খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০১৫: প্রতি বছর দেশ থেক বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। মোট পাচার করা অর্থের ৬০ ভাগই আন্ডার ইনভয়েস বা পণ্যের দাম কম-বেশি দেখিয়ে আমদানি-রফতানির নামে পাচার হচ্ছে।
বড় বড় দুর্নীতির ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের কেউ না কেউ জড়িত থাকেন। সরকার আন্তরিক হলে পাচার করা অর্থ দেশে দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যার প্রমাণ সরকার ইতোমধ্যে দিয়েছে।
রাজধানীর ধানমণ্ডির টিআইবি কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স এ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) ও টিআইবির যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের ওপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এমন মন্তব্য করেন।
ড. জামান বলেন,‘বিশ্বব্যাপী নাগরিক সমাজের জন্য কাজের পরিবেশ ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইসিটি এ্যাক্ট, সব মিলিয় আমাদের দেশেও কাজের পরিধি সংকুচিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সংঘটিত বড় দুর্নীতিগুলোর সঙ্গে উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা নয়, এ সমস্যা উন্নত বিশ্বেরও। উন্নত দেশগুলোতে তাদের আইনও অর্থ পাচারে সহায়ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশী বিত্তশালীদের বিনিয়োগ বাড়ছে। এটা উদ্বেগের। এভাবে দেশে-বিদেশে অর্থপাচার, দেশের মধ্যে ছোট ও বড় ধরনের দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির ঘটনা প্রতিরোধ করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নেই।’
র্যাক সভাপতি মিজান মালিক বলেন, ‘২০০৭ সালে অরাজনৈতিক সরকার জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করলেও পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এর দায়িত্ব নেয় না। সরকারকে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে এবং তার পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (২ নভেম্বর) থেকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহের ষষ্ঠ সম্মেলন শুরু হয়েছে, যা ৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। দুর্নীতিবিরোধী ওই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার টিআইবি ও দুদকের মধ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আগামীতে টিআইবি র্যাকের সঙ্গে কিভাবে যৌথভাবে কাজ করবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়।
২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর দুর্নীতিবিরোধী সনদটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় এবং ওই একই বছরে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। সনদে একটি প্রস্তাবনা ও আটটি অধ্যায় রয়েছে। যেখানে অপরাধ নির্ধারণ, আইনের প্রয়োগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাসহ নানা বিষয় বর্ণিত রয়েছে। বাংলাদেশ ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে দুর্নীতিবিরোধী সনদে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এ বিষয়ে টিআইবি থেকে দাবি করা হয়, সনদ স্বাক্ষরের প্রথম দিকে সরকার সনদ বাস্তবায়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পববর্তী সময়ে এ বিষয়ে উদাসীনতা দেখায়। বিশেষ করে সনদের ১৩ ধারাটি (নাগারিক সমাজ দুর্নীতি বিষয়ক রাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে পারে) বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর ফলে নাগরিকদের জন্য কাজের পরিবেশ ক্রমাগত কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী ষষ্ঠ সম্মেলন চলমান থাকলেও বর্তমান সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেনি বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— র্যাকের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম সাগর, যুগ্ম সম্পাদক আদিত্য আরাফাত ও তাওহীদ সৌরভ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ ফয়েজ, অর্থ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক মো. হাসিব বিন শহিদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম এ রহমান মাসুম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক গোলাম সামদানী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রিশাদ হুদা। এ ছাড়া কাযনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে মোর্শেদ নোমান, সাঈদ আহমেদ, জেসমিন মলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।