খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৫: রাজধানীর মতিঝিলে ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী মো. রিয়াদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হোটেল মালিক সোহেলকে গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ হোটেল রেস্ট্যুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রিয়াদ হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এই সময়ের মধ্যে গ্রেফতার না হলে আগামী মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে হরতাল, অবরোধ ও ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেয় সংগঠনটি।
এদিকে হোটেলকর্মী রিয়াদ হত্যাকাণ্ডের ধারণ করা সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এ কারণে ঘরোয়া হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেলের বিদেশে পালানো রুখতে পুলিশের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন বিমান, স্থল ও নদী বন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশকে লিখিত নিদের্শনাও পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ব্রেকিংনিউজকে জানান, ‘ঘরোয়া হোটেলের শ্রমিক রিয়াদকে মোবাইল চুরির অপবাদে গুলি করে হত্যার পর ছিনতাই নাটক সাজানো হয়েছে। হোটেলের মালিক সোহেল নিজে তার গাড়িতে উঠিয়ে রিয়াদকে গুলি করে। সোহেলকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা না হলে আগামী মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
তিনি বলেন, শ্রমিকরা মালিকদের টাকা কামিয়ে দেয় আর মালিকরা এ শ্রমিকদের বুকে গুলি করে। হোটেল মালিকরা ধারাবাহিকভাবে মাস্তানি করে যাচ্ছে। তারা শ্রম আইন মানে না। রিয়াদ হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হলে সারাদেশের শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসবে। সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সোহেলকে দ্রুত গ্রেফতার করে করে ফাঁসি দিতে হবে। সোহেল রিয়াদকে হত্যা করে এখনও পলাতক থাকে কী করে? তাহলে সরকার কী করে?
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা জানান, ‘ঘটনার পর থেকেই সোহেলকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে। সোহেল যেন দেশ ত্যাগ না করতে পারেন সেজন্য দেশের সবগুলো বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশকে লিখিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সোহেল বিদেশে পালানোর চেষ্টা করলেও তাকে আটকানো হবে। ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, সোহেলসহ বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের বিষয়ে বন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, রাজধানীর ওয়ারীর মিতালী স্কুল সংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারী রিয়াদকে দেড়হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনসেট চুরির অভিযোগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে গুলি করে হত্যা করে হোটেল মালিক সোহেল। পরে নিহত রিয়াদের বড় ভাই মো. রিপন বাদী হয়ে সোহেলকে প্রধান আসামি করে ৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অন্য আরও তিন-চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলে হোটেলের কর্মচারী জসিমকে গ্রেফতার করা হয়। জসিম বিভিন্নভাবে সোহেলকে সহযোগিতা করেছেন। জসিম পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে সোহেলই রিয়াদকে গুলি করে হত্যা করেছে।
এর আগে বুধবার সকালে হোটেল ম্যানেজার মো. শফিক ও রিয়াদের খালাতো ভাই মাইনউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকেও গুরুত্বপর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জব্দকৃত ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজের বিষয়ে তিনি ওসি বলেন, নির্মাণাধীণ ভবনে স্থাপিত সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়েছে। সোহেল ঘটনাস্থলে পাজেরো গাড়ি নিয়ে এসেছে। এবং কাউকে গাড়িতে তুলছে সেটা দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, ‘বুধবার বিকালে শান্তিনগরের নিজ বাসা থেকে সোহেল পালিয়েছে। বর্তমানে তার বাসাটি তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে তাকে গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুতই সোহেল গ্রেফতার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।’
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে জানাজা শেষে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়াইন গ্রামের নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে নিহত হোটেলকর্মী রিয়াদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রিয়াদের বড় ভাই রিপন জানিয়েছেন, ঘরোয়া হোটেলের মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেলের ছোট ভাই রাসেল তার মোবাইল ফোনে কল করে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। রাসেল বলেন, ‘ঢাকা আয়, দেখা কর।’
রিপন বলেন, ‘ভাইয়ের জানাজা শেষে মালিকের ভাই ফোন দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে রিপনের চাচা বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও তিনি জানান।