খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
বিশ্বজুড়ে আয়লানকে নিয়ে যেন সমালোচনার ঝড় থামছেই না। সমালোচনার সেই মাত্রাকে আরও তীব্রতর করার মতো আয়লানের বাবা নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলো বার্তা সংস্থা রয়টার্স। আবদুল্লাহ তার স্ত্রী রেহান, ছোট্ট দুই ছেলে আয়লান ও গালিপ এবং অন্যান্য যাত্রীদের নিয়ে যে নৌকায় করে তুরস্কের এজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রীসের কস দ্বীপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন সেই নৌকার তিনজন যাত্রীর বক্তব্যের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলো।
রয়টার্সের প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, দুর্ঘটনা সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছেন মৃত ওই শিশুটির বাবা আবদুল্লাহ কুর্দি। কারণ তিনি নিজেই একজন মানব পাচারকারী। শুধু তাই নয়, যে নৌ দুর্ঘটনায় আয়লান প্রাণ হারিয়েছিল সেটির চালকও ছিলেন তিনি নিজেই।
সম্প্রতি গ্রিসের কস দ্বীপে পৌঁছানোর সময় নৌকাডুবিতে তিন বছরের আয়লানসহ দুই শিশুপুত্র এবং স্ত্রীকে হারিয়েছেন আবদুল্লাহ। তুরস্কের উপকূলে বালিতে মুখ করে পড়ে থাকা আয়লানের মৃতদেহের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ঝড় তুলেছে শরণার্থী সঙ্কটের অমানবিক দিকটি।
গ্রিসের দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য সেদিন নৌকাটিতে যারা যাত্রী হয়েছিলেন তাদের দলে ছিলেন ইরাকি নাগরিক আহমেদ হাদি। তার সঙ্গী হয়েছিল স্ত্রী, ১১ বছরের মেয়ে এবং ৯ বছরের ছেলেও। আহমেদ বলেছেন, তাদের নৌকাটি চালাচ্ছিলেন আবদুল্লাহ কুর্দি নিজে। কিন্তু সাগর উত্তাল হয়ে বড় বড় ঢেউ নৌকায় আঘাত করতে থাকলে আবদুল্লাহ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দ্রুত চালাতে শুরু করেন।
তবে আয়লানের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর আবদুল্লাহ অবশ্য দাবি করেছেন তিনি নৌকার আরোহী ছিলেন। কেবল আহমেদ নয়, শুক্রবার বাগদাদ থেকে জাওয়াদ নামের আরো এক ইরাকি দাবি করেছেন,‘আয়লানের পিতা মিথ্যা বলেছেন। আমি জানিনা তিনি কি কারণে মিথ্যা বলছেন। সম্ভবত ভয় পাওয়ার কারণেই তিনি এমনটি করছেন।’ জাওয়াদ আরো জানিয়েছেন, শরণার্থীদের গ্রিসে পৌঁছে দেয়ার জন্য ওই নৌ যাত্রার আয়োজনও করেছিলেন আয়লানের পিতা। আবু হুসেইন নামের এক মানব পাচারকারীর কাছ থেকেই তিনি আবদুল্লাহর এই নৌ যাত্রা সম্পর্কে জেনেছিলেন।
জাওয়াদের দেয়া তথ্য স্বীকার করেছেন আমির হায়দার নামের ২২ বছরের এক কুর্দি যুবক। তিনি ইস্তাম্বুল থেকে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি আবদুল্লাহকে তুর্কি ভেবেছিলেন। পরে আবদুল্লাহ তার স্ত্রীর সঙ্গে সিরীয় আরবিতে কথা বলার সময় আমিরের ভুল ভাঙ্গে। এই নিয়ে রয়টার্স প্রতিনিধিরা বেশ কয়েকবার সিরিয়ার কোবানিতে আবদুল্লাহর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তারা আবু হুসেইনের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি।
তবে আবদুল্লাহ তার বিরুদ্ধে আনা রয়টার্সের এই অভিযোগটিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ব্রিটিশ ট্যালবয়েট পত্রিকা ‘ডেইলি মেইল’কে সিরিয়া থেকে বলেছেন, ‘ঘটনা ডাহা মিথ্যা। আমি যদি পাচারকারী হতাম তবে অন্যদের সঙ্গে আমার পরিবারকে একই নৌকায় নিতাম না। পাচারকারীদের আমি ঘৃণা করি। ‘তিনি ওই নৌ দুর্ঘটনার জন্য অন্য এক তুর্কি পাচারকারীকে দায়ি করেছেন।