Mon. Aug 25th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খলিলুর রহমান খলিল, রংপুর প্রতিনিধি : ৭০ বছর ধরে বেদখলে থাকা পৈত্রিক জমি আদালতের নির্দেশে উদ্ধার করেও শান্তি পাচ্ছেন না রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার এক দরিদ্র বৃদ্ধ। জমি ফিরে পাওয়ার দিনই হামলার শিকার হন তিনি। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকিতে কাটছে তাঁর ও পরিবারের প্রতিটি দিন।
তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের খোর্দ বেলাইচন্ডী সর্দারপাড়া গ্রামের ৬৮ বছর বয়সী মো. আব্দুল জব্বার জানান, তাঁর দাদা জমির উদ্দিনের রেখে যাওয়া ৬৮ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাদের মধ্যে বিএনপি নেতা মশিউর রহমান ওরফে কালুয়া অন্যতম।
জমি উদ্ধারে পরিবারটি একাধিক প্রজন্ম ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিল। ২০১৫ সালে আব্দুল জব্বার মামলার বাদী হন। মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেন এবং জমি ফেরতের নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৩ জুলাই রংপুর জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, সেনাবাহিনী, তারাগঞ্জ থানা পুলিশ ও আদালতের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জমি দখলমুক্ত করে তাঁর হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
তবে জমি বুঝে পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুর্বৃত্তরা তাঁর ঘরবাড়িতে হামলা চালায়। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই হামলার হুমকি পাচ্ছেন তিনি ও তাঁর পরিবার।
অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি নেতা মশিউর রহমান (কালুয়া) ও তার অনুসারীরা আব্দুল জব্বারকে হুমকি দিয়ে বলছে, ‘তুই জমি নিছস, এবার তোকে শেষ করুম’। এমন হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তারাগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জব্বারের মেয়ে জেসমিন আক্তার।
জেসমিন বলেন, “প্রতিপক্ষরা আমাদের রাস্তাঘাটে আটকিয়ে ভয় দেখায়। পুলিশের সামনেই মারতে আসে। কোথায় যাবো, কী করবো— কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দখলদাররা দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল জব্বার ও তাঁর পরিবারের উপর নানা অত্যাচার চালিয়ে এসেছে। থাকার মতো জায়গা না থাকায় পরিবারটি খড়ের ছাউনিতে ১০ হাত একটি ঘরে গাদাগাদি করে থাকতো। গোসল করতো সেচ ক্যানেলে, প্রাকৃতিক কাজ সারতো ঝোপে। অন্যের নলকূপের পানি ব্যবহার করে চলতো তাদের জীবন।
আব্দুল জব্বার বলেন, “আদালতের রায় অনুযায়ী জমি পেয়েছি। প্রশাসনের উপস্থিতিতে দখলও নিয়েছি। এখন তারা আবার জমিতে যেতে দিচ্ছে না। আমার পরিবারের জীবন হুমকির মুখে। সরকার ও প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।”
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় রাজু, জামাল উদ্দিন ওরফে টোল্লা, দুলু, খোকন সরদার, রেজাউল হোসেন, রফিক আলী, চন্টু, কালা মিয়া, জিকরুল ইসলাম, জিয়ারুল ইসলাম, আরজিনা বেগম, দুলালী বেগম, রফিকা বেগম, মশিউর রহমান ওরফে কালুয়া, লাল বাহাদুর, মাসুদ ও আফেজা বেগমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের পরও যদি ভুক্তভোগীরা জমিতে নিরাপদে থাকতে না পারেন, তবে তা রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর উপর সরাসরি আঘাত। দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।