বিশেষ প্রতিনিধি: কারো সম্বন্ধে সমালোচনা করার আগে উনার সম্বন্ধে ভালো করে জানা উচিত । মিথ্যা অপবাদ দেওয়া একটি অপরাধ। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ঐ সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য কতিপয় তরুণ অর্থনীতিবিদ ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে (সাবেক অর্থমন্ত্রী আব্দুল মাল মুহিত , ডক্টর রেহমান সোবাহান, ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী সহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিগণ ছিলেন) আমেরিকা ,যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকদের সাথে যোগাযোগ করেন। অধিকন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধে উদ্বাস্তদের জন্য ফান্ড কালেকশন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের কাছে ফান্ড প্রেরন করেন। পরবর্তীতে প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে, বিদেশী স্ত্রীসহ দেশে ফিরে আসেন ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করে দেশসেবার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে পরিকল্পনা কমিশনে নিয়োগ দেন। পরিকল্পনা কমিশনের ব্যাপক অব্যবস্থাপনার কারনে কাজের পরিবেশ পাননি। ফলে তিনি কমিশনের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেন। এসময তিনি লক্ষ করেন কোন বানিজ্যিক ব্যাংক গ্রামের ভূমিহীন ও প্রান্তিক মানুষদেরকে ঋন দেয়না। ফলে এই মানুষগুলো উচ্চসুদহারে গ্রামের সুদি মহাজনদের নিকট থেকে ঋন নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা বা গৃহ নির্মান করতে গিয়ে ভিটেমাটি বন্ধক রেখে সর্বশান্ত হয়। এই অবস্থা থেকে প্রান্তিক এই গরীব মানুষদেরকে রক্ষা করতে তিনি বাংলাদেশ ব্যংকের অনুমতি নিয়ে গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। যে ব্যংক এই প্রান্তিক মানুষগুলোকে বিনা জামানতে ঋন দেবে এবং গ্রামীন সুদি মহাজনদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করবে। এই ব্যাংক প্রান্তিক মানুষগুলোকে বিভিন্ন কর্মপ্রশিক্ষণ দেবে, তাদের বাচ্চাদেরকে বিনামূল্যে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা দেবে, তাদের স্বাস্থের জন্য গ্রামে স্যটেলাইট ও স্ট্যাটিক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন, স্বাস্থসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করেন। পরিবার পরিকল্পনারও ব্যবস্থা নেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই গ্রামীন ব্যাংকের ১% শেয়ার বা মালিকানাও তাঁর নয়, এই ব্যাংকের মালিক ব্যাংকের গ্রাহকরা। তিনি ছিলেন এই ব্যাংকের ৩৫ হাজার টাকা বেতনের একজন কর্মকর্তা। ১৯৭৯ সালে তিনি মনিকা নামক একটি কন্যা সন্তানের পিতা হন। তাঁর বিদেশী স্ত্রী কন্যার ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রফেসর ইউনুসকে আমেরিকায় গিযে অধ্যাপনায় যোগ দিতে চাপ দিতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু প্রফেসর ইউনুস দেশ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। ফলে ড. ইউনুসকে রেখে কন্যা নিয়ে তার বিদেশী স্ত্রী আমেরিকায় চলে যান ও সেখানে গিয়ে তাঁর নামে ডিভোর্স লেটার পাঠান। ১৯৮৩ সালে প্রফেসর ইউনুস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন। এই স্ত্রীর গর্ভে তিনি দিনা নামক এক কন্যা সন্তানের জনক হন। পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক অবদানের কারণে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। জীবনের সব জায়গায় সফল হবেন এমন কোন কথা না কিন্তু কারো নিয়ে সমালোচনা করার জন্য অবশ্যই জেনে শুনে বুঝে সমালোচনা করা উচিত। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস বার বার বলছেন …” আমি তো দেশ চালানোর লোক না, সময়ের প্রয়োজনে আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে দেশকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করব।” আমি মনে করি কমিশনগুলো যথার্থই হয়েছে। নির্বাচন কমিশন দ্রুত পুনর্গঠন ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে স্থানীয় সরকার কাঠামোগুলো দিকে নজর দেওয়া উচিত । পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করে আইন শৃঙ্খলা স্থিতিশীল করা খুবই জরুরী তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা, বিশ্বব্যাপী রাজনীতিতে অস্থিরতা ও দেশের বন্যা কারণে দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় দেশের সাধারণ মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে, বাজার মনিটরিং মাধ্যমে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা । দুর্নীতি দমন কমিশন , পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন পুনর্গঠন জরুরী। এসব কমিশন গুলোর কার্যক্রম নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে কমিশনগুলোকে কার্যকর করে সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের জনগণ বার বার গণঅভ্যুত্থান , ঘুষ, দুর্নীতি, লুণ্ঠন, বিদেশে টাকা পাচার, হত্যা, রাহাজানি, নৈরাজ্য দেখতে চায় না। দেশের জনগণ শান্তি চায় । সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান বলেছেন ১৮ মাসের মধ্যে সংস্কার এবং নির্বাচন করা সম্ভব। আমরাও আশা করছি এই সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো ও নির্বাচন করা সম্ভব। দেশের বৃহৎ স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সময় দেওয়া উচিত । আল্লাহপাক আমাদের সহায় হোক। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।