Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

32খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০১৫: আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে সরব হয়ে মুখর উঠেছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। সম্মেলনের মাত্র ১০দিন বাকি থাকলেও শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে, নাকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে প্রার্থী নির্বাচিত হবেন সে সম্পর্কে কেউ এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। আর সে কারণে দীর্ঘ এক যুগ পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সম্মেলনে সিনিয়র-জুনিয়র সকলেই সভাপতি ও মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আভাস দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন পদপ্রার্থীরা। তবে এবার প্রচারনার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা।এছাড়া কেউ কেউ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট ঘুরে ঘুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোন ও মোবাইলে যোগাযোগের পাশাপাশি তারবার্তা পাঠাচ্ছেন। নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে গুণগান গেয়ে ফেসুবুকে ষ্ট্যাটাস দিয়ে মাঠ গরম করছেন অনেকেই।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অনুসারি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের চিকিৎসকদের এই সংগঠনটির চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন আগামী ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকৃত সদস্যপদ নিয়ে দীর্ঘদিন নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্প্রতি স্বাচিপের সদস্যপদ চূড়ান্ত হয়েছে। প্রকৃত সদস্যপদ যাচাই বাছাইয়ের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠিত হয়। তাদের সুপারিশক্রমে স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ১৩ হাজার দুইশ ২৩ জনকে সদস্য হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
স্বাচিপের সংবিধান অনুসারে সম্মেলনের দিনই দ্বিতীয় পর্বে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কিংবা সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব ঘোষিত হতে পারে।
স্বাচিপের সভাপতি পদে সরাসরি মাঠে রয়েছেন বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। প্রচার প্রচারণায় তিনি অনেকটাই এগিয়ে আছেন। তার বিরোধীতাকারিরা স্বাচিপের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে, স্বাচিপের সুনাম ফিরিয়ে আনতে নতুন নেতৃত্বের কাণ্ডারি হিসেবে বিএমএর সাবেক নেতা ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে আনতে চাইছেন।
এছাড়াও সভাপতি পদপ্রত্যাশি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, হলিফ্যামিলি হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুর রউফ সর্দার, বিএসএমএমইউ সার্জারি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–যার নাম শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বিএসএমএমইউ সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের নাম বললেও তার পক্ষে প্রচার প্রচারণা নেই বললেই চলে।
সভাপতি পদে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। তিনি অনেক আগে থেকেই সভাপতি পদ প্রত্যাশী বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। তার অনুসারিদের দাবি স্বাস্থ্য সেক্টরে ডাক্তারদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব কাজ তিনি সততার সঙ্গে করে গেছেন। নির্বাচন হলে তার জয় সুনিশ্চিত বলেও দাবি তাদের। ইকবাল আর্সলান নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে ভীষণ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে ইকবালবিরোধী যারা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে স্বাচিপ সভাপতি হিসেবে দেখতে চান তারা বলেন, গত ১২ বছরে স্বাচিপের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। সারাদেশে স্বাচিপের নাম মাত্র কমিটি থাকলেও কার্যক্রম নেই। ইকবাল আর্সলানের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তিনি ডাক্তারদের মধ্যে গ্রুপিং করে জুনিয়র-সিনিয়রদের মধ্যে সম্প্রীতির সম্পর্ক নষ্টের রীতিচালু করেছেন। যা একটি পেশাজীবী সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অন্যান্য সভাপতি পদপ্রার্থীরা ও স্বাচিপের পরীক্ষীত নেতা। নেতাকর্মীদের মাঝে তাদের সবারই কমবেশি সুনাম রয়েছে।
এবার মহাসচিব হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল আজিজ, স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী, বিএমএর সিলেট জেলার সহ-সভাপতি ও বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) এহতেশামুল হক চৌধুরী, বিএমএর সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, বিএমএর কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, বিএমএর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. আবুল হাশেম খান, স্বাচিপের বিএসএমএমইউ’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া স্বপন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, কামরুল হাসান মিলন ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু। মহাসচিব হিসেবে সম্প্রতি ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চলছে অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাতের (প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়) পক্ষে। অন্যান্য মহাসচিবরা বলেন, দলের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
স্বাচিপের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তারা চাইছেন সিনিয়র নেতারা (বর্তমান স্বাচিপ সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোদাচ্ছের আলী, বিএমএর সাবেক মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বর্তমান মহাসচিব এম ইকবাল আর্সলান, আবদুর রউফ সর্দার, মনিরুজ্জামান ভূইঁয়া, বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলুসহ অন্যান্য) বসে আলাপ আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে সভাপতি মহাসচিব নির্ধারণ করে দিক। তা না হলে স্বাচিপ নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব জিইয়ে থাকবে।
নেতাকর্মীদের কেউ কেউ এবার নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে সভাপতি ও মহাসচিব নির্বাচিত হউক এমন প্রত্যাশা করছেন।
স্বাচিপ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার লেনিন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বহু ডাক্তার চাকরি করছেন। তাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা আদায়ে শীর্ষ দুটি পদের একটিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।