Thu. Apr 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

এম.আবুল হোসেন দুলাল;২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জন তার গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে খোদ দলটির প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রায় সবপর্যায়ের নেতারাও আজ অবধি আত্মগোপনে রয়েছেন। ওই সময় জনগণের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য রাজনীতিতে একেবারে চুপচাপ থাকার নীতি অবলম্বন করে দলটি। যদিও দুই মাস পার না হতেই নীরবতা ভেঙে আবারো ইস্যুভিত্তিক সক্রিয় হওয়ার চিন্তাভাবনা করছে দলটির শীর্ষপর্যায়। তারই অংশ হিসেবে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মাঠে নামিয়ে জনগণের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

গেল সপ্তাহে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী, ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস, ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস, এই আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিলের প্রতিবাদে গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক মানববন্ধন করার জন্য জড়ো হন। যদিও তারা বাধার মুখে কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। একই দাবিতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে একটি ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর আগের দিন ১৮ অক্টোবর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেলের ৬০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ও বনানী কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়াও রাজধানীর কয়েক জায়গায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং গরিব-অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

গত ১৬ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতা উপস্থিত না থাকলেও এই প্রবীণ নেতার নামাজে জানাজা ও দাফনকে ঘিরে সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বেশকিছু নেতা জড়ো হন এবং রাজপথে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দেন। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে এরকম ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে রাজধানীতে ছোট পরিসরে সামনের দিনেও বিক্ষোভ মিছিল, সংক্ষিপ্ত সমাবেশ পালন করা হবে বলে জানা গেছে। কৃষক লীগের এক ত্যাগী নেতা ফেসবুকে লিখেন ‘ঘর থেকে বের হই মানিব্যাগে এক টুকরো কাফনের কাপড় নিয়ে। ঘুমাতে যাই এরেস্ট হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে। আমার মতো অগণিত রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড় এখন মাঠে নামবে। কয়জনরে পাঠাবেন কাশিমপুরে?’

মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর নীরব থাকার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা ছিল। শুধু ভার্চুয়ালিভাবে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে জনমত তৈরি করার জন্য চেষ্টা চলছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পার হলেও তারা দেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারেনি। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি এ সরকার। ফলে কিছু জনঅসন্তোষ তৈরি হয়েছে এ সরকারের বিরুদ্ধে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে নীরবতা ভেঙে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার জন্য ছোট পরিসরে নেতাকর্মীরা মাঠে নামছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও প্রকাশ্যে আসবেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক ন্যাপের এক নেতা বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে বিচ্ছিন্নভাবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা রাজপথে নামতেই পারেন। যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগও রাস্তায় নামতে পারে। তবে মোটাদাগে এটার কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, আগে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত হয়ে মাঠে নামতে হবে এবং জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণ যদি তাদের গ্রহণ করে তাহলে আওয়ামী লীগ আগামীতে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি একটি পত্রিকাকে বলেন, ছাত্রলীগের ওই প্রতিবাদ কর্মসূচি জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। এখন আওয়ামী লীগের এমন একটা অবস্থা যে, তারা কোনো ভালো কাজ করলেও জনগণ ভালোভাবে নেবে না। এ ধরনের কর্মসূচি পালন করে তারা রাজনীতিতে নতুন করে কোনো গ্রাউন্ড তৈরিও করতে পারবে না। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে সেই দুঃশাসনের কথা দেশের জনগণ এত সহজে ভুলবে না। অন্তত রাজনীতিতে সক্রিয় হতে হলে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এছাড়া সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আওয়ামী লীগের সংগঠিত হওয়ারই অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন।