খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৫: ম্যাচের আগে সিএসকেএ মস্কো সমর্থকেরা কোচ লিওনিদ স্লাৎস্কির প্রশংসায় একটা ব্যানার টানিয়েছিলেন। যাতে লেখা ছিল ‘দ্য এক্সরসিস্ট।’ ক্লাবের পাশাপাশি রাশিয়ান জাতীয় দলেরও দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্লাৎস্কি। বাছাইপর্বে খাবি খাওয়া রাশিয়াকে প্রতি ম্যাচেই জিতিয়ে ইউরোর মূল পর্বে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে কাল মস্কোর খিমকি অ্যারেনায় ম্যাচ শেষে নিজের কাঁধ থেকে ভূত নেমে যাওয়ার স্বস্তি পেয়েছেন ইউনাইটেড স্ট্রাইকার অ্যান্থনি মার্শিয়াল। প্রথমার্ধে নিজেদের পেনাল্টি বক্সে বলে হাত লাগিয়ে মস্কোকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এই মার্শিয়াল। তার প্রায়শ্চিত্ত করলেন ৫০ মিনিট পর চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের প্রথম গোল করে। দুই অর্ধে দুই বিপরীতমুখী ‘অবদানে’ ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটির শিরোনাম হয়ে রইলেন মার্শিয়াল। অন্যদিকে সেভিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্র“ইনের শেষ মুহূর্তের গোলে জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। খিমকি অ্যারেনায় ম্যাচের ১৫ মিনিটে মস্কোর রাইট ব্যাক মারিও ফার্নান্দেজ ইউনাইটেডের ডি-বক্সের ভেতরে এসে ক্রস করেছিলেন মার্শিয়ালের মাথার ওপর দিয়ে। সেটি সেভও করলেন গোলরক্ষক ডেভিড ডি গেয়া। অথচ রেফারি বাঁশি বাজালেন, তাঁর আঙুল পেনাল্টি স্পটের দিকে! ফার্নান্দেজের ক্রসের সময় মার্শিয়াল হাত ওপরের দিকে তুলেছিলেন, ওতেই বলটা লেগে যায় তাঁর হাতে। কাজটা তিনি করেছেন বোকার মতোই। এ জন্য ম্যাচ শেষে বকুনিও শুনতে হলো কোচ লুই ফন গালের কাছ থেকে, ‘ওরা একটা উপহার পেয়েছে অ্যান্থনি মার্শিয়ালের কাছ থেকে। মার্শিয়ালও মানুষ, প্রতিক্রিয়া দেখানোটা স্বাভাবিকই। তবে ওর প্রতিক্রিয়াটা ছিল বোকার মতো।’ মার্শিয়ালই শেষ অবধি ত্রাণকর্তা ইউনাইটেডের। ছবি: এএফপি।মার্শিয়ালের উপহারটা অবশ্য নিজের করে নিতে পারেননি মস্কো ফরোয়ার্ড রোমান এরেমেঙ্কো। তার শটটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ডি গেয়া। কিন্তু মস্কোর শূন্যের নিচে তাপমাত্রার জন্যই হয়তো, ইউনাইটেড ডিফেন্ডাররা যেন বরফ হয়ে জমে গিয়েছিলেন। কেউই এগিয়ে এসে ফিরতি বলটা ক্লিয়ার করতে পারলেন না। উল্টো মস্কো স্ট্রাইকার সেইডু দুম্বিয়াই তা সবার আগে জড়িয়ে দিলেন জালে। এই সময় ডি গেয়ার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। ‘স্টুপিড’ মার্শিয়ালই ইউনাইটেডকে ফেরালেন ম্যাচের ৬৫ মিনিটে। আরেক অ্যান্থনি, অ্যান্থনি ভ্যালেন্সিয়ার ক্রসটা ডাইভিং হেডে জড়িয়ে দিলেন মস্কোর জালে। তবে গোলটাতে শুধু এ দুজনের কথা বললে হয়তো ইউনাইটেডের বাকি খেলোয়াড়েরা একটু মনোক্ষুণœ হতে পারেন। ভ্যালেন্সিয়ার ক্রসের আগে যে বলটি আরও নয়বার পা বদল হয়েছে। গোলটির আগে ডি গেয়ার কাছ থেকে মার্শিয়াল পর্যন্ত পুরো মাঠ জুড়ে টানা দশটি পাস খেলেছে ইউনাইটেড। এ জয়ে গ্রুপে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে গেল ইউনাইটেড। প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচে আইন্দহোফেনের কাছে হারের পর কালকের ড্র হয়তো কিছুটা স্বস্তিই দেবে ফন গালকে। স্বস্তি পেয়েছে আগামী সপ্তাহেই ম্যানচেস্টার ডার্বিতে ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ সিটিও। ঘরের মাঠে সেভিয়ার বিপক্ষে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটা প্রথমার্ধে বেশ জমে উঠেছিল। তবে ফলটা প্রথম পেল সেভিয়াই। ৩০ মিনিটে ইয়েভেন কনোপ্লিয়াঙ্কার গোলে এগিয়ে যায় গত মৌসুমের ইউরোপা লিগ জয়ীরা। সিটি অবশ্য সমতায় ফিরেছে ছয় মিনিট পরই। রাহিম স্টার্লিংয়ের শটটা সেভিয়া গোলরক্ষক সার্জিও রিকো ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু উইলফ্রায়েড বোনির ফিরতি শটটা ডিফেন্ডার আদিল রামির গায়ে লেগে জালে ঢোকার সময় আর কিছু করার ছিল না তাঁর। প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধটা বেশ ম্যাড়মেড়ে গেছে। মনে হচ্ছিল ড্র-ই হতে যাচ্ছে ম্যাচটা। তা হতে দিলেন না এই মৌসুমে প্রায় ৫৪ মিলিয়ন পাউন্ডে সিটিতে যোগ দেওয়া মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্র“ইন। ৯০ মিনিটের সময় সেভিয়ার বক্সের ডান পাশে বল পেলেন ইয়াইয়া তোরের কাছ থেকে। দুই ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে বাঁ পায়ে শট নিলেন, সেটি ডানপাশের বার ঘেঁষে জড়িয়ে গেল জালে। পেলেগ্রিনি এখন অবশ্য দাবি করতেই পারেন, ‘জানতাম এমন হবে।’ এ রকম পরিস্থিতিতে এমন গোলের জন্যই তো ৫৪ মিলিয়ন খসিয়েছিল সিটি। সূত্র: এএফপি।