বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
১০ বছর ধরে সরকারকে কোনো ফি বা কর দিচ্ছে না প্রায় সাত লাখ মোটরযান। এসব ফির ওপর জরিমানা একাধিকবার মওকুফ করেও নিয়মিত কর/ফি প্রদানে অভ্যস্ত করা যায়নি পরিবহন মালিকদের। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে ট্রাক মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জরিমানা মওকুফের আবেদন করা হলে ১০ বছর ধরে ফি না দেয়ার বিষয়টি তাদের মনে করিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ে করা ঢাকা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির ওই আবেদনে বলা হয়, ‘বিগত বছরগুলোতে হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যবসায়িক মন্দায় পড়েছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ ও টায়ার-টিউবের দাম বাড়ায় অধিকাংশ যানবাহন মালিক যথাসময়ে গাড়ির কর-ফি পরিশোধ করতে পারেননি। এ অবস্থায় জরিমানা ছাড়া কর/ফি পরিশোধের সুযোগ দিলে মালিকরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।’
যানবাহন মালিকদের ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ-সংক্রান্ত এক নথিতে অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, ‘মোটরযানের বকেয়া কর ও ফির ওপর জরিমানার বিষয়টি মনে হচ্ছে একযুগ ধরে চলে আসছে। এতে প্রতীয়মান যে, গণপরিবহনে সারা দেশে একটি নৈরাজ্য বিরাজ করছে। প্রায় সাত লাখ মোটরযান ১০ বছর ধরে কোনো ধরনের কর বা ফি দিচ্ছে না এবং ফিটনেস ছাড়া প্রায় তিন লাখ গাড়ি হয়তো রাস্তায় চলছে।’
তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ তথ্যের সঙ্গে একমত নন পরিবহন মালিকরা। তাদের মতে, সরকারি হিসাবে ফি বা কর বকেয়া রাখা পরিবহনের সংখ্যা সাত লাখ দেখানো হলেও প্রকৃত অর্থে এ সংখ্যা আরো কম হবে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, গত ৪০ বছরে অনেক যানবাহন অকেজো হয়ে ভাঙারিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তার কোনো হিসাব নেই সরকারের কাছে। তাছাড়া মফস্বলের মালিকরা সরাসরি কোনো ফি দেন না। বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে তা পরিশোধ করেন। দালালরা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে এটি পরিশোধ দেখালেও বাস্তবে তা অপরিশোধিত থেকে যাচ্ছে।
এদিকে সরকার বিভিন্ন সময়ে জরিমানা মওকুফ ও শিথিল করলেও নিজেদের উদাসীনতার কারণে এ সুযোগ গ্রহণ করেননি মোটরযান মালিকরা। উল্টো তাদের মধ্যে খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে বিপুল সংখ্যক যানবাহনের কাগজপত্র হালনাগাদ না করায় একদিকে যেমন পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারও প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জরিমানা ছাড়াই বকেয়া কর ও ফি পরিশোধ করার সময় ৭ অক্টোবর ২০১৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবে সম্মত হয়। কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পর সর্বশেষ মে ২০১৪ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও বেশির ভাগ পরিবহন মালিক যানবাহনের ফি বা কর পরিশোধ করেননি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের প্রেসিডেন্ট খন্দকার রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, ঢাকা শহরে যানবাহনের মালিকরা কাগজপত্র হালনাগাদ রাখেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে এটি হয়ে থাকে। কিন্তু ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন কাগজপত্র ছাড়াই চলছে। ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি না থাকা এবং মালিকদের অসচেতনতার অভাবে এটি হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, নতুন করে মোটর গাড়ির কর/ফির জরিমানা মওকুফ করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এ-সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
এদিকে নিবন্ধনহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মধ্যেই মোটরসাইকেল জব্দ না করে নিবন্ধন ফি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ পরামর্শ দেয়া হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্যরা অভিমত দেন যে, ফি বেশি হওয়ার কারণেই ব্যবহারকারীরা নিবন্ধন না করে তা অবৈধভাবে রাস্তায় চালাচ্ছেন। এটি কমালে সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন এবং নিবন্ধন করবেন। বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে মত দেন।