খোলা বাজার২৪, রবিবার , ১৮ অক্টোবর ২০১৫ : যতীনের চোখে বিস্ময়। আরে এত কাছ থেকে প্রথমবার বিমান দেখার অভিজ্ঞতা বলে কথা। তার ছোট্ট ঝুপড়ির একফালি জানালা থেকে মাঝে মাঝে নীল আকাশে উড়তে দেখেছে অনেকবার। কাছ থেকে যে সেটা এত বড় লাগে সেটা কে জানত! সিড়ি বেয়ে যখন সত্যিই বিমানের মধ্যে ঢুকল, তখন তো উচ্ছ্বাসের সীমা নেই। কী সুন্দর। বেরিয়ে এসে হাসিমুখে যতীন বলল, ‘’আমি প্রথমবার প্লেনের ভেতরে ঢুকলাম। এত কাছ থেকে দেখলাম!’’ আনন্দ তার গলার স্বর থেকে যেন চুইয়ে পড়ছিল। যতীনের মতো ভারতের দিল্লির শহরতলিতে থাকা প্রচুর দরিদ্র শিশুরা এমনভাবেই জীবনে প্রথমবার প্লেনে ওঠার স্বাদ পায়, রোজই। যদিও প্লেনটি কোথাও কোনোদিন উড়বে না, তবু প্লেন তো! ছোট চোখের বড় বড় স্বপ্নে এই দাঁড়িয়ে থাকা বিমানই পাড়ি দেয় তেপান্তরের মাঠ কিংবা ওয়ান্ডারল্যান্ডে। সৌজন্যে বাহাদুর চাঁদ গুপ্তা। হরিয়ানার ছোট্ট গ্রাম কাসানা থেকে এয়ারক্রাফ্ট ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পর দেশে-বিদেশে বহু বিমানে ওঠার, ঘোরার সুযোগ হয়েছে তাঁর। গ্রামে ফিরলে সকলের প্রশ্ন থাকত, প্লেনের ভেতরটা কেমন? যেন বাহাদুরের চোখ থেকেই একবার প্লেনের মধ্যে ভ্রমণ করে ফেলতেন সকলে। সেই থেকেই তাঁর মনের ইচ্ছে ছিল, এমন কিছু একটা করবেন যাতে দেশের কোটি কোটি মানুষ, যাঁরা কখনও প্লেনে ওঠার সুযোগ হয়তো পাবেন না, তাঁরা খুব কাছ থেকে অন্তত দেখার সুযোগ পাবেন। অবসর নেওয়ার পর ২০০৩ সালে জমানো টাকা এবং গ্রামের কিছু জমি বিক্রি করে একটি পুরনো অ৩০০ বিমান কেনেন তিনি। দিল্লির অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দরের কাছের একটি প্লটে সেটি পার্ক করে রেখেছেন বাহাদুর চাঁদ। রোজ সেখানে বিমানের ভিতরটা কেমন তা দেখার লাইন পড়ে। টিকিট ৬০ টাকা। বিমান ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে কী হবে, বিমানে ওঠার আগে এর জন্য একটি বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়, ভেতরে বসার পর তাঁদের সুরক্ষা-সংক্রান্ত নির্দেশ অ্যাক্টিং করে দেখানো হয়। এমনকী কিছু ইন-ফ্লাইট খাবারও থাকে এর সঙ্গে। কচিকাঁচাদের আবদারে ককপিটের ভেতরটাও ঘুরিয়ে দেখান বাহাদুর। তবে সকলেই যে টিকিট কেটে বিমানে ওঠেন তেমনটা নয়। যতীনের মতো প্রচুর দরিদ্র বাচ্চাদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সফর করান তিনি।