খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৫: ক্রিকেটে রানের যত রেকর্ড তার বেশির ভাগই শচীন টেন্ডুলকারের অধিকারে। সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বও একমাত্র তাঁরই অথচ কখনো ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পাননি টেন্ডুলকার। বড় ইনিংস খেলতে গিয়ে বরাবরই কেন যেন ব্যর্থ ছিলেন তিনি। আরেক ভারতীয় কিংবদন্তি কপিল দেব সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, খুনে মানসিকতার অভাবেই টেন্ডুলকার বড় ইনিংস গড়তে ব্যর্থ ছিলেন। এবং এতে প্রভাব রেখেছে তাঁর বেড়ে ওঠার স্থান—মুম্বাই! কপিলের এমন সরলীকরণে ক্রিকেটানুরাগীরা খেপেছেন, তবে সবচেয়ে সোচ্চার মুম্বাইয়ের সাবেক ক্রিকেটাররা।
টেন্ডুলকার তাঁর রানক্ষুধার কারণে পেয়েছিলেন ‘এ যুগের ব্র্যাডম্যান’ আখ্যা কিন্তু একটি বিষয়ে আসল ব্র্যাডম্যান থেকে যোজন-যোজন পিছিয়ে ছিলেন। ইনিংস বড় করার ক্ষেত্রে টেন্ডুলকার ব্যর্থ ছিলেন অনেকটাই। স্যার ডন টেস্টে মাত্র ৮০টি ইনিংস খেলেই ২টি ট্রিপল সেঞ্চুরি এবং ১০টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। অথচ ৩২৯ ইনিংসে ব্যাট করা টেন্ডুলকার ক্যারিয়ারে মাত্র ছয়টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন, এর কোনোটি আড়াই শোও ছুঁতে পারেনি। তাঁর ইনিংস বড় করার ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে কপিল বলেছিলেন, টেন্ডুলকাররা নাকি মুম্বাইয়ের স্কুল ক্রিকেটের মানসিকতা থেকেই বেরোতে পারেননি! মুম্বাইয়ের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সময় পার না করে ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে বেশি সময় কাটালেই নাকি খুনে মেজাজটা আসত টেন্ডুলকারের মাঝে। তাহলেই নাকি বীরেন্দর শেবাগের মতো টেন্ডুলকারও ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পেতেন। কপিলের এমন মন্তব্যে খেপে উঠেছেন মুম্বাইয়ের সাবেক ক্রিকেটাররা। তাঁরা কপিলের এই মন্তব্যকে দেখছেন মুম্বাইকরদের প্রতি অন্যদের ঈর্ষার প্রকাশ হিসেবে। ভারতের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক অজিত ওয়াদেকারের অন্তত এ রকমই ধারণা। ওয়াদেকার জানান, ‘আমি আমাদের প্রতি ঘৃণাটা টের পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ক্রিকেট খেলতাম, তখন থেকেই এটি দেখছি। উত্তরের অনেক ক্রিকেটারই আমাদের পছন্দ করে না। কিন্তু তাঁরা মুম্বাইয়ে ঠিকই থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু দিন শেষে দেখা যাচ্ছে, শচীনই সবচেয়ে রান করেছে। আর মুম্বাইয়ের ক্রিকেটের কথা বলতে গেলে আমরা—শচীন, সুনীল গাভাস্কারসহ সবাই দলের জন্য খেলেছি সব সময়, নিজেদের জন্য নয়। এ কারণেই আমরা রঞ্জি ট্রফি ৪০ বার জিতেছি। কীভাবে জিততে হয় এটি আমাদের জানা আছে।’
মুম্বাইয়ের আরেক সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার রাজু কুলকার্নি তো কপিলের দাবি উড়িয়েই দিয়েছেন, ‘কপিলের মন্তব্য আমার কাছে ফালতু মনে হয়েছে। এমন এক ক্রিকেটারের ব্যাপারে কথাটি বলা হচ্ছে যে কিনা ১০০টি সেঞ্চুরি করেছে। আমাদের (মুম্বাইয়ের) সিনিয়র ক্রিকেটাররা সব সময় এটাই বলত, যদি সেঞ্চুরি পাও তবে সেটিকে ডাবল কিংবা ট্রিপল সেঞ্চুরিতে রূপ দাও কিন্তু চেষ্টা করো আউট না হওয়ার।’
মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি দিলীপ ভেংসরকার এ ব্যাপারে অবশ্য কোনো মন্তব্যই করতে চাইলেন না। তাঁর ভাষায়, ‘এটি তার মত। এ ব্যাপারে অন্যদের কী বলার আছে?’
মুম্বাই ক্রিকেটের সঙ্গে কপিলের দ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন কিছু নয়। ভারতীয় দলে যখন খেলতেন তখন কপিল-সুনীল বিভক্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল পুরো ভারতীয় ক্রিকেটই। এবার টেন্ডুলকারকে নিয়ে বেমক্কা এক মন্তব্য করার পর আবারও ফুঁসলে উঠেছে মুম্বাই বনাম অন্য অঞ্চলগুলোর দ্বৈরথ। সূত্র: এনডিটিভি