খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৫: যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত ৯০ শতাংশ কোম্পানিই নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী জমা দেয় না। আরজেএসসি এ কারণে কোম্পানিগুলোকে আবার কিছু বলেও না।
‘অবজারভেন্স অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড কোডস: অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংক ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস বাংলাদেশের (আইসিএবি) যৌথ আয়োজনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রোববার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল মান্নান এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের অ্যাক্টিং ডিরেক্টর ক্রিস্টিন ই. কিমস, প্র্যাকটিস ডিরেক্টর সামিয়া মাসডাক এবং আইসিএবির সভাপতি মসিহ্ মালিক চৌধুরী। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট সুরাইয়া জান্নাত প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত আরজেএসসিতে ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৪২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৮ হাজার ২৬৩টিই কোম্পানি। বছরে ৮ থেকে ১০ হাজার কোম্পানি এ সংস্থা থেকে নিবন্ধন নেয়। সরকারি-বেসরকারি সব কোম্পানিকেই আরজেএসসিতে প্রতিবছর নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী জমা দিতে হয়। কিন্তু ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই তা দেয় না। আবার জমা পড়া প্রতিবেদনগুলো আইন অনুযায়ী তৈরি হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের ক্ষমতাও নেই সংস্থাটির। আরজেএসসি জানেও না যে নিবন্ধন নেওয়ার পর কতটি কোম্পানি চালু রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৩ হাজার ২৩২টি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন আইনের আওতায় আরজেএসসি নিবন্ধন নিয়েছে। এগুলোর জন্য কোনো আর্থিক প্রতিবেদন কাঠামো নেই। নিবন্ধন দিলেও আরজেএসসি এদের নজরদারি করতে পারে না। জনবল নিয়োগসহ সংস্থাটির সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন জরুরি বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়।
আরজেএসসিসহ অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং আইসিএবির সংস্থার আর্থিক ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের চিত্রও তুলে ধরা হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। বলা হয়, কিছু ইতিবাচক দিক থাকলেও হতাশার চিত্র রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক যুগে অর্জনের মধ্যে রয়েছে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন পাস এবং বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস), ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডস অন অডিটিং (আইএসএ) চালু। ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের শিল্পও এখন আইএফআরএস অনুসরণ করছে। আইসিএবির উদ্যোগে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ (সিএ) হতে নারীরা এখন এগিয়ে আসছে। গত তিন বছরে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশই নারী। বিএসইসি শেয়ারবাজারে ২০১০ সালের ধসের পর নজরদারি বাড়িয়েছে, বিশেষ নিরীক্ষায় জোর দিয়েছে এবং করপোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
আর বেসরকারি বিনিয়োগের প্রধান উৎস ব্যাংক খাত হলেও রাষ্ট্র খাতের কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর সুশাসন ব্যর্থতার কারণে এগুলোর প্রতি মানুষের আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।