ্বংস করা যায় না। নির্মমভাবে আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছাই-ভস্ম হয়ে যাওয়ার পর আবারো ফিরে পায় নতুন জীবন। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি যেন এক ফিনিক্স পাখি। আর একজন তারেক রহমান যেন সেই পাখির প্রাণ ভোমরা। এই প্রাণ ভোমরাকে শক্তি যুগিয়ে চলেছে গণতান্ত্রিক বিশ্ব। তাই ২৮ অক্টোবরের ক্র্যাক ডাউন থেকে সর্বশেষ ট্রেনে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর প্রচেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। অনেক দেরীতে হলেও গণতান্ত্রিক বিশ্ব বুঝতে পেরেছে যে, এসবের পেছনে মুখোশপড়া অনেক বিপজ্জনক খেলোয়াড় ঢুকে পড়েছে। সুতরাং ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের কষ্টার্জিত সার্বভৌম-স্বাধীন বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য এবং গণতন্ত্র তথা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারীদের বিজয় অতি সন্নিকটে বলেই মনে হচ্ছে।