খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৫, মনপুরা, ভোলা : ভোলার মনপুরার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কলাতলীর চর ও চর নিজামের ১৩২ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষার কেন্দ্র না থাকায় তাদের পরীক্ষা নিয়ে এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে না পারলে কলিতেই ঝরে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে এই বছর থেকে কলাতলীর চর ও চর নিজামে ভিন্ন কেন্দ্র স্থাপন করে সকল পরীক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহন নিশ্চিত করার অনুরোধ করেছেন অভিভাবক এবং সচেতন মহল।
ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। আর এই উপজেলার মূল ভূ-খন্ড থেকেও বিচ্ছিন্ন অন্য দুইটি স্থান চর নিজাম এবং কলাতলীর চর। এই দুই চরে বর্তমানে প্রায় ৩০ সহ¯্রাধিক মানুষ বসবাস করছে। চর দুইটির মধ্যে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কলাতলীর চরের জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি মূল ভূ-খন্ডের ভাঙ্গনের কারনের ৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এরই মধ্যে কলাতলীর চরে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ১৫০০ প্রকল্পের অধিনে আরও ১টি স্কুল স্থাপন করেছে সরকার। প্রথম দিকে এসব স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম থাকলেও যতই দিন যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব স্কুলে এখন শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। বছরের পুরো সময় স্কুলের সকল কার্যক্রম ঠিক-ঠাক পরিচালিত হলেও সমাপনি পরীক্ষার সময় আসলে দেখা দেয় বড় ধরনের বিপত্তি। পরীক্ষার সময় যত ঘনিয়ে আসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে যায়। কারন উল্লেখিত চরে ৪টি স্কুল থাকলেও সমাপনি পরীক্ষার জন্য কোন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি। ফলে পরীক্ষার সময় এসব কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা রাক্ষুসে মেঘনা পাড়ি দিয়ে মূল ভূ-খন্ডের পরিক্ষা কেন্দ্রে এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হয়। এতে করে কঠিন ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাইকে। এখানে পরীক্ষা দিতে এসে এত শিক্ষার্থীর বেশ কয়েক দিনের থাকা-খাওয়ার যেমন কষ্ঠ হয় ঠিক তেমনি পড়াশুনারও ব্যাঘাত ঘটে মারাত্মকভাবে। গত বছর কলাতলীর চরের ৩টি স্কুল থেকে ৯৯ জন শিক্ষার্থী সমাপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে এসে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ১৫০০ প্রকল্পের অধিনে স্থাপিত স্কুলটিতে এখনো পঞ্চম শ্রেনী চালু না হওয়ায় অপর ৩টি স্কুলের মধ্যে এবার মনপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৩৮ জন, কলাতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪৩ জন এবং মাছুয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৯ জন শিক্ষার্থী সমাপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে। আগামী ২২ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষা শুরু হবে, চলবে ৬ দিন। এখনো পর্যন্ত কলাতলীর চরে কোন কেন্দ্র স্থাপন না করায় এবারও সকল পরীক্ষার্থীকে মেঘনা পাড়ি দিয়ে এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে। কয়েক মাস আগে মনপুরা-কলাতলীর চরের মধ্যবর্তী স্থানে একটি যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৯ যাত্রীর মৃত্যূ হয়েছে। এই ঘটনায় এবার পরীক্ষার্থীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। এদিকে মূল ভূ-খন্ডের দক্ষিনে সাগর মোহনায় অবস্থিত চর নিজামের শিক্ষার্থীরাও প্রতি বছর মেঘনা পাড়ি দিয়ে এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। গত বছর চরনিজাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৫ জন সমাপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলেও এবার পরীক্ষার্থী ২২ জন।
এব্যাপারে কলাতলীর চরে অবস্থিত মনপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, পরীক্ষার সময়ে মেঘনা পাড়ি দিয়ে এতগুলো ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তাছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে সারাক্ষন টেনশনে থাকতে হয়। তাই এখানে একটি কেন্দ্র থাকা খুবই জরুরী। কেন্দ্রের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থানে দরখাস্ত দিয়েছি। এজন্য সকলের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
এব্যপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কলাতলীর চরে আরেকটি কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় নির্দেশ দিলে এবারই ঐ চরের পরীক্ষার্থীরা সেখানে পরীক্ষা দিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ হোসেন খাঁন বলেন, কলাতলীর চরে কেন্দ্র স্থাপনে সুবিধা যেমন আছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। তারপরও সবকিছু চিন্তা করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিবেন বলে তিনি জানান।