Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

3শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর ঘাটতি মেটাতে ভারতের পাশাপাশি এবার মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান থেকেও এবার গরু আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সীমান্তপথে গত এক সপ্তাহ ধরে গরু আসার সংখ্যা বাড়ছে।

ফলে কোরবানির গরু নিয়ে মানুষের যে দুশ্চিন্তা রয়েছে সেটা কেটে যাবে। কোরবানির চাহিদা অনুযায়ী দেশের হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকেও গরু আসা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, ভারত সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় থাকলেও যুগ যুগ ধরে চলে আসা গরু বাণিজ্য এবারও শিথিল হচ্ছে। কারণ ভারতীয় খামারিদের বিরাট একটি অংশ তাদের উৎপাদিত গরু ঈদের সময়টায় বাংলাদেশে বিক্রি করার ওপর নির্ভরশীল।

ভারত থেকে গরু আমদানির জন্য সীমান্তের ৩১টি করিডোর এলাকায় আগের কঠোর অবস্থান কিছুটা শিথিল করেছে বিএসএফ। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন সীমান্তপথে প্রায় দেড় লাখ গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ঈদ ঘনিয়ে এলে গরু আমদানি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যাপারিরা।

ঈদ সামনে রেখে সীমান্ত এলাকায় ভারতের ব্যবসায়ীরা গরু এনে জড়ো করছেন। যদিও অন্যান্য বছরের মতোই এবারও দু’পারেই গরু না আনার জন্য মাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গরু ও ইলিশ- এই দুটো অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে দুই দেশেই সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে বৈধ ও অবৈধ উভয় প্রক্রিয়ায় সীমান্তপথে শুরু হয়েছে গরু-ইলিশের বাণিজ্য। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সীমান্তপথে গত এক সপ্তাহ ধরে ভারত থেকে গরু আসার সংখ্যা বাড়ছে।

ঈদুল আজহায় মোট কত সংখ্যক পশু কোরবানি হয় তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, ঈদের পর চামড়া গণনায় দেখা যায়, গত বছর ৩৬ লাখ গরু কোরবানি হয়েছিল। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর কোরবানির গরুর চাহিদা তৈরি হয় সর্বোচ্চ ৪০ লাখের মতো।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা দুই কোটি ৮৬ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৫ লাখ গাভী। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মাংস ব্যবসায়ীদের হিসাবে, দেশে বছরে ১ কোটি ৪০ লাখের মতো গরু ও মহিষ জবাই হয়। এর ৬০ শতাংশই হয় কোরবানির ঈদে। কোরবানির জন্য এবার ৩০ লাখ গরু ও ৬৯ লাখ ছাগল-ভেড়া ও মহিষ রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতকরা প্রায় ৯০ শতাংশ নিজস্ব উৎপাদন থেকে আসছে। তবে কোরবানির সময় এটি মোট চাহিদার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ঘাটতি থাকে। যুগ যুগ ধরে ভারতীয় গরুতে তা পূরণ হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। কোরবানির হাটগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গরুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারের ব্যাপক উদ্যোগ আছে। শেষ পর্যন্ত গরুর কোনো সংকট থাকবে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) ও বিজিবির হিসাব অনুসারে, প্রতি বছর গড়ে ২০ লাখ গরু ভারত থেকে আনা হয়। সরকারি হিসাবে, ২০১৪ সালে গরু এসেছে ২০ লাখ ৩২ হাজার। ২০১৩ সালে আসে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার দেশে কোরবানির জন্য প্রয়োজন হতে পারে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ গরু। এর মধ্যে ৩০ লাখের মত গরু দেশেই প্রস্তুত। প্রয়োজন আরো ১০ লাখ। দেশীয় গাভী ও ভারত থেকে আসা স্বল্প সংখ্যক গরু দিয়ে আরো ৫ লাখ চাহিদা ইতিমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। বাকি থাকে মাত্র ৫ লাখের সংকট। ভারত থেকে যদি শেষ পর্যন্ত গরু নাও আসে, তাহলে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে গরু এনে এ ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে। কারণ এখনও হাতে ২০ দিনের বেশি সময় রয়েছে।

মিয়ানমার থেকে আসছে গরু
ভারত থেকে কোরবানির পশু আমদানিতে সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকছেন বেপারিরা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এক থেকে তিন দিনের টোকেন নিয়ে গরু আনতে মিয়ানমারে যাচ্ছেন বেপারিরা। এছাড়া অবৈধভাবেও গরু আনার খবর পাওয়া গেছে।

মিয়ানমারের গরুগুলো দেখতে অনেকটাই দেশীয় গরুর মতো। আবার দেশীয় গরুর মতো হলেও দাম অনেকটা ভারতীয় গরুর মতোই। ফলে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ গরুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের যেসব গরু বাংলাদেশে আসে সেগুলো বিভিন্ন পাহাড়ে ঘাস খেয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়। ফলে এসব গরুতে রোগব্যাধি দেখা যায় না।

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বৈধভাবে গরু আমদানি করা হয়। এ ছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন চোরাই পথে প্রবেশ করছে মিয়ানমারের গরু। বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, মিস্ত্রিপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরুম, নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, উখিয়ার রেজু আমতলী, ফাঁড়িরখিল, বালুটিয়া এবং উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকায় গুমধুমের তুমব্র“সহ আরও দু’একটি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের গরু আসছে। এসব গরু এখনই বাজারে আনা হচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে লালন-পালন করে মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন বেপারিরা। কোরবানির ঈদের দুই সপ্তাহ আগে পুরোদমে বাজারে আসতে শুরু করবে গরুগুলো।