Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

18খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৫ : আজ ২৮ অক্টোবর সোমবার বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী। ১৯৭১ সনের এ দিনে সম্মুখযুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে পাক-হানাদার বাহিনীর বুলেটে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই চা-বাগানের ভারতীয় সীমান্ত এলাকার হামিদুর রহমান শাহাদাৎবরণ করেন।
শাহাদাৎবরণের ৪৪ বছর কেটে গেলেও একাত্তরের এই বীর সেনানীর স্মৃতিসৌধ চত্বরটি পড়ে আছে অযতœ-অবহেলায়। যেখানে তিনি নিহত হন সে জায়গাটিতে একটি স্মৃতিচিহ্ন ছাড়া আর কিছুই নেই; নেই কোনো সাইনবোর্ডও। অথচ পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যবহৃত বাংকারটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের মধ্যে ৪ নং সেক্টর ছিল মেজর জেনারেল সি আর দত্তের অধীনে। সেটির একটি সাব-সেক্টর হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর। সেই সেক্টর থেকে ২৪ অক্টোবর শেষ রাত হতে ২৮ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে ইপিআর ফাঁড়ির সামনে থাকা পাকসেনাদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলে মুক্তিবাহিনীর। ধলই সীমান্তে আক্রমণকারী মুক্তিবাহিনীর প্লাটুন অ্যাসল্ট অফিসার ছিলেন মেজর (অব.) কাইয়ুম চৌধুরী। আর সিপাহী হামিদুর রহমান ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরীর রানার। চারদিকে চা-বাগান, মাঝখানে ধলই সীমান্ত চৌকি। চৌকি থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে ত্রিপুরার কমলপুর সাবসেক্টর ক্যাম্প থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে ২৮ অক্টোবর ভোরে কাইয়ুমের নেতৃত্বে একটি দল পাকসেনাদের ওপর চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়।
ব্যাপক গোলাবর্ষণে পাকসেনাদের ক্যাম্পে ধরে যায় আগুন। প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ ও পাকবাহিনীর পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য হামিদুর রহমান সীমান্ত চৌকি দখলের উদ্দেশ্যে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে হালকা একটি মেশিনগান নিয়ে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে শক্রপক্ষের ৫০ গজের মধ্যে ঢুকে পড়েন। গর্জে উঠে তার মেশিনগান। শক্রদলের অধিনায়কসহ বেশ কয়েকজন সৈন্য এতে প্রাণ হারায়। এমন সময় শক্রপক্ষের একটি বুলেট তার কপালে বিদ্ধ হয়। মুহূর্তেই সামীন্তবর্তী ছড়ার পাড়ে মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়লেন হামিদুর রহমান।
১৯৯২ সালে তৎকালীন বিডিআর বর্তমান বিজিবির উদ্যোগে সর্বপ্রথম ধলই সীমান্ত চৌকির পাশে নির্মাণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সরণী। ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১০ শতাংশ জায়গার ওপর সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগ নির্মাণ করে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিস্তম্ভ। এছাড়া কমলগঞ্জের ভানুগাছ-মাধবপুর সড়কটির নামকরণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান সড়ক হিসেবে।
২০০৭ সালে ধলই বিওপির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বীরশ্রেষ্ট শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান সীমান্ত ফাঁড়ি।
২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে শ্রীমঙ্গস্থ ১৪ বিজিবির সাবেক অধিনায়ক ল্যাফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুল হুদার উদ্যোগে ধলই সীমান্ত চৌকি এলাকায় গড়ে তোলা হয় আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট।
হামিদুর রহমান জীবন বাজি রেখে দুটি ট্যাংক একাই ধ্বংস করে ভারতের সীমানার কাছাকাছি জায়গায় ১৯১২ নং সিমানা পিলারের কাছে গিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। আজ সেখানে শুধুই একটি স্ট্যান্ড দাঁড়িয়ে আছে। এখনো অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থী জায়গাটি দেখতে আসেন। কিন্তু তার স্মৃতিসৌধটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে কোনো কেয়ারটেকার না থাকায় অযতেœ-অবহেলায় পড়ে আছে।
এখানে দর্শনার্থীদের জন্য নেই কোনো বসার ও খাবার জায়গা; নেই টয়লেটের ব্যবস্থা।
স্থানীয় অধিবাসী সুফিয়ান আহমদ বলেন, আগে একজন কেয়ারটেকার ছিল, যার বেতন-ভাতা দিত উপজেলা প্রশাসন। বেশি কিছুদিন আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। এরপর আর কোনো কেয়ারটেকার নিয়োগ করা হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক মিল্টন কুমার দেব বলেন, জাতীয় বীরদের নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তকে তাদের ব্যাপারে বিশদভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন।
স্থানীয় সাংবাদিক মো. শাহিন আহমদ বলেন, চতুর্থ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান শ্রীমঙ্গল উপজেলার ধলই সীমান্তে শাহাদাৎবরণ করেছেন বলে লেখা আছে। আসলে তিনি শ্রীমঙ্গলের ধলই সীমান্তে নয়, কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে মারা যান। এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লেখালেখি করার পরও তা সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারে নজর দেওয়া উচিত। তানাহলে আমাদের সন্তানেরা ভুল ইতিহাস জানবে।
ক্যাপ্টেন (অব.) সাজ্জাদুর রহমান-মুক্তিযোদ্ধা কমলগঞ্জ বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমারে দেশের বাড়িতে অনেক কিছুর নামকরণ করা হলেও যেখানে তিনি শহীদ হয়েছেন সেখানে কিছুই করা হয়নি।