Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
114বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জাল শেয়ার, সার্টিফিকেট ও বরাদ্দপত্র বিক্রির জন্য দায়ের করা মামলা আবার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমসি) ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ভবনে অবস্থিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের (জেলা ও দায়রা জজ) বিচারক হুমায়ুন কবীর মঙ্গলবার সকালে এ নির্দেশ দেন।
এ সময় আদালতের কাঠগরায় উপস্থিত ছিলেন আসামি তানলিন মাশফু। তাকে এ সময় সার্বিকভাবে সহায়তা করেন আইনজীবী প্রাণ কানাই রায় চৌধুরী। এ সময় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান উপস্থিত ছিলেন।
মামলা ফেরত পাঠানোর কারণ হিসেবে আদালত জানান, এ মামলা আসামীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৪০৩, ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭০, ৪৭১ ও ৪৭২ আইনের অধীনে মামলা করা হয়েছে। এ বিধি বিধান অনুযায়ী পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ মামলা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ অনুযায়ী দায়ের মামলা এ ট্রাইব্যুনালে পরিচালত হবে, এর বাইরে নয়।
এ মামলায় আসামিরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান (সদস্য নম্বর ৫৯) টি. মাশফু অ্যান্ড কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী তানলিন মাশফু ও হাওলাদার মোহাম্মদ আব্দুল বারিক। তবে তানলিন মাশফু জামিনে থাকলেও হাওলাদার মোহাম্মদ আব্দুল বারিক পলাতক রয়েছেন।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর আসামি তানলিন মাশফু ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে জামিন নেন।
জানা গেছে, ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের কাছে জাল শেয়ার, সার্টিফিকেট ও বরাদ্দপত্র বিক্রির অভিযোগে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মামলাটি ২০০০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় দায়ের করা হয়। কিন্তু মামলাটির বিচার কার্যক্রম দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকার পর অবশেষে তা পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশ অনুযায়ী আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না হওয়ায় তা ফেরত পাঠানো হয়েছে।
পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গত ২৭ আগস্ট মামলাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়েছে। ওই দিন মহানগর দায়রা জজ আদালতের জারিকারক মোহাম্মদ খোরশেদ এ মামলার যাবতীয় প্রয়োজনীয় নথিপত্র পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জমা দেন।
জানা গেছে, পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ মামলা অন্তর্ভুক্তির ফলে নতুন করে নম্বর সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটির নম্বর দেওয়া হয়েছে ২০/২০১৫।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, টি. মাশফু অ্যান্ড কোম্পানি এর সত্ত্বাধিকারী তানলিন মাশফু। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির জাল শেয়ার লেনদেন করতেন। ১৯৯৮ সালে তানলিন মাশফু গালফ ফুড লিমিটেডের ১০০টি ও কনফিডেন্স সিমেন্টের ২৪০টি জাল শেয়ার লেনদেন করেন। ১৯৯৯ সালে সিনোবাংলা ইন্ডস্ট্রিজের ১ লাখ ২৫ হাজার ও শাইনপুকুর হোল্ডিংসের ৬ হাজার ৬০০টি শেয়ার লেনদেন করেছেন। এর মধ্যে তিনি শাইনপুকুর হোল্ডিংস ও সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের জাল শেয়ারগুলো মনির আহমেদের পক্ষে বিক্রি করেছিলেন। এ ছাড়া কনফিডেন্স সিমেন্টের জাল শেয়ার শহিদুল ইসলামের পক্ষে বিক্রি করেছিলেন। তবে এ লক্ষ্যে বিএসইসি’র গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করেও মনির আহমেদকে খুঁজে পায়নি। একই সঙ্গে তানলি মাশফু তদন্ত কমিটিকে গালফ ফুডের জাল শেয়ার বিক্রেতার নাম তাৎক্ষণিক দেখাতে ব্যার্থ হয়।
গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর তানলিন মাশফুর অফিস পরিদর্শন করে। ওই সময় তার অফিস থেকে শাইনপুকুর হোল্ডিংসের ৯১টি বতিল করা জাল সার্টিফিকেট জব্দ করে তদন্ত কমিটি। এ সময় কমিটি দেখতে পায় ৯১টি জাল শেয়ারের মধ্যে ৯০টি ফার ইস্ট লিমিটেডের (সোমারস নোমিনি) নামে ইস্যু করা স্ক্রিপ (স্ক্রিপ নম্বর- ১৪৯৪৭১)। যা ১৯৯৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাজন করে দেখানো হয়েছে।
একই সঙ্গে শাইনপুকুর হোল্ডিংসের অফিস পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি দেখতে পায়, ১৪৯৪৭১ নম্বর স্ক্রিপটি কোনো বৈধ সার্টিফিকেট নয়। কারণ ওই নম্বর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ইস্যু করেনি।
এছাড়া তদন্তকালে বিভিন্ন কোম্পানির বেশ কিছু জাল শেয়ার, বরাদ্দপত্র এবং জাল ফরম-১১৭ জব্দ করেছে তদন্ত কমিটি। এসব জাল শেয়ার টি. মাশফু অ্যান্ড কোম্পানির মাধ্যমে ডিএসইর ক্লিয়ারিং হাউসে জমা পড়েছিল। এর মধ্যে শাইনপুকুর হোল্ডিংসের মোট ২৮টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০০টি। আজিজ পাইপসের মোট ১৫টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ৭৫টি। গালফ ফুডসের মোট ৭টি বরাদ্দপত্র রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ৩৫০টি। এটলাস বাংলাদেশের মোট ১টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ৫০টি। কনফিডেন্স সিমেন্টের মোট ১২টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ২৪০টি। মুন্নু ফেব্রিক্সের মোট ১টি সার্টিফিকেট রয়েছে, যার শেয়ার সংখ্যা ছিল ৫০টি।
এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে তানলিন মাশফু ও টি. মাশফু কোম্পানি যোগসাজসে জাল শেয়ার লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা অবৈধ কার্যকলাপ করে উভয়ই অসৎভাবে লাভবান হয়েছেন এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৪০৩, ৪০৬, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭০, ৪৭১ ও ৪৭২ আইনের অধীনে মামলা দায়ের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
পরবর্তী সময়ে ২০০০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেন বিএসইসি’র তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ার কবির ভূইয়া।
এদিকে মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি মতিঝিল থানায় দায়ের করার পর পরবর্তী সময়ে তা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্থানান্তরিত হয়। এর পর চলতি বছরের জুন মাসে তা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে এ মামলার সকল আসামী জামিনে আছেন।