Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

23খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫: ফেসবুক ব্যবহার করেন অথচ এই ছবি দেখেননি এমন ইউজার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ফেসবুকের ফটো কমেন্টে ছবিটি রস কৌতুকের খোরাক হয়ে আসছে কয়েক বছর ধরেই। সম্প্রতি এই ছবি নিয়ে আবারো তোলপাড় চলছে বিশ্বে। আফ্রিকার গরিব বা”চাটি পশ্চিমের মেয়েটির দিকে এমন রহস্যপূর্ণ চাহনির কী অর্থ? খোঁজার চেষ্টা করছেন স্যোশাল এক্টিভিস্টরা।
বিবিসি বেশ কয়েক দিন আগে ছবিটির অনুসন্ধান শুরু করে। কে তুলেছিল ছবিটি। ছবির বা”চা এবং মেয়েটিই বা কে? নাম পরিচয়হীন এমন ছবির বাস্তব সূত্র খুঁজে পাওয়া সমুদ্রে সুই খোঁজার মতোই। কিন্তু তাই বলে হাল ছাড়েননি। বা”চাটির খোঁজ না পেলেও শেষপর্যন্ত মেয়েটির খোঁজ পেয়েছে সংবাদ সংস্থাটি। তার সাক্ষাৎকার নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর নতুন করে তোলপাড় হচ্ছে বাংলাদেশেও ফেসবুকের জনপ্রিয় এই ‘ফটোকমেন্ট’ নিয়ে।
পশ্চিমা বিশ্ব ছবিটাকে নাম দিয়েছে ‘তৃতীয় বিশ্বের কৌতূহলি বা”চা’। ছবিটি দেখলেই বুঝা যায় বা”চার চাহনি কতটা বিদ্রুপাত্মক। যে তার সামনে বসা আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের এক নারীকে টিপ্পনি কাটছে।
বছর তিনেক আগে ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এক নাগরিক তার নিজস্ব ওয়েব সাইটে পোস্ট করেন। এখান থেকেই ভাইরাল হয়ে সারা দুনিয়া ছড়িয়ে যায়। ফেসবুকাররা ছবিটির ওপর নানারকম কমেন্ট জুড়ে দিয়ে পোস্ট করেন। এটা একদিকে যেমন হাসির খোরাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে আবার আফ্রিকার দরিদ্রপীড়িত মানুষের অবস্থা বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়েছে। ছবিটি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে আফ্রিকার দৈন্যদশা এবং পশ্চিমার বিলাসিতার চিত্র।
বিবিসি বলেছে, স্যোশাল মিডিয়ার কমেন্টের খোরাক ছবিটি কোন সময় ধারণ করা হয়েছিল। বা”চাটিই বা কী বলতে চেয়েছে মেয়েটির কাছে। এমন কৌতূহলেই আমরা অনুসন্ধানে নামি। অনেক চেষ্টার পর বা”চাটিকে খোঁজে না পেলেও মেয়েটিকে খুঁজে পেতে সমর্থ হই।
বর্তমানে ওই নারীর বয়স ২৮। নাম হিনা প্রানাভ। যিনি শিকাগো শহরের একজন ডাক্তার। ২০১২ সালে মেডিকেলের ছাত্রী ছিলেন। গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত দুর্গত নারীদের সেবা দিতে একটি প্রজেক্ট নিয়ে উত্তর উগান্ডায় যান। ‘প্রাজ ফর আফ্রিকা’ নামের প্রজেক্টের প্রধান ছিলেন ক্যাথলিক রোজমেরি নিরুম্বি।
প্রানাভ বলেন, এই বা”চা আমাদের প্রজেক্টের আওতায় ছিল না। তার সঙ্গে একটি বাজারে দেখা হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে তখন বা”চাটির বয়স ছিল দুই বা তিন বছর। তিনি বলেন, আমরা বাজারে আমাদের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছিলাম। হঠাৎ এই বা”চাটির দিকে নজর পড়ে। বা”চাটিকে আমার খুব ভালো লেগেছিল। বা”চাটির বাবা এই বাজারেই কাজ করত। আমি তার কাছে যাই এবং হাই বলি। সেও আমার ডাকে সাড়া দেয়।
বা”চাটি ইংরেজি বুঝত না। প্রানাভও ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানতেন না। কিন্তু প্রানাভের কথা বলার সময়ই প্রজেক্টের এক সদস্য ছবি ওঠায়। প্রানাভ বলেন, আমি কখনোই ধারণা করিনি এই ছবিটি এরকম ছড়িয়ে পড়বে সাড়া বিশ্বে। তিনি এটাও মনে করেন, এই ছবিটি দেখিয়ে দেশটি বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনেক অর্থ সহায়তাও পেয়েছে।
তবে প্রানাভ এই ছবিটি মজা বা ¯্রফে বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় আশ্চর্য হন। তিনি মনে করেন এটি দরিদ্রপীড়িত এলাকার শিকার হওয়া এক বা”চার ছবি। এই ছবি কিভাবে বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আফ্রিকা এই ছবিটি দেখিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে অভিযোগের কাতারেও দাঁড় করিয়েছে। কিছু মানুষ এই ছবিটি প্রকাশ করে মিডিয়ায় গরিব দেশের প্রতিচ্ছবি হিসেবে চিহ্নিত করে মজা নিয়েছে। ছবিটি দিয়ে খৃস্টান ধর্মাবলম্বী স্কলারদের কটূক্তিও করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্ব বিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ছাত্রদের আন্দোলনেও শো করা হয়েছে এই ছবিটি। আর বাংলাদেশের স্যোশাল এক্টিভিস্টরাও ছবিটি ব্যবহার করে টিটকারি টিপ্পনি কেটেছেন।
নরওয়ের ছাত্রদের জন্য কাজ করা একটি এনজিও’র সদস্য মার্টন জাহেরি বলেন, স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংস্থা অর্থ সংগ্রহে আফ্রিকার গরিব বা”চাদের ছবি প্রচার করে থাকে। এটা আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। আর ইন্টানেটে বহু সংখ্যক মানুষ ছবিটি ব্যবহার করছে কিন্তু বলার বিষয় হলো সবাই এটাকে বিনোদনের জন্য ব্যবহার করছে। কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না এই ছবির অর্থ কী। আফ্রিকার গরিব দেশগুলোর জন্য কিছু করার এবং ছবির বা”চাদের বোঝার আদৌ কোনো দায় আছে কিনা।
জাহেরি বলেন, এটি বেশ বিপজ্জনক যে আমরা আফ্রিকার এই ছবি সবখানে একইভাবে উপস্থাপন করছি। বাস্তবে এই চিত্রের উন্নতির বিষয়ে আমাদের কথা বলা দরকার। আফ্রিকাকে আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত গরিব রাষ্ট্র হিসেবে চিনি। এখানকার মানুষ ক্ষুধার্ত, অসুস্থ, এইচআইভি আক্রান্ত এবং এইডসের কবলে দুর্বল দেশ হিসেবে চিনে থাকি। কিন্তু এর থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের কী আদৌ কোনো দায় রয়েছে? অন্তত আক্ষেপটুকু তো তারা পেতে পারে। -বিবিসি উর্দু থেকে