খোলা বাজার২৪,রবিবার,৪ অক্টোবর ২০১৫।। পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, সুন্দরবনের আশপাশে থাকা সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আস্থায় এনে বাঘ রক্ষা করতে হবে। এটি না হলে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের পক্ষে সেখানে কাজ করা কঠিন। রবিবার আগারগাঁও বন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা, শিকারী প্রাণী ও আবাসস্থল পরিবীক্ষণ’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বন বিভাগ বাঘ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও এ কাজে বন বিভাগকে সহায়তা করছে। কিন্তু আমাদেরকে আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, অনেক আগে থেকে বাঘ রক্ষায় কাজ চলছে। নানা উদ্যোগও আছে এ কাজে। কিন্তু সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে অনেক সময় সেখানে কাজ করা যায় না। এজন্য তাদেরকে আস্থায় আনতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় দাতাদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশীয় সম্পদের পাশাপাশি দাতাদের অর্থ দিয়ে আমরা বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বন্যপ্রাণী রক্ষার বিষয়টি বৈশ্বিক সমস্যা। কোন দেশ বা সংস্থার পক্ষে এককভাবে এ কাজটি করা সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বন্যপ্রাণী নানা সমস্যায় রয়েছে। আমাদের এ বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহ্মেদ বলেন, বাঘ কেন কমে যাচ্ছে এর কারণ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। বাঘ রক্ষায় তিনি স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার তাগিদ দেন।
প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ ইউনুছ আলী বলেন, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে সুন্দরবনের ওপর সাধারণ মানুষের নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে।
আইইউসিএন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংখ্যায় কমে গেলেও একক ঘনত্বের দিক থেকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা অনেক বেশি। এটি রক্ষায় আমাদের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বর্তমানে যে পরিমাণ বাঘ রয়েছে তা যেন আর না কমে যায়।
ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার সিনিয়র প্রফেসর ড. ওয়াই. ভি. ঝালা বলেন, অন্য প্রজাতির বাঘ বাড়ানো গেলেও সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাইরে থেকে আনা সম্ভব নয়। এজন্য এখনই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এখানে বাঘের সংখ্যা আর না কমে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত যৌথভাবে যে জরিপ কাজ পরিচালনা করেছে তাতে সুন্দরবনের ৬০ শতাংশ এলাকা কাভার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এর চলাচল অবাধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপ-প্রধান বন সংরক্ষক আকবর হোসেন, ইউএসএইড বাংলাদেশ এর উপপ্রধান ক্যাথি ডি ওয়াসেলা, বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে প্রমুখ। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী বাঘ শুমারি রিপোর্টের মোড়ক উম্মোচন করেন।