Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

20খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
সারাদেশে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসছেন নিষ্ক্রিয়রা। বঞ্চিত হচ্ছেন ত্যাগী ও রাজপথে থাকা লাঞ্ছিত নেতাকর্মীরা। এতে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়ছেন ত্যাগীরা। বিগত আন্দোলনে যাঁরা এলাকায় ছিলেন না, যাঁদের ছাত্রত্ব নেই, বিবাহিত ও ব্যবসায়ী, তাঁরাই পাচ্ছেন নেতৃস্থানীয় পদ। আর এজন্য অনেক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে পদবাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। এমনকি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসানকে কারামুক্ত ও তাঁর মামলা পরিচালনার জন্য চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। বিএনপিপšি’ অনেক ব্যবসায়ী ও ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান অনুসারীরা এ চাঁদা আদায় করছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ভুক্তভোগীরা কেউ এ ব্যাপারে মুখ খুলতে পারছেন না। সূত্রে জানা যায়, বিগত দিনে ছাত্ররাজনীতি, ছাত্রআন্দোলনের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আর এখন ছাত্ররাজনীতির নামে চলছে ব্যবসা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মহানগর, জেলা ও উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন-পুনর্গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই চিঠিতে ৩১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারাদেশে কমিটি গঠন-পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে। এরপর অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের মতো ছাত্রদলও কমিটি গঠন শুরু করেছে। আর এই কমিটি গঠন নিয়েই অন্তর্কোন্দল দেখা দিয়েছে। মহানগরসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এই কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। শুধু ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারাই নন, তাঁদের সঙ্গে মিলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাও এই অন্তর্কোন্দলে দায়ী। তাঁরা নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করছেন। অন্তর্কোন্দল নিরসনে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনেকেই বলছেন, ছাত্রদলে এরকম কোন্দল চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে সাফল্য পাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘নিষ্ক্রিয়রা যদি কমিটিতে স্থান পেয়ে যান, তাহলে কোনো আন্দোলনেই ছাত্রদল তথা বিএনপি সফল হতে পারবে না।’ এ পর্যন্ত সারাদেশে জেলা ও মহানগরের বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কতটি ইউনিট গঠন-পুনর্গঠন করা হয়েছে, সে তথ্য কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কাছে নেই। মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রভাবশালীরা যে যার মতো কেন্দ্রীয় কতিপয় নেতাকে ম্যানেজ করে কমিটি ঘোষণা দিচ্ছেন। বিভিন্ন অভিযোগে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েকটি ঘোষিত কমিটি বাতিল করা হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জে সম্প্রতি ঘোষিত ১৮ ইউনিট বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ জেলার কমিটি গঠনের ক্ষমতা থাকা চারজনের মধ্যে দুজনে স্বাক্ষর করেন। বাকি দুজন স্বাক্ষর করেননি। এ কারণে এই ইউনিটগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। যে দুজন স্বাক্ষর করে কমিটি ঘোষণা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম মহানগরে ত্যাগী ও রাজপথের নেতাকর্মীদের দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হলে নজিরবিহীনভাবে কেন্দ্র তা স্থগিত করে দেয়। কিন্তু কি কারণে স্থগিত করা হয়েছে- তা জানে না চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদল। কমিটি ঘোষণার ১০ দিনের মাথায় স্থগিত করা হয় চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানা ইউনিট। এখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান রাজপথে থাকা ত্যাগী নেতা জহিরুল হক টুটুল ও ইফতেখার উদ্দিন নিবলু। অভিযোগ রয়েছে, জেলার এক প্রভাবশালী নেতা সরাসরি হস্তক্ষেপ ও টাকার বিনিময়ে এ কমিটি বাতিল করতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে বাধ্য করেন। শোনা যায়, এখানে ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আবার কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী এক নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে টাকার বিনিময়ে পদবাণিজ্যের অভিযোগ। এসব অভিযোগের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন, হবিগঞ্জের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য তাঁকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ প্রদান করেছেন বলে জেলা ছাত্রদল সূত্র জানায়। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মিঠু ও চট্টগ্রাম উত্তরের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আলম নুরু একই কারণে কেন্দ্রীয় নেতাকে টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার সাদাত সায়েম গত ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন। এবার তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কমিটিতে স্থান পাওয়ার উদ্দেশ্যে দৌড়ঝাপে ব্যস্ত। খরচও করছেন বেশ। ম্যানেজ করেছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতাদের। সারাদেশের অন্যান্য জেলা কমিটির ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে একইরকম কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ। পিরোজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কাউখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম আহসান কবির বলেন, ‘সম্প্রতি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার ছাত্রদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মো. সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বলকে। যিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন। ১০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন মহাখালী এলাকায় সিঅ্যান্ডবি রোডের ৩৬/ক নং বাসায়। আজিমপুরে তাঁর হোটেল ব্যবসা ছিল। হোটেলের নাম ছিল ‘হোটেল আনিকা’। তিনি ঢাকাস্থ কাউখালী যুব কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে প্রায় এক যুগ আগে। এসএম আহসান কবির আরও বলেন, ‘এই কমিটির ২১ জনের মধ্যে সিরাজুল ও আরও দুজন ছাড়া বাকিরা পদত্যাগ করেছেন।’ বাকি দুজন গাজীপুরে চাকরি করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদকের কাছে এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা কোনো ব্যবস্থা না নিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জানানো হবে। আর চেয়ারপারসনও যদি কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে তিনিসহ পিরোজপুর জেলা বিএনপির অনেকেই দল থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান। জেলার সিনিয়র নেতারাও অবাক হয়েছেন এই কমিটি দেখে। একইভাবে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া পিরোজপুরের ১৪টি ইউনিট কমিটি ২৪ আগস্ট ঘোষণা করে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি। কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আহসান কবির বলেন, ‘জেলা কমিটির অনেক নেতাই জানেন না কোথা থেকে কি হলো।’ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেই কমিটি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। স্বরূপকাঠি উপজেলা কমিটিতে কোনো সদস্য নেই। ৩২ জনই যুগ্ম আহ্বায়ক। এ নিয়ে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিশ্র“ত ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে ছাত্রদলের কমিটি দেখতে চাই।’ জেলা বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েক নেতা জানান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক জসিমউদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় তিন নেতার বাড়ি এ এলাকায় হওয়ার কারণে তাঁদের প্রভাব ও নির্দেশনায় এ কমিটি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন বিল্লাহ, রিপন ও জসিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন এবং ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসানকে কারামুক্ত করতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও উঠেছে। এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মামুন বিল্লাহ বলেন, ‘এসব অভিযোগ ঠিক নয়।’ তিনি বলেন, আমি নোংরা এবং লেনদেনের রাজনীতি কখনই করি না। জসিমউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। মোবাইল করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে অনিয়ম প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ বলেন, ‘আমি বিএনপি স্থায়ী কমিটির মেম্বার। আমি ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নই; যাঁরা করেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’ এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান অসুস্থ থাকায় কোনো মন্তব্য করেননি।