খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামর্থ্যে ঘাটতির জন্য লেখক-ব্লগারদের খুনিদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফ।
খুনিদের গ্রেপ্তারে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই দাবি করে তিনি বলেছেন, “আপনাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমাদের হয়ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়ত তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণেই বা প্রযুক্তির স্বল্পতার কারণেই অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে বা খুব দ্রুত তদন্ত করে আসামিকে ধরা হয়ত সম্ভব হয়নি।”
গত শনিবার এক প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা এবং অন্যজনকে জখম করার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করতে না পারায় সরকারের সমালোচনার মধ্যে বুধবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন হানিফ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী দায়িত্বে থাকলেও বর্তমানে সরকারি কোনো পদে নেই।
গত ফেব্র“য়ারিতে টিএসসি এলাকায় লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার পর কয়েক মাসে তিনজন ব্লগারকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়। সর্বশেষ আক্রমণ হয় অভিজিতের বইয়ের দুই প্রকাশকের উপর। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদের দায়ী করা হলেও খুনি কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে হানিফ বলেন, “তার মানে এই নয় যে সরকার আন্তরিক নয়। সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক।”
২০০৪ সালে লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের উপর যেভাবে হামলা হয়েছিল, তার ১০ বছর পর গণজাগরণ আন্দোলনের সময় একইভাবে খুন করা হয় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে। হুমায়ুন আজাদ হত্যামামলাটির বিচার এখনও শেষ হয়নি। মঙ্গলবার শুনানির দিন থাকলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় তা হয়নি।
শুনানি পেছানো এবং মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় সরকারের সমালোচনার দিকটি এক সাংবাদিক তুলে ধরলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা হানিফ বলেন, “বিচারক যদি ছুটিতে থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের বলার কিছু নেই। কারণ দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন।
“আমরা নিজেরারও বারবারই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বারবার বলেছি, এই সমস্ত মামলা দ্রুত তদন্ত করে নিষ্পত্তি করার জন্য। আমরা চাপ দিয়েছি। আমরা এখনও বলছি, যত দ্রুত এগুলো আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা।”
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে ‘সংগঠন’ বা যে ‘বড় ভাই’ বা যে ‘শীর্ষ নেতারাই’ জড়িত থাকুক না কেন প্রত্যেকেকেই আইনের আওতায় আনা হবে এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
নিহত প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে নিয়ে মন্তব্য করে পরে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কিছু বলতে রাজি হননি হানিফ।
‘খালেদা প্রতিহিংসায় জর্জরিত’
যুদ্ধাপরাধবিরোধী লেখক এবং গণজাগরণের সমর্থকদের উপর হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপি থেকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে একাধিকবার জনতার মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হবে। তাদেরকে নাস্তিক হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছিল।
“আজকে সেই মুক্তচিন্তার লেখক-প্রকাশকদের উপর তারা সুযোগ পেলেই আক্রমণ চালাচ্ছে।”
বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সবই ‘জামায়াতের’ দাবি করে হানিফ বলেন, “বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই পার্থক্য নেই। উনি (খালেদা জিয়া) প্রকাশ্য জনসভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও তাদের মুক্তি দাবি করেছেন।”
সম্প্রতি লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগ নেতা।
“লন্ডনে বসে তিনি মিথ্যাচার ও অসত্য বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বিব্রত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।”
আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতি করছে-খালেদার এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপ শাসনামলে গ্রেনেড হামলা, শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন হানিফ।
“হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কাকে বলে, তা খালেদা জিয়ার শাসনামলে দেশের মানুষ দেখেছেন।”
সহিংস আন্দোলন ও নাশকতা চালিয়েও ক্ষমতায় যেতে না পেরে খালেদা জিয়া নিজে ‘প্রতিহিংসায় জর্জরিত’ বলে মন্তব্য করেন হানিফ।
“আমরা ভেবেছিলাম উনি হয়ত অতীত ভুল শুধরে আত্মশুদ্ধি ঘটাবেন। কিন্তু সে ইচ্ছা তার নেই।”
সম্প্রতি বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় ‘বিএনপিই বেনিফিশিয়ারি’ বলে মন্তব্য করেন হানিফ।
“যারা সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে পছন্দ করে না ব্যাহত, বাধাগ্রস্ত করতে চাই, যারা এই সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চাই, তারাই যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পেছনে মূল ভূমিকা রাখবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারাই বেনফিশিয়ারি।”
বিদেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তারদের জবানবন্দিতে বিএনপি নেতাদের নাম এসেছে বলেও জানান তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বিদেশে তৎপরতার বিষয়টি তুলে ধরে হানিফ বলেন, “জনগণের উপর আস্থা নেই বিধায় এখন বিদেশি প্রভুদের হাত ধরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার জন্যই বেগম খালেদা জিয়া আজকে তার এই লবিস্ট নিয়োগ করেছে।