Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ৪ অক্টোবর ২০১৫
64ময়না তদন্তের পর জাপানি নাগরিক কুনিও হোশির লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলার পাশাপাশি মোট ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঢাকায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের ছয় দিনের মধ্যে শনিবার রংপুরে খুন হন জাপানি কুনিও। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস এই দুটি হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে দাবি উঠলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করা হচ্ছে। ৬৬ বছর বয়সী কুনিও রংপুরের একটি বাংলাদেশি পরিবারের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে কাউনিয়া উপজেলায় একটি জমি ইজারা নিয়ে ঘাসের খামার করেছিলেন। এই স্থানে হামলার শিকার হন হোসি কনিও ওই খামারে যাওয়ার পথে শনিবার সকালে মোটর সাইকেল আরোহী মুখোশধারী তিনজন এই জাপানিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। রোববার সকালে কুনিওর ময়না তদন্ত হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ্ই বিদেশির ময়না তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের প্রধান, রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কুনিওকে খুব কাছ থেকে তিনটি গুলি করা হয়। “খুব কাছ থেকে গুলিগুলো করা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।” বিস্তারিত জানতে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসার জন্য অপেক্ষা করতে বলেন তিনি। ময়না তদন্তের পর কুনিওর মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম বরকত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “এই জাপানি নাগরিকের লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ কারণে লাশ হিমঘরে রাখা হয়েছে।” ময়না তদন্তের আগে ঢাকার জাপানি দূতাবাসের ফার্স্ট সিকিউরিটি অফিসার কিন জুর এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল হাসপাতালে যায়। পরে তারা কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নে আলটারি কাচু গ্রামেও যান। যেখানে খামারে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হয়েছিলেন কুনিও। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এই পর্যন্ত ছয়জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। “তাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে রেখেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে,” বলেন তিনি। শনিবার হত্যাকাণ্ডের পরপরই কুনিওর রিকশাচালক মোন্নাফ আলী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলুটারি গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে মুরাদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। হোশি কুনিও কুনিও রংপুর শহরে যার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই জাকারিয়া বালা ও তার শ্যালক হীরাকেও পরে আটকের কথা পুলিশ জানায়। জাকারিয়ার দুই ভাই জাপান থাকেন। তাদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রেই কুনিওর বাংলাদেশে আসা। গত মে মাসে বাংলাদেশে আসার পর রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ায় জাকারিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন তিনি। মোন্নাফের রিকশায় করে প্রতিদিন কুনিওর সঙ্গে হীরাও যেতেন। তবে শনিবার তিনি যাননি। হীরা বলছেন, জরুরি কাজে আটকা পড়ায় তিনি সেদিন কুনিওর সঙ্গী হননি। আটক ছয়জনের মধ্যে রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদুন নবী খান বিপ্লব এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকুও রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ সবার নাম প্রকাশ করেনি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার মধ্যরাতের পর পুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা হয় বলে কাউনিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম জানিয়েছেন। আটক কাউকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি। রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, “তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের আসামি করা হবে।” এদিকে সকাল থেকেই আলুটারি কাচু গ্রামে ঘটনাস্থলে সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে। আলামত যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য ঘটনাস্থল পুলিশ টেপ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।