খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৫ : বাম পায়ে গোলার মতো এক শটে গোল। দৌড়াতে দৌড়াতে ডান হাতকে মুঠোবদ্ধ করে অনামিকার আংটিতে হালকা একটি চুমু দিয়ে সতীর্থদের আলিঙ্গনে ধরা দিলেন গোলদাতা। ২১ বছর ধরে এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে অসংখ্যবার। রাউল গঞ্জালেসের গোল উদ্যাপনের অনন্য এই দৃশ্যটি মনে গেঁথে রাখুন। কারণ নভেম্বরের পর থেকে আর দেখা যাবে না এই দৃশ্য। এর পরই যে বুট জোড়া তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাউল। নিউইয়র্ক কসমোসের হয়ে বর্তমান মৌসুম খেলেই অবসরে চলে যাবেন ৩৮ বছর বয়সী রাউল। গত পাঁচ বছরে কাতারের আল সাদ এবং জার্মান ক্লাব শালকে ০৪ এর জার্সিতেও তাঁকে খেলতে দেখা গেছে। কিন্তু তাঁকে সবাই মনে রাখবে রিয়াল মাদ্রিদের রাউল হিসেবেই। পুরো ১৬টি বছর খেলেছেন ‘লস ব্লাঙ্কোসের’ হয়ে। এই দীর্ঘ সময়ে রিয়ালের ঘরের ছেলে হয়ে গিয়েছিলেন। রাউল এবং রিয়াল যেন সমার্থক শব্দ হয়ে গিয়েছিল। ভক্তদের কাছে তো রাউলের নামই হয়ে গিয়েছিল ‘রাউল মাদ্রিদ’। রিয়ালের ইতিহাসে অনেক রথী মহারথীই খেলেছেন কিন্তু তাঁরা কেউই রিয়াল ভক্তদের কাছে এতটা জনপ্রিয় হতে পারেননি। রিয়ালের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটি এই স্প্যানিশেরই ছিল। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছে মাত্র কিছুদিন আগেই সে রেকর্ডটি হাতছাড়া হয়েছে তাঁর। গোলের রেকর্ডটি হাতছাড়া হলেও রিয়ালের জার্সিতে সবচেয়ে বেশিবার মাঠে নামার রেকর্ডটি এখনো রাউলেরই। নিজের সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন রাউল। ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত ৪৩০ গোল তাঁর। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৭১টি গোল করে অনেক দিন সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটিও ছিল তাঁর। সেই রেকর্ড মেসি এবং রোনালদো টপকে গেলেও একটি ব্যাপারে রাউলকে ছাড়াতে পারেননি দুজনের কেউই। চ্যাম্পিয়নস লিগের ৭১টি গোলের একটিতেও যে পেনাল্টির সহযোগিতা নেননি তিনি। কিন্তু শুধু গোল করায় নয়, সতীর্থকে গোল করানোয় কিংবা দলের খেলা বানিয়ে দেওয়ার কাজটিও করতেন নিষ্ঠার সঙ্গেই। দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার পুরস্কারও পেয়েছেন রিয়ালের হয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ছয়টি লিগ শিরোপা জিতে। আর পুরোপুরি নিপাট ভদ্রলোক রাউলের আরেকটি রেকর্ডও এখন প্রায় অবিশ্বাস্য ঠেকবে অনেকের কাছেই। ২১ বছরের ক্যারিয়ারে কখনো লাল কার্ড দেখেননি এই মহা তারকা। খেলোয়াড়ি চেতনার এত বড় উদাহরণ কেবল রাউলের মতো খেলোয়াড়দের পক্ষেই দেখানো সম্ভব। রাউলের অভাব অনুভব করবে ফুটবল। বিদায় ‘রাউল মাদ্রিদ’।