প্রাচীনকালে পুলিশের সৃষ্টি হয়েছিলো খাজনা আদায়ের জন্য। যার কারনে প্রাচীনকালে পুলিশ মানুষের ঘাড় ধরে সরকারের খাজনা আদায় করে দিত জনগনের কাছ থেকে। সময়ের পরিক্রমায় সেই পুলিশ আস্তে আস্তে হলেও যথেষ্ট জনবান্ধন পুলিশে পরিণত হয়েছে। জনসেবায় পুলিশের মনোজগতেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী, আড্ডাবাজ ও মানবিক ছেলে-মেয়েগুলো দলেদলে এই বাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন। সুতরাং পুলিশে গুণগত পরিবর্তন এখন সাদাচোখেও দৃশ্যমান, যদিও যথেষ্ট ব্যতিক্রম রয়েছে এবং ব্যতিক্রম সবসময় উদাহরণও নয়।
আজ আপনি ৯৯৯ এ ফ্রি ডায়াল করলেই পুলিশ আপনার দরজায় গিয়ে হাজির হচ্ছে। আপনি গহীন অরণ্য বা মাঝ নদীতে কোনো সমস্যায় পড়ে শুধুমাত্র একটা কল করলেই আপনার পাশে পৌঁছে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। করোনাকালে পুলিশ তাঁর ইতিহাসের সেরা মানবিক ও সাহসী গল্প রচনা করেছে।
আইন-শৃংখলা সুরক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের প্রধান কাজ। মানুষ প্রয়োজনে ও বিপদাপদে পুলিশের শরণাপন্ন হয়। নিরাপত্তা, প্রতিকার ও সহায়তা চায়। এক্ষেত্রে পুলিশের আচরণ ও ব্যবহার হওয়া উচিত বন্ধুসুলভ ও সহযোগিতামূলক। কিন্তু বিভিন্ন অভিযোগ ও ঘটনাপ্রবাহ থেকে দেখা যায়, পুলিশের কাছ থেকে সদাচার ও সহযোগিতা কদাচিত পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশের আচার-ব্যবহার অবন্ধুসুলভ, ভোগান্তিকর ও হয়রানিমূলক। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, পুলিশের একাংশের আচরণ শুধু অবন্ধুসুলভ নয়, সন্ত্রাসীসুলভ। চাঁদাবাজি, গ্রেফতার বাণিজ্য, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ আদায় ইত্যাদি দিনকে দিন বাড়ছে। যার কাছে নিরাপত্তার জন্য, আশ্রয়ের জন্য মানুষ ছুটে যায়, সেই পুলিশের আচরণ যদি সন্ত্রাসী-অপরাধীর মতো হয়, তাহলে তারা কোথায় যাবে!
সম্প্রতি এবার ঘটেছে এক ভিন্ন ঘটনা, রাজধানীর দারুসসালাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিব-উল-হোসাইন এ যেন এক আতংকের নাম! তিনি নাকি কোন পারসোনাল অভিযোগ, মামলা ছাড়া আর কোন মামলা নেন না। তার সোজাসাপটা কথা-‘আপনারা ডিসি স্যারের কাছে যান,আমি কোন অভিযোগ বা কোনকিছু শুনতে চাইনা। যা করার ডিসি স্যার করবেন,আমি ভীষণ ব্যস্ত আছি! আপনারা আসতে পারেন এবার।’
উল্লেখ্য, গত ১২-১১-২০২৪ ইং রোজ বুধবার বেশ কয়েকজন মূলধারার গণমাধ্যমকর্মী রাজধানীর মিরপুর দারুসসালাম থানার ওসি রকিব উল্লাহ’র কাছে একটা নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে একটি অভিযোগ নিয়ে যাওয়া হলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি অবন্ধুসুলভ আচরণ করেন। শুধু তাই নয়, মিডিয়াকর্মী পরিচয় পেয়ে তিনি একপর্যায়ে আরও বেশী সন্ত্রাসীসুলভ আচরণের ন্যায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন-‘আমি অনেক ব্যস্ত আছি, কোনপ্রকার অভিযোগ বা মামলা আমি নিবো না। আমি পারসোনাল কোন অভিযোগ বা মামলা হলে সেটা নিব,আপনারা ডিসি স্যারের কাছে গিয়ে যা বলার বলুন।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে রাজনৈতিক পরিচয় ও আর্থিক লেনদেনে বদলি,পদোন্নতি ও নানা ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনায় সমালোচিত হয়েছে পুলিশ।
রাজধানীর মিরপুর দারুসসালাম থানার ওসি রকিব উল্লাহ’র বারবার এরকম অপেশাদার,অবন্ধুসূলভ আচরণের কারণেই পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
মিরপুর দারুসসালাম থানার ওসি রকিব উল্লাহ’র এরকম প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডে সংবাদ প্রকাশ করার স্বার্থে উক্ত বিষয় নিয়ে মিরপুর জোনের ডিসি ডিএমপি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে তিনি বলেন, এরকম আচরণ কখনও কারো সাথে কাম্য নয়। বিষয়টির জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। অফিশিয়ালি বিষয়টি আমি দেখছি