খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৫: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাস ও যাত্রীবাহী অন্যান্য পরিবহনে এখনও ‘স্বৈরাচারী কায়দায়’ ভাড়া আদায় হচ্ছে। মালিকদের সঙ্গে আলাপ করেই যৌক্তিকভাবে বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু তারপরও স্বৈরাচারী কায়দায় বাস ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর ব্র্যাকের আয়োজনে ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইনগত উদ্যোগ’ শীর্ষক নীতিমালা বিষয়ক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করার সময় যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন ৯৭ শতাংশ বাস অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বাসগুলোতে। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে মালিকদের উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই আইনের কথা বলবেন, আইনের অংশীদার হবেন, আবার নিজেরাই আইন লঙ্ঘন করবেন এটা হয় না।’
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, সংস্থাটির তথ্যমতে বছরে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ হাজার নিহত হয়। এ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিদিন দেশে গড়ে প্রায় ৫৯ জন করে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ হিসেবকে তিনি কল্পনাপ্রসূত বলে অভিহিত করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী প্রস্তাবিত প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনের ব্যাপারে সুশীল সমাজের মতামত চান। তিনি বলেন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এটি নিয়ে আলোচনা হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরতে তিনি অনুরোধ জানান।
সংলাপের মূল প্রবন্ধে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান প্রস্তাবিত আইনটি বিশ্লেষণ করে বলেন, প্রস্তাবিত আইন যানবাহন ব্যবস্থাপনা ও সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে যাত্রীদের সিট বেল্ট বাধা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, চালক শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়া ও তাদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা, পথচারীদের জন্য কিছু বিধি-নিষেধ আনা ও টার্মিনালগুলোর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও নির্দেশনা আছে।
তিনি বলেন, আইনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকার দরকার আছে। যেমন সড়ক মেরামত, দুর্ঘটনার তথ্য রাখার প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ ও তদন্ত, সড়কের পাশের জায়গাগুলো পথচারীদের জন্য ফাঁকা রাখা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান থাকা।
সংলাপে অংশ নেওয়া অনেকেই অভিযোগ করেন, প্রস্তাবিত আইনটি সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ বাস ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার বলেন, তাদের অন্ধকারে রেখে কর্তৃপক্ষ আইনটি সংশোধন করতে যাচ্ছে। আইনটি কার্যকর করতে হলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মালিকও শ্রমিকদের বিষয়টি নিয়ে আলাপ হওয়া প্রয়োজন।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার এবং উদ্ধার দল রাখার প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের পরিচালক আসিফ সালেহ্। এতে বক্তব্য দেন ব্র্যাকের প্রশাসন কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন, অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচির পরিচালক কেএএম মোর্শেদ, সাংবাদিক আবেদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ মুসা প্রমুখ।