Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

7খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২ নভেম্বর ২০১৫: ব্লগার-প্রকাশক হত্যার প্রেক্ষাপটে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে’ সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের শোকগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের রোববার সন্ধ্যায় সান্ত্বনা জানাতে গিয়ে এ আহ্বান জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “এ ধরনের একটি পরিস্থিতিকে সরকার, বিরোধী দল নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দল মিলে আমরা প্রতিরোধ করতে চাই। আমরা সবাই মিলে এই ঘটনার নিন্দা জানাতে চাই, এর প্রতিবিধান ঘটাতে চাই।”
“ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সরকারকে পরামর্শ দেব- তারা যেন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে এবং এসব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে ঘটনাকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। দোষীদের যেন শাস্তির বিধান করা হয়।”
সন্ধ্যায় ৬টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের বাসায় যান। এ সময় দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমানও ছিলেন।
ছেলের নিহত হওয়ার ঘটনায় শোকগ্রস্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বিএনপি নেতাকে বলেন, “এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। এজন্য সব দলই দায়ী। আমি বলেছি, আমি বিচার চাই না, শুভবুদ্ধির উদয় হউক। শুভবুদ্ধি বাদ দিয়ে বিচার দিয়ে কোনো ফল হয় না। জেল দিয়ে ফাঁসি দিয়ে কোনো প্রতিকার হবে না। দরকার শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়া।”
“আমি দেখছি, শুভ বুদ্ধির অভাব। এই ধারায় বিচারে কোনো সমাধান আসবে না। এটা রাগ ও ক্ষোভ থেকে বলছি না।”
এ সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাম্মেল হকও উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ফজলুল হক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুরোধে ছেলে হত্যার বিষয়টি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালযের কর্তৃপক্ষের কাছে একটি দরখাস্ত করবেন।
পরে সাংবাদিকদের কাছে হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির পক্ষ থেকে শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে এসেছি। তাদেরকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা আমার নেই। মৃত ব্যক্তির পিতা জনাব আবুল কাশেম দেশের একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ। তিনি ধীর স্থিরভাবে বিজ্ঞব্যক্তির মতো এ শোককে মোকাবেলা করছেন।”
“আমরা দীপন হত্যাকাণ্ডসহ সকল হত্যার নিন্দা জানাই। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এটাই আমরা কামনা করি।”
দীপন হত্যার দায় সরকার এড়াতে পারে না মন্তব্য করে সাবেক মন্ত্রী হাফিজ বলেন, “দেশে চলছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সরকারের পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের না খুঁজে গণতন্ত্রকামী লড়াকু মানুষদের খুঁজে বেড়ায় যারা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে।”
“মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা- এটা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে এই অপরাধীরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।”
দেশে গণতন্ত্র না থাকার কারণে ‘ধর্মান্ধ’ ব্যক্তিরা নানা ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ করে হাফিজ বলেন, “আজকে যদি একটি নির্বাচিত সরকার থাকত, দেশে গণতন্ত্র থাকত, মুক্তবুদ্ধির চর্চা থাকত, তাহলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অনেকাংশে কমে যেত।”
অবিলম্বে দীপন হত্যায় জড়িত প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান হাফিজউদ্দিন।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করব- এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে সরকার প্রশ্রয় দেবেন না। দেশের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেব। কোনো ধরনেরর তদন্ত শুরু করার আগে যেন কাউকে দোষী হিসেবে ঘোষণা না করেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা, তাদের কাছে অনুরোধ থাকল। তারা পুলিশ বাহিনী যাতে সকল প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন, সেই পরিবেশ যেন সৃষ্টি করেন।”
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে অভিজিতের বন্ধু ও তার বইয়ের প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এর ঘণ্টা আগে লালমাটিয়ায় ওই লেখকের বইয়ের আরেক প্রকাশক শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিন জনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
এবছর ২৬ ফেব্র“য়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি এলাকায় মুক্তমনা লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত ফয়সল আরেফিন দীপন বাংলার অধ্যাপক ও লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের একমাত্র ছেলে। তার মালিকানাধীন জাগৃতি প্রকাশনী অভিজিতের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামের জনপ্রিয় বইটি প্রকাশ করেছিল।