বৃহঃ. অক্টো ১০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪: নয় মাস বয়সে পিতাকে হারানো রেজাউর রহমান শাওন আজও নিজের মুক্তির অপেক্ষায় বন্দি রয়েছেন কাশিমপুর কারাগারে। অন্যদিকে, তার সাত বছর বয়সী একমাত্র কন্যা মারিয়ম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আজ সকালে সুপার স্পেশালাইজড হসপিটাল, ধানমন্ডিতে মৃত্যু বরণ করেন।

মারিয়মের জন্ম হয় যখন তাঁর পিতা শাওন অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে ছিলেন। পিতার সান্নিধ্য না পেয়ে এবং জীবনের প্রথমবারের মতো পিতাকে দেখার সুযোগ না পেয়েই, মারিয়ম আজ চিরবিদায় নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে চলে গেলো। ছোট্ট মারিয়মকে হারিয়ে শোকাহত তাঁর পরিবার এবং নিকটজনেরা।

শাওনের জীবনের ঘটনাগুলো অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মাত্র দুই বছর বয়সে পিতাকে হারানোর পর, বড় ভাইয়ের রেমিটেন্স ও মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে শাওন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। তবে, ২০১৪ সালে র‍্যাবের হাতে গুম হওয়ার পর থেকে শাওনের জীবনে নেমে আসে একের পর এক বিপর্যয়। তিনি ৪৫ দিন গুম থাকেন এবং চারটি মিথ্যা মামলার শিকার হন। পরবর্তিতে ২০১৫ মুক্তি পাওয়ার পর, ২০১৬ সালের শেষ দিকে আবারও গুম করে আয়নাঘরে রাখা হয় তাঁকে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে বন্দি রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মারিয়মের একমাত্র বড় মামাও আজ আট বছর ধরে গুমের স্বীকার হয়ে আছেন।

২০২৪ সালের ৮ জুলাই, শাওন মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিন পান, কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ফলে ১০ জুলাই মামলায় স্টে অর্ডার জারি হয়, মামলা নং: রূপগঞ্জ থানা – ৫৮ (১) ১৮, Criminal Misc Petition, 877/2024। এই পুরাপুরি মিথ্যা মামলায় তৎকালীন ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের রাষ্ট্রপক্ষ যদিও কোনভাবেই এই মামলা স্টে অর্ডার দেয়ার মতো মামলা না। মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন রয়েছে এবং কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির কারণে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

শাওনের মা, মরিয়ম বেগম, যিনি বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যুশয্যায় আছেন, আজও তার ছেলের মুক্তির অপেক্ষা করছেন। তিনি তার প্রিয় ছেলেকে মুক্ত এবং সুখী দেখতে চান। শাওনের পরিচিতজনরা জানেন, তিনি কতটা মেধাবী, বিনয়ী এবং শান্ত স্বভাবের একজন মানুষ।

আজকের দিনে শাওনের কন্যা মারিয়ম চিরবিদায় নিলেন। তাঁর পবিত্র ছোট হাতে ডায়েরিতে আঁকা আছে অদেখা বাবার ছবি, অথচ তাঁর বাবা এখনও বিনা অপরাধে জেলখানায় বন্দি। মারিয়ম আজ নিজেই এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে শুধুই ছবি হয়ে গেলো। তাঁর পরিপূর্ণ মুক্তির জন্য তাঁর মা মৃত্যু শয্যায় থেকে আজও অপেক্ষা করছেন আর তাঁর আদরের একমাত্র কন্যা সন্তান আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছেন আর তার পিতা সেল নম্বর- ৬০ পূর্ব, কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন আজও।