Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

অর্থনৈতিক অগ্রগতি আমাদের দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে পারে না। এজন্য সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। গতকাল সিরডাপ অডিটরিয়ামে অ্যাকশন-২০১৫ বাংলাদেশ কোয়ালিশনের উদ্যোগে ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল-এসডিজি : বাংলাদেশের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই সুপারিশ করেন। তারা বলেন, দারিদ্য ও বৈষম্য কমাতে হলে ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কার, উন্নয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুসম বণ্টন, শিক্ষা ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ, প্রতিবন্ধী-শিশু-বৃদ্ধদের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং উন্নয়নের লক্ষ্য সামনে রেখে বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের দক্ষতা নিয়ন্ত্রণ ও মানবিক মর্যাদা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য কাজী রিয়াজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর রিসার্চ ফেলো, ড. আবুল বাশার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) প্রফেসর ড. শামসুল আলম। সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর চন্দন জেড. গোমেজ। সঞ্চালনা করেন স্টেপস্ টুয়ার্ডস্ ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ সবার আছে। বিশেষভাবে, এজন্য সুশীল সমাজও অবদান রাখতে পারে। তাদের সেই জ্ঞান-যোগ্যতা আছে। তবে কাজের ফলটা যেন সত্যিকার উপকারভোগীরা পায় সেদিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে। কারণ এই উপকারভোগীরা হচ্ছে আমাদের দেশের জনগণ।

তিনি বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন বা গতির সঞ্চার হয়েছে। এর আগে তা ছিল না। একটা স্থবিরতা বিরাজমান ছিল। সরকার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলেই এখন সবকিছুতেই একটা গতি এসেছে। সরকার উন্নয়নের স্বার্থে বেসরকারি ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতা চায়, দ্বন্দ্ব নয়। এ নিয়ে আলোচনা সব সময় হতে পারে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. শামসুল আলম জানান, সহস্রাব্দের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সেরা প্রশংসা অর্জনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল)-এর আসন্ন সম্মেলনে বিবেচনার জন্য অনেকগুলো মতামত দিয়েছে। এই মতামতগুলো তৈরির সময় বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিদ্যমান বাস্তবতাকে যতটা সম্ভব বিবেচনা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হবে। মোটা দাগে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহের মূল কথা হলো- দারিদ্র্য ও অসমতা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাখাতে সবার অভিগম্যতা রাখা, মানসম্মত ও প্রযুক্তি সহায়ক শিক্ষা, সুশাসন প্রভৃতি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এর হার বর্তমানে কমে এলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

ড. এম এম আকাশ বলেন, উন্নয়নের জন্যই শ্রেণী বিভক্ত সমাজের সবাইকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। মানুষই দারিদ্র্য দূর করবে। এজন্য সরকারকে সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। আর বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে শুধু স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দিয়ে বৈষম্যে পরিবর্তন আনতে পারবে না। এজন্য শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও পুঁজির ব্যবস্থা করতে হবে। কাউকে পিছনে ফেলে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য কাজী রিয়াজুল হক বলেন, আমাদের দেশের ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোর বেশিরভাগই শিশুরা করছে। এজন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মনিটরিং কম। শুধু বেতন বাড়ালে হবে না। তাদের কাছ থেকে সার্ভিস আদায় করে নিতে হবে। সরকার যদি বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন গোলে মানবিক কথাটি রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের স্বার্থের সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক না হয় সেই টেকসই উন্নয়ন আমরা চাই। যাতে মানুষের মঙ্গল, উন্নয়ন ও বিশেষ করে সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের কাজে লাগে।

স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি আমাদের দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে পারে না। এজন্য সামাজিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সবকিছু বাজারে ওপর ছেড়ে দিলে সমন্বয়হীনতা বাড়বে। যা সরকারকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক যে গ্যাপ রয়েছে তা রাষ্ট্রকেই জোরালো দায়িত্ব নিয়ে ধনী দেশগুলোকে প্রেসার দিতে হবে। এছাড়া সমাজে বৈষম্য কমাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুসম বণ্টন করার পাশাপাশি শিক্ষার হার বাড়ানো, বঞ্চিত মানুষদের কথা টেকসই উন্নয়ন গোলে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। এক্ষেত্রে গুড গভর্নেন্স শক্তিশালী করা প্রয়োজন রয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-এর অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর চন্দন জেড. গোমেজ বলেন, এসডিজি অর্জনে আমাদের সমাজের পিছিয়ে পড়া ৪০ শতাংশ নিয়ে কাজ করতে হবে। এরপর বাংলাদেশ কী অ্যাকশন প্লান নিতে যাচ্ছে সেখানে সরকারকে সবার সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এজন্য জবাবদিহিতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে।