Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

30খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৫ : যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগির তা প্রকাশ করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে। রায়টি প্রকাশ হলে সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড চেয়ে রিভিউ করার ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে, দণ্ড কমাতে সাঈদীর পক্ষ থেকেও রিভিউ করা হবে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দণ্ড হলেও সাঈদীকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। তাই আমরা রিভিউ করে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করব। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আমরা রিভিউ আবেদন করব।’
অন্যদিকে, সাঈদীর ছেলে মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, ‘রায় প্রকাশের পর অভিযোগ থেকে খালাস চেয়ে আমরা রিভিউ আবেদন করব।’
এর আগে ট্রাইব্যুনালে সাঈদীকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়ার পর সারা দেশে পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক লোক নিহত হয়।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। আপিল মামলার সংক্ষিপ্ত ওই রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেত্বত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। অন্য চার বিচারপতি হচ্ছেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
দুই বিচারপতি অবসরে চলে যাওয়ায় তাঁরা এ মামলার রিভিউ শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন না। তাই নতুন করে রিভিউ শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ করতে হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যে বিচারপতি আপিল বিভাগের রায় দেন, তিনি রিভিউ আবেদনের শুনানি করেন। কিন্তু দুই বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর তাঁরা রিভিউ শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন না। নতুন করে পাঁচজন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করতে হবে।’
রায় থেকে জানা যায়, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এর মধ্যে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেন। এ ছাড়া বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অন্যদিকে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সে রায়ে তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণের আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দুটি অপরাধে, র্অথাৎ ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রমাণিত অন্য ছয়টি, অর্থাৎ ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে আলাদাভাবে কোনো সাজা দেননি ট্রাইব্যুনাল। তাঁর বিরুদ্ধে মোট ২০টি অভিযোগ আনেন ট্রাইব্যুনাল।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল-১-এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যুকারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে, অর্থাৎ ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু এবং একটিতে, অর্থাৎ ১০ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন, একটিতে অর্থাৎ ৮ নম্বর অভিযোগে ১২ বছর ও একটিতে অর্থাৎ ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেয়েছেন সাঈদী।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি মামলায় সাঈদীকে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ১১ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে ১৪ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শেষে ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার কার্যক্রম শুরু করা হয়। সূত্র: এনটিভি অনলাইন