খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫: জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা নিয়ে স্থপতি লুই আই কান যে মহাপরিকল্পনাটি করেছিলেন, তা আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
আগামী ৩ মাসের মধ্যে এই ‘মাস্টার প্ল্যান’ সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাই কোর্টের এক রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়।
এস্তোনিয়ায় জন্মগ্রহণকারী মার্কিন স্থপতি লুই কান ১৯৬২ সালে ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেক্স ও আশেপাশের এলাকা নিয়ে যে নকশা করেছিলেন, সেটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এই নকশা সরকারের হাতে না থাকায় সচিবালয় শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তরের একটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে ঝুলে গেছে ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজাজ্জামান।
আদেশের পর মুরাদ রেজা বলেন, “আদালত জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা নিয়ে লুই আই কানের মাস্টার প্ল্যানটি তিন মাসের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
সংসদ ভবন এলাকায় স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের আবাসিক ভবন নির্মাণের বৈধতা নিয়ে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ একটি রিট করে।
এতে দাবি করা হয়, মূল নকশা লঙ্ঘন করে জাতীয় সংসদ এলাকায় এসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ নির্মাণ কাজে স্থগিতাদেশ দেয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ আপিল আদালতে স্থগিত হয়।
এর আগে ২০০২ সালে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ২১ জুন হাই কোর্ট ওই ভবন নির্মাণ কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি নির্দেশনাসহ রায় দেয়।
রায়ে সংসদ ভবন এলাকা ‘ন্যাশনাল হেরিটেজ’ সাইট ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে গণ্য করার জন্য ইউনেস্কোর কাছে আবেদন করতেও বলা হয়।
হাই কোর্টের এই রায় স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করলে তা স্থগিত হয়ে যায়।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করে। একই বছরের ১০ নভেম্বর তা মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিম উল আলম বলেন, “হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ আপিল বিভাগে স্থগিত হয়ে গেলে ওই ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ হয়।”
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজাজ্জামান জানান, হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের স্থগিতাদেশ চলমান রয়েছে।
জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে গতবছর ওই নকশা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেজন্য স্থাপত্য অধিদপ্তর লুই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডমের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিল সরকার।
কিন্তু মূল নকশা আনতে কত টাকা লাগবে সেই হিসাব করতেই এক বছরের বেশি সময় পার করে দিয়েছে সংসদ সচিবালয় ও স্থাপত্য অধিদপ্তর।