Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

18খোলা বাজার২৪ ॥শুক্রবার, ৬ নভেম্বর ২০১৫: দারিদ্র্য মোকাবিলায় প্রথমবারের মতো জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএসএস) উদ্বোধন করা হয়েছে। এই কৌশল বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশের জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র’ নামক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। অতিথি ছিলেন ইউএনডিপির কান্ট্রি ম্যানেজার পলিন থেমেসিস ও ডিএফআইডি’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ সারাহ কুক।
কৌশলপত্রের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলতে খাদ্য ও দারিদ্র্য নির্মূলকে বোঝানো হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও শিশু পুষ্টিতে তেমন অগ্রগতি করা সম্ভব হয়নি। জীবনচক্রের ভিত্তিতে তৈরি করা নতুন জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্রটি উচ্চভিলাষী। এটি বাস্তবায়নে সঠিক রূপরেখা থাকতে হবে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়েক সেন বলেন, কৌশলপত্রটি ৮০ শতাংশ বাস্তবায়িত হলে কাক্সিক্ষত সফলতা পাওয়া যাবে। এটি বাস্তবায়নে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে। কারণ অনেক কৌশলপত্রই বাক্সে বন্দী হয়ে আছে, যা আলোর মুখ দেখেনি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা দেন। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, দারিদ্র্য, অসমতা দূর এবং মানব উন্নয়নে পরিকল্পনাটি হাতে নেয়া হয়েছে। এটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। জীবন চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্দিষ্ট প্রয়োজনভিত্তিতে কৌশলটি প্রণয়ন করা হয়েছে। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, শিশু (১ থেকে ৪ বছর), স্কুলগামী শিশু, কর্মক্ষম বয়স ও নারীদের (১৯ থেকে ৫৯ বছর) জীবনমান উন্নয়নে আলাদা আলাদা কর্মসূচি নেয়া হবে।
উপস্থাপনায় তিনি আরও বলেন, এই কৌশলের আলোকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জিডিপির ২ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জিডিপির ২ দশমিক ০৭ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জিডিপির ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের জিডিপির ১ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হবে।
প্রসঙ্গত, ভবিষ্যতের দিনগুলোতে দারিদ্র্য দূর করতে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের আগাম পরিকল্পনাই হচ্ছে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল। এতে কোনো অর্থবছরে কত টাকা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে ব্যয় করা হবে, কারা এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন- এসবের বিবরণ রয়েছে।
এবারের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে মানুষের জীবন চক্রের ভিত্তিতে। অর্থাৎ বয়সভিত্তিক মানুষের সেবার প্রয়োজনীতার ওপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরূপ স্কুলে যাবার বয়সে শিশুদের মধ্যে অনেকে শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। এদের জীবনমান উন্নয়ন পৃথক প্রোগ্রাম নেয়ার কথা বলা হয়েছে এনএসএসএসে। আবার যুবকদের জন্য অপর্যাপ্ত দক্ষতা ও বেকারত্ব দূর করতে পৃথক প্রোগ্রাম নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। এই দারিদ্র্য মোকাবিলায় বর্তমানে রাজস্ব বাজেটের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করা হচ্ছে। আগামীতে অতি দারিদ্র্য দূর করতে লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে পরিকণ্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জীবন চক্রের বিভিন্ন ঝুঁকি হিসাব করে সরকার জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ সালের আগেই দেশ থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করা যাবে।