কামরুল হাসান, ঠাকুরগাঁও থেকে : নিজের সন্তানকে দুধ পান করাতে পারছেন না এক মা। কারন শিশুটির বাবা তার মায়ের শরিরে কেরোসীন দিয়ে ৭০ ভাগ অংশ পুড়ে দিয়েছে। ওই মায়ের শরীর জুড়ে এখন ঘা আর ঘা। বিচারের পাশাপাশি ওই মায়ের এখন সবচেয়ে বড় আকুতি তার সন্তানকে বড় করে তোলা। সন্তানকে কোলে নেওয়ার জন্য চিৎকার করছেন। কিন্তু কোলে নিতেও পারছেন না শারমিন আক্তার নামে এই গৃহবধূ। কারণ তার পাষন্ড স্বামী আলমগীর হোসেন তার শরীরে কেরোসিন তেল ঠেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে করে শারমিনের শরীরের ৭০ ভাগই অগ্নিদন্ধ হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুখানপুকরি এলাকার তৈওয়ারিগাঁও গ্রামে। সে এখন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার দন্ডপাল এলাকার দারিদ্র সাহেবুল ইসলাম গত দু’বছর আগে তার মেয়ে শারমিনকে বিয়ে দেয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শুখানপুকুরী এলাকার তৈওয়ারিগাঁও গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেনের সাথে। বিয়ের পর থেকেই সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। কারণ স্বামীর চাহিদা অনুযায়ী যৌতুক না দেয়া। স্বামীসহ তার শশুর, শাশুড়ি ও দেবর প্রতিনিয়ত তার উপর অমানবিক অত্যাচার চালাতো। গত ৭ আগস্ট সকালে পাষন্ড স্বামী আলমগীর হোসেন আরও একটি বিয়ে করার জন্য স্ত্রী শারমিনের কাছে একটি সাদা কাগজে সাক্ষর চাইলে সে সাক্ষর না দিতে চাইলে শুরু হয় বাকবিতন্ডা। এক পর্যায়ে আলমগীর ঘর থেকে কেরোসিন তেল এনে শারমিনের শরীরের আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। শারমিন চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে আগুন নিভায়। তার আগেই শরীরের ৭০ ভাগ অংশ পুড়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষনিক ভাগে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। একমাত্র সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে পারছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার শারমিনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকার বার্ন ইউনিটিতে রেফার্ড করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। কিন্তু তার উন্নত চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে শারমিনের বাবা ঠাকুরগাঁও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে যায়। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. জুয়েল বলেন, শারমিনের শরীরে বেশি ভাগ অংশই পুড়ে গেছে। কয়েকদিন প্রাথমিক চিকিৎসার পরে আজ তার অবস্থার অবনতি হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার বার্ন ইউনিট হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। অগ্নিদন্ধ শারমিন জানান, ‘আমি বাঁচতে চাই। না হলে আমার সন্তান বাঁচবে না।’ আমার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারছি না। আমার পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিচার চাই। শারমিনের বাবা সাহেবুল জানান, মেয়ে একটি ভাল ঘরেই বিয়ে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আমার মেয়ের উপর প্রায় চলে পাশবিক নির্যাতন। সেজন্য তাকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে আমার জামাই। মেয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই। আমার মেয়েকে মনে হয় টাকার অভাবে বাঁচাতে পারবো না। ঠাকুরগাঁও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোর্শেদ আলী খান জানান, যেহেতু ওই গৃহবধূ অতি দারিদ্র তাই মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে তাকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।